× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি চলতেই থাকবে

এ.এন. রাশেদা

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৫৩ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

২০২৩ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে যাবেÑ এ ধরনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন থেকেই। এর ভবিষ্যৎ যে ১৯৮৪-এর ‘এসো নিজে করি’, ১৯৯৪-৯৫-এর তথাকথিত ‘একমুখী শিক্ষা’ এবং ২০১০ সালের সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির মতো হবে নাÑ তার নিশ্চয়তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই ধারণা অমূলক হয়নি। ২০২৩ সালের শুরুতেই তার পরিণতি দেখা গেল। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে দুটি করে বই দেওয়া হয়েছে। তার একটির নাম ‘অনুসন্ধানী পাঠ’, অন্যটির নাম ‘অনুশীলন বই’। দুই শ্রেণিতেই ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ অর্থাৎ টেক্সটবুক পড়ানো নিষিদ্ধ হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ওই দুই শ্রেণির অর্থাৎ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ের ‘অনুশীলন বই’-এর কয়েকটি অধ্যায়েরও প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। আবার একই সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ্যবইয়েরও সংশোধন করা হবে ইত্যাদি।

বলা বাহুল্য, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিবর্তন সম্পর্কে অধ্যায় আছে। তাই তা বাদ দেওয়া বা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে কয়েকবার করে বলেছেন এবং এর বিষয়বস্তুও তুলে ধরেছেন। বলা হচ্ছে সংশোধন করা হবে। তবে তা কি বিজ্ঞান ধারায়, না ধর্মীয় ধারায় এ প্রশ্ন আসতেই পারে।

আর সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’- ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি যে পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হলো এ বিষয়ে কেউ কেউ নাকি বলেছেন, একটি সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বেশি বলা হয়েছে। এত অর্থ ব্যয়ে বই প্রকাশ করে তা তুলে না নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে অন্য সম্প্রদায়ের ওপর বেশি আলোচনা থাকতে পারত। বইটি শুরু হয়েছে ‘নগরসভ্যতার উত্থান-পতন : দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জীবন, অর্থনীতি ও পরিচয়ের রূপান্তর’ শিরোনাম দিয়ে। এখানে শুরু হয়েছে হরপ্পার সভ্যতা দিয়ে। তারপর মহেঞ্জোদারো ৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। তারপর সাম্রাজ্যের বিস্তার, নগররাষ্ট্র আর বৈচিত্র্য : পরিচয়, ভাষা, জীবনের অবিরাম বদল’ ৪০ পৃষ্ঠাব্যাপী বর্ণনা, রঙিন ছবি ও ম্যাপ দিয়ে সহজভাবে উপস্থাপন। তারপর শুরু হয়েছে ‘লৌহ যুগ, দ্বিতীয় নগরসভ্যতা আর পরিবেশ : সমাজবিজ্ঞান ও ভাঙনের বৈচিত্র্য’ শিরোনামে পাথরে খোদিত গৌতম বুদ্ধের ভাস্কর্যের ছবি, ৫টি মানচিত্র, সম্রাট অশোকের সময় স্থাপিত স্তম্ভ, ভারতের বৈশালীতে অবস্থিত বৌদ্ধস্তূপ, সম্রাট অশোকের টেরাকোটা, বিভিন্ন বৌদ্ধস্তূপ, বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য, মহাস্থানগরে প্রাপ্ত ছাপাঙ্কিত রুপা আর তামার মুদ্রাসহ বেশ কিছু। তারপর উয়ারী বটেশ্বরে খননে আবিষ্কৃত জলাধার, এভাবে গুপ্ত যুগ, অতীশ দীপঙ্কর, ইলোরা, নালান্দা, অজন্তার গুহাচিত্র, শালবন বিহার, বাগান, মিয়ানমার, জাভা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, তিব্বতের বৌদ্ধমন্দির, ভারত মহাসাগরের মানচিত্র ১০৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। এরপর ‘সম্পর্ক, মিশ্রণ ও নতুন ধারণা : সুলতানি আমল ও বাংলা’ শীর্ষক অধ্যায়। এ সম্পর্কিত সুলতানি স্থাপত্য, আছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ, দিল্লিতে অবস্থিত ফিরোজ শাহ কোটলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনার, তুঘলকের সমাধি, সুলতান ইলতুৎ মিসের সমাধি আরও কিছু ছবিসহ ১২৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।

