× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় ব্যাংক ধসের দ্বিতীয় নজির

ডেভিড জে লিঞ্চ

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৪:১৩ পিএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৪:২১ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

১০ মার্চ সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ৭ মার্চ ব্যাংকটির রিজার্ভে কোনো অর্থই ছিল না। জানা যায়, ব্যাংকটির রিজার্ভে ঋণাত্মক ব্যালেন্স ছিল, যার পরিমাণ ৯৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসভিবির আর্থিক বিপর্যয়ের খবর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়Ñ খবর পেয়ে এমন মন্তব্য অনেকেই করেছেন। তবে মনে রাখতে হবে, অন্য যেকোনো বড় ব্যাংকের সঙ্গে এসভিবির ফারাক আছে। ব্যাংকটির সিংহভাগ গ্রাহক কিংবা আমানতকারী ঝুঁকিপূর্ণ একটি খাতের সঙ্গে জড়িত। শুধু নির্দিষ্ট একটি খাতের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলে যারা উন্নত প্রযুক্তি খাতে উচ্চাভিলাষী কোনো প্রকল্প নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে, তাদের উদ্যোগ সফল হওয়ার পথ আপাতত বন্ধ। প্রযুক্তি সহায়ক এই ব্যাংকটির সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্তঃসম্পর্কের মধ্যে ঘাটতি থাকা বাদেও ব্যবসা প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতার কারণে সার্বিকভাবে প্রযুক্তি খাত এখন হুমকির মুখে। ২০২০ সালের পর অর্থাৎ মহামারির পর এই প্রথম কোনো বড় ব্যাংকের ধসের খবর পাওয়া গেল। অবশ্য গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা আগে থেকেই এসভিবির এই বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছিলেন।

এই বিপর্যয় কি মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর? এ বিষয়ে ফেডারেল ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিটিক্সের ম্যানেজিং পার্টনার ক্যারেন পেট্রো বলেন, ‘খবর শুনে মর্মাহত হয়েছি। তবে এর প্রভাব আরও খারাপ হতে পারত। ম্যাক্রো লেভেলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যেত। ভাগ্যিস তা হয়নি। এসভিবি পদ্ধতিগতভাবে কিছু ত্রুটির জন্য দায়ী অবশ্যই। তবে আমাদের অর্থনীতি খুব বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছেÑ এমনটি বলা যাবে না।’ ফেডারেল রিজার্ভের জন্য ব্যাংকটির ধসের খবর একই সঙ্গে ক্ষতিকর এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির তোড়জোড় বাড়ানোর সংকেত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি কয়েক বছর ধরেই সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। মূলত ঋণহার বাড়লে অর্থনীতির গতি কিছুটা হলেও শিথিল হবে এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও কমানো যাবেÑ এমনটি ভেবেই সুদহার বাড়ানো হয়। কিন্তু যেসব খাত দর-কষাকষির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সিদ্ধান্ত ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা প্রতিবাদ করেছিলেন।

২০০৮ সালের ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকের পর এসভিবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় ব্যাংকধসের নজির। শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতার সময়ে এসভিবির নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। অন্যান্য বড় ব্যাংকের জন্য এসভিবির ধস একটি পূর্বাভাস। তবে বড় ব্যাংকগুলো অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা পদ্ধতির অবলম্বন যেমনÑ বিভিন্ন বিশেষায়িত আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানকে সেবার অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। কিন্তু এসভিবি প্রথম থেকেই প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানের সেবা দিয়ে আসছে। বড় ব্যাংকগুলোর গ্রাহক বেশি থাকায় আমানত আসে অনেক, বিনিয়োগের বাজারে তাদের ভালো যোগাযোগ থাকে এবং অন্য ব্যাংকের সঙ্গেও নানা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালে ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকের ধসের পরপরই অর্থনীতি বিশ্লেষকরা ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকির বিষয়গুলো শনাক্ত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এমনকি ডড-ফ্র্যাংক আইন অনুসারে, ব্যাংকের রিজার্ভে অতিরিক্ত পুঁজি জমা রাখার নির্দেশনা রয়েছে, যাতে যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারে।

এসভিবি, সিলভারগেটের (সান ডিয়েগোভিত্তিক আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক) মতো ব্যাংকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে সেবা দিয়ে থাকে। এসব বিশেষায়িত ব্যাংকই এখন ঝুঁকির মুখে বেশি। ব্যাংক খাত সচরাচর যে ধরনের ব্যাবসায়িক মডেল অনুসরণ করে থাকে, এসব ব্যাংক সেসব মডেল অনুসরণ করে না। ঝুঁকির বিষয়টি অনুধাবন করে বিনিয়োগকারীরা এসব ব্যাংকে নিজের আমানত রাখতে দ্বিধায় ভুগছে। নিউইয়র্কভিত্তিক সিগন্যাচার ব্যাংকের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। সংকটকালে তারাও ৮ মার্চ পুঁজিবাজারে ২৩ শতাংশ শেয়ার হারিয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার বাড়ানোর প্রভাব যে কেমন নেতিবাচক হতে পারে, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ এসভিবি। অল্প সময়ে অর্থনীতির যে পালাবদল ঘটছে তা অস্বাভাবিক। জাতীয় জীবনেও তা ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বাড়ছে জাতীয় ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরেই রাষ্ট্রীয় ঋণ ২০২২ সালের তুলনায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। এসভিবির মতো বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো একদম প্রথম থেকেই এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতার মধ্যে যোগ দেয় এবং শেষ পর্যন্ত খাদেই পড়তে হলো। এক মৌসুমে জাতীয় অর্থনীতির যে পালাবদল ঘটেছে তা অভাবিত। কয়েক দিন আগেও যে খাতটিকে সম্ভাবনার শীর্ষস্থানে দেখা গেছে, সেই খাতটিই এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে।

২০২১ সালের পর থেকে এসভিবিতে আমানতকারীরা অর্থ জোগানের পর থেকেই তারা দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করেন। গত বছর মার্চে সুদহার বাড়ানোর পর নতুন বন্ডগুলোর নিরাপত্তা পুরোনো বন্ডগুলোকে ম্লান করে দেয়। ফলে এসভিবির মতো ব্যাংকের বিলিয়ন ডলার ক্ষতি গুনতে হয়। উচ্চ সুদহার টেক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রভাবিত করেছে। ব্যাংকটির ক্ষয়ক্ষতি দেখে টেক কোম্পানিগুলো আমানত উঠিয়ে নিতে শুরু করে। আর এই আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাংকটিকে সরকারি বন্ড বিক্রি করতে হয় লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করেই। যদিও নিজেদের ক্ষতি সামাল দেওয়ার নানা পরিকল্পনা তারা নিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় আর ঠেকাতে পারেনি। আপাতত ব্যাংকটি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং টেক কোম্পানিসংশ্লিষ্ট অনেকেই এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে। সুদহার বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলছেন এবং সংকট নিরসনে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি করছেন। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের উচ্চ সুদহারের নেতিবাচক প্রভাবে ভুগেছে এসভিবি। কিন্তু এই প্রভাব অতটাও বাজে নয় যে অন্যান্য অর্থনৈতিক খাত ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে। এর প্রভাবে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও বিশ্লেষকরা দেখতে পাচ্ছেন না। তবে এসভিবির ধস আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, মূল্যস্ফীতির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে জমে থাকা ঋণ খেলাপ ও ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে চলেছে। আর যখন কোথাও এই পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠবে, তখন পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকেই এগিয়ে যাবে।


  • বাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষক, ওয়াশিংটন পোস্ট


 

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা