ছবি : সংগৃহীত
‘বেসিক ব্যাংকে
যা হয়েছে তা পুকুর চুরি, যা নাকি ব্যাংকিংয়ের কোনো সংজ্ঞায় পড়ে না। … কিন্তু সরকার
কর্ণপাত করেনি, এখনও করছে না। এখন তো আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, সরকার ইচ্ছা করে ব্যাংকগুলো
নষ্ট করার জন্য সরকারের নিয়োজিত লোকদের দ্বারা এসব করাচ্ছে। এ কথাগুলো অত্যন্ত কঠোর
কিন্তু বাস্তব। এগুলো জনগণের টাকা, সরকারের টাকা কিন্তু বেসিক ব্যাংকে নেই। এই জনগণের
টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নেই।’ ক্যামেরার সামনে অকপটে এ কথাগুলো
বলছিলেন খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। আর আমি রীতিমতো বিস্মিত। কারণ খোন্দকার ইব্রাহীম
খালেদ আগাগোড়াই একজন আওয়ামী লীগ মতাদর্শের মানুষ ছিলেন। তখন আওয়ামীপন্থি অনেক বুদ্ধিজীবী
ও বিশ্লেষকের ইন্টারভিউ আমি করেছি। সবাই ‘কঠোর ও বাস্তব’ কথাগুলো বলতে দ্বিধান্বিত
ছিলেন। সত্যকে সত্য বলার বিশ্লেষকের অনেক অভাব। অধিকাংশই ভাবেন, সমালোচনা করলে সরকার
কী মনে করে! ইব্রাহীম খালেদ ছিলেন তাদের ব্যতিক্রম।
হয়তো গোপালগঞ্জের
মাটি-আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা এর একটি কারণ হতে পারে। হতে পারে শিশুকালে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য।
খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ গোপালগঞ্জে ১৯৪১ সালের ৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। গোপালগঞ্জে
স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুকে সবার ওপরে
রাখতেন। যখনই কোনো বড় রিপোর্ট পেতাম তখনই স্যারের কাছে ছুটে যেতাম। আমার জন্য তার দরজা
ছিল অবারিত। সাক্ষাৎকারের চেয়ে গল্পই হতো বেশি। শুনতাম স্যারের জীবনের কথা, একাল-সেকালের
তুলনা, কখনও বা রাজনীতির গভীর উপলব্ধি। মৃদুভাষী ছিলেন, কথা বলতেন গুছিয়ে। তার প্রতিটি
কথাই ছিল ভাবনাপ্রসূত। ফোন দিলে ধরেই বলতেন, ‘জি বলেন’। যদি বাসায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট
দিতেন, গেলে দেখা যেত পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের একটা হাফহাতা গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা অবস্থায়ই
দরজা খুলে দিতেন। কখনও কাজের লোককে চা-নাশতা নিয়ে আসতে দেখিনি। স্যার নিজ হাতেই নিয়ে
আসতেন। মিষ্টান্ন নিজ হাতেই পরিবেশন করতেন। যদি কচিকাঁচার মেলায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতেন
তাহলে গিয়ে দেখতাম, নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে একটি কাঠের চেয়ারে বসেই গল্প
করছেন। আজান হলেই সবাইকে বসিয়ে রেখে নামাজটা পড়ে নিতেন। এমন একজন সহজ ও সাবলীল মানুষকে
দেখে ভাবার উপায় নেই, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ও আইবিএ থেকে
এমবিএ ডিগ্রি অর্জনকারীদের একজন। তিনি ১৯৬৩ সাল থেকেই ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত ছিলেন।
দীর্ঘ এই ব্যাংকার জীবনে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৬ সালে
অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। ২০০০
থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। শুধু তাই নয়,
৯ ডিসেম্বর ২০২০ সাল থেকে আমৃত্যু পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র
পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই সেই মানুষ, যিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ইউসিবিএল
ব্যাংকে আখতারুজ্জামান বাবুর পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিলেন। তিনিই সেই মানুষ, যিনি পুঁজিবাজারে
ধসের প্রতিবেদনে নির্মোহ থেকে সব কেলেঙ্কারির হোতাদের নাম সুস্পষ্ট বলেছিলেন। এই সময়ে
এমন সাহসী ও নির্মোহ লোক পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
আমার দৃষ্টিতে ইব্রাহীম খালেদ ছিলেন একজন নির্মোহ মানুষ। সাধনা ছিল দেশের উন্নয়নের, দশের উন্নয়নের। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার প্রয়াণে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা আজও অপূরণীয়। পরপারে ভালো থাকুন স্যার। বিনম্র শ্রদ্ধা।
সাংবাদিক
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.