সুলতানি আমলের বর্ণনা কম হওয়ার করণেই নাকি পাঠদান বন্ধ হলো। এত অর্থ ব্যয়ে প্রকাশিত বই নিষিদ্ধ না করে এক বা দুই ফর্মা সুলতানি আমল বা মুসলিম শাসকদের শাসনকালের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারত। অথবা অষ্টম শ্রেণিতে মুঘল আমল বা মুসলিম শাসনামল পাঠ্য করা যেতে পারত। অতীতেও আমরা দেখেছি, এক এক ক্লাসে এক এক সময়কালের ইতিহাস। এত অর্থ ব্যয়ে এবং বাধ্য হয়ে খারাপ কাগজে ছাপানো বই নিষিদ্ধ করা যৌক্তিক বলে বিবেচিত না হওয়াই উচিত। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার ভাববে।

এমন বই প্রত্যাহারের দাবি মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো কোনো শিক্ষক সংগঠন থেকেও উঠেছে বলে জানা গেছে। কারণ হিসেবে বোঝা যায়, তারা হয়তো এ ধরনের বিষয় কখনও পড়াননি বা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন। ট্রেনিং কোর্সে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাননি। সে কারণে আপত্তি আসা স্বাভাবিক। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার ৯ বছর পরও দেখা গিয়েছিল, লক্ষাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেলেও ৪৭ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। সেই কারণে কোচিং সেন্টারের আধিক্য দেখা দিয়েছিল। তবে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন ‘আমলা ও শিক্ষক কর্মকর্তারা’ এ বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অপচয়ের শেষ নেই। দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি উপকরণ দেওয়া হলেও তখন শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার কারণে সেসব অযত্ন আর অবহেলায় পড়েছিল। আবার যেকোনো সংস্কারের কাজ না করেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে টাকা তুলে নেওয়ার বহু খবর প্রকাশিত হয়। সরকার অনেক প্রতিষ্ঠানের ভবন বানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু শিক্ষাদানের জন্য কারিগর যে শিক্ষক এবং সেই শিক্ষকের সম্মানজনক, বেতন-স্কেল, বাসা ভাড়াসহ সব সুবিধা প্রদান যে রাষ্ট্রের কর্তব্য তা প্রদানে সরকার অসম্মত। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও কোনো সরকার সবার জন্য একই পদ্ধতির গণমুখী, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। পারেনি আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকলকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান করতে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

দেশে যেন সৎ ও বিবেকবান মানুষের অভাববোধ ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। চতুর্দিকে অন্যায়ের মাঝে সৎমানুষ তৈরিতে সমাজ, রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির নিরসন ঘটাতে হলে অযথা কোটি কোটি বই ফেলে দিলে হবে না। পরবর্তী বছরের সিলেবাসে কিছু সংযোজনের কথা ভাবা যেতে পারে। আরও জরুরি প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষকের উন্নয়ন। শুধু বছর বছর শিক্ষাক্রম এবং সিলেবাস বদলিয়ে লাভ হবে না। প্রশাসনের অসাধুদের অপকৌশলে সুফল হারিয়ে যাবে। শুধু ঋণ পাওয়ার জন্য কারিকুলাম বদলানোকে টার্গেট হিসেবে ধরা হয়। মাত্র কয়েক বছর আগের সৃজনশীল পদ্ধতিই এর প্রমাণ। শিক্ষা নিয়ে কি কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চলবে? 


  • শিক্ষাবিদ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা