৫ মার্চ ১৯৭১
০৫ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম
অলঙ্করন : প্রবা
পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পর সমগ্র পূর্ব
পাকিস্তানে আন্দোলন জোরদার হয়। অতঃপর পরবর্তী প্রত্যেকটি দিন ছিল অগ্নিঝরা। ২-৩ মার্চের
ঘটনাবলি প্রমাণ করেÑ ক্ষমতার দুর্গ নয়, জনগণই দেশের সত্যিকার শক্তির উৎস। এই দুর্জয় আন্দোলন দেখে পশ্চিমা শাসকরাও চিন্তিত। ৫ মার্চ দৈনিক
ইত্তেফাকের শিরোনামÑ ‘জয় বাংলার, জয়’। এদিনও ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল বাংলার মানুষের
গর্জনে উত্তাল। ঢাকায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে লাঠি মিছিল বের হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন
জেলায় মিছিলের আয়োজনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জনগণের গর্জনের তরঙ্গিত
হুমকি পশ্চিমা শাসকরা স্বস্তির সঙ্গে নেয়নি বলেই বিভিন্ন স্থানে সেনা মোতায়েন করা হয়।
মোতায়েন করা সেনাবাহিনী এক সময় মিছিলে
আক্রমণ করে। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল ঢাকার টঙ্গীতে। শ্রমিকদের মিছিল লক্ষ্য করে গুলি
ছোড়া হলে ২৫ জন আহত এবং নিহত হন ৪ জন। কিছুক্ষণ পর জানা গেল চট্টগ্রামেও মিছিলে গুলিবর্ষণ
হয়। নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮-এ পৌঁছে। এমনকি রাজশাহী-রংপুরে কারফিউ জারি করা হয়। আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ৫ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম,
রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে নিরস্ত্র জনতাকে যেভাবে
হত্যা করা হয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর এই নির্যাতনমূলক
কাজের নিন্দা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অথচ আমরা জানি বিদেশি হামলা থেকে দেশকে রক্ষার
জন্যই এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার কথা।’ পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান
জানিয়ে তাজউদ্দীন বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি বিভিন্ন
মহল থেকে উঠেছে। এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষেরও উচিত বাংলাদেশের নিরস্ত্র
সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা বন্ধের দাবি তোলা।
এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পশ্চিমা
শাসকরাও বিচলিত হয়ে পড়েন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা
ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর মধ্যকার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্বল্পকালীন
স্থগিত ঘোষণার জন্য পিপিপি অনুরোধ জানিয়েছিল এ কথা ঠিক। তবে ইচ্ছা ছিল এই সময়ের মধ্যে
ছয় দফা প্রশ্নে আলাপ-আলোচনা করে একটা সমঝোতায় পৌঁছা যাবে। তিনি আরও বলেন, অধিবেশন স্থগিত
ঘোষণার অর্থ অধিবেশন বাতিল বা অন্য কিছু নয়। এটা সামান্য সময়ের বিলম্ব মাত্র। কিন্তু
এর ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার কল্পনাও আমরা করিনি। আমরা এই পরিস্থিতির জন্য
দায়ী নই। আওয়ামী লীগ যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা ঠিক হয়নি। দেশের পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ
হয়, তবে যারা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাদের ওপরেই সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব পড়বে।
মুখে যত যাই বলুক, মার্চেই এক ভয়াল
পরিস্থিতির দিকেই যেন এগোচ্ছিল দেশ। কারণ ওইদিনই গোপনে ভুট্টোর সঙ্গে ইয়াহিয়া খান ৫
ঘণ্টা বৈঠক করেন। গভীর রাতে এক খবরে জানা গেল, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার
সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে পাঁচ ঘণ্টা ম্যারাথন বৈঠক করেছেন। এদিকে অবসরপ্রাপ্ত
এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকালে করাচি থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ধানমণ্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি বেতারে প্রচারিত
‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ-বাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে
‘কল্পনার ফানুস’ আখ্যায়িত করেন। এদিনই স্বাধীনতার সমস্ত প্রস্তুতি যেন সম্পন্ন হলো।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.