× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্রীড়াঙ্গনে সমতার আলো ছড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

ইকরামউজ্জমান

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৫ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিল্প-সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ আরও অনেক কিছুর ধারক-বাহক- প্রতিপালক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কতটা ক্রীড়ানুরাগী কিংবা ক্রীড়াপিপাসু ছিলেন এর বিস্তর নজির রয়েছে। গণমানুষের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও সারা জীবন মনের মধ্যে ক্রীড়ামনস্কতা পোষণ করেছেন। ক্রীড়াঙ্গন আর ক্রীড়াচর্চা ছিল তাঁর কর্ম অধ্যায়ে যুক্ত। শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য সব সময় লড়েছেন। ১৯৪৭ সালের পর পূর্ববঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর উপলব্ধি, পর্যবেক্ষণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনকে শূন্য থেকে শুরু করার লক্ষ্যে উদ্যোগ, দূরদর্শিতা ও অবদান অসাধারণ। তিনি আগাম অনেক কিছু ভেবেছেন, বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উদ্যোগ নিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনকে ঘিরে তাঁর 'ভিশনের' কথা জানিয়েছেন, যা এখনকার বাস্তবতায় অবাক না হয়ে পারা যায় না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সময়ের চেয়ে অগ্রসর এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। ক্রীড়াঙ্গন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ছিল তাঁর অন্য এক ধরনের আবেগ ও ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই ক্রীড়া সংগঠকদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের সেবা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ক্রীড়াঙ্গনে সংগঠকদের সংস্কারমনস্ক হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাশক্তি ও দূরদর্শিতা ছিল অসাধারণ। তিনি এ ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ দিতে ভুল করেননি। তিনি ক্রীড়াঙ্গনকে দিশা দিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গন গঠনে প্রধান স্থপতি হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ন্যায়ভিত্তিক স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ন্যায়ভিত্তিক ক্রীড়াঙ্গনের কথা প্রথম থেকেই বলেছেন। বলেছেন বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক ক্রীড়াঙ্গনের কথা। গুরুত্ব দিয়েছেন তরুণদের, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে ধারণ করে এবং পরিবর্তনের খেলায় বিজয়ী হতে চায়। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিতে তরুণদের মেধা ও সম্ভাবনাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিয়েছেন। উপদেশ দিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনে অগ্রাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে।

সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বারবার বলেছেন, স্বাধীনতা বাঙালির অনাবিষ্কৃত শক্তিকে অবমুক্ত করে দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তি ও সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সম্মিলিত মানুষ ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে বাঙালির স্বপ্ন দেখার এখন আর কোনো ধরনের বাধা নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজেরাই ক্রীড়াঙ্গনের চালিকাশক্তি। বহু ত্যাগ আর মূল্যে প্রাপ্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আমরা অবশ্যই বিজয় দেখব। দেখব বাঙালির সন্তানদের বিজয়। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই চেয়েছেন ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত নিবেদিত ক্রীড়া সংগঠকদের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতদের মাধ্যমে। এই চত্বরে উড়ে এসে জুড়ে বসার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ নেই দলীয় রাজনীতির প্রভাব খাটানো। ক্রীড়াঙ্গনে সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চার কোনো বিকল্প নেই। যোগ্য নিবেদিত সংগঠকদের দ্বারা বিভিন্ন খেলা পরিচালিত হলেই ক্রীড়াঙ্গন ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে। পরিবর্তন আসবে। ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণ হলেন সংগঠকরা। তারা আন্তরিকতা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনা করবেন। বঙ্গবন্ধু কয়েকটি খেলার ফেডারেশনে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু করে দিয়ে গেছেন।

ক্রীড়াঙ্গন এখন আর শুধু নির্মল বিনোদন চত্বর নয়। এর গুরুত্ব ও মর্যাদা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষণীয় হচ্ছে। খেলার বিজয় আনন্দে মিশে থাকে জাতিগত আত্মমর্যাদাবোধ আর অহং জাতিসত্তার গৌরবানুভূতি। বঙ্গবন্ধু সব সময় মানুষকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সময়ের আগে এবং তিনি সময় পড়তে ভুল করেননি। অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহান তাঁর 'উতল রোমন্থন পূর্ণতার সেই বছরগুলো' এবং আত্মস্মৃতির দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তি আর জনমানুষের সম্পর্কে তাঁর ধারণার কোনো সমকক্ষ ছিল না। লাখ লাখ লোককে চালনা করেছেন যে মহান নেতা, তাঁর অনন্য যোগ্যতা ছিল যে তিনি মানুষকে বুঝতেন তাদের সঙ্গে জনতার মতো নয়, ব্যক্তির মতো আচরণ করতেন, আর তাদের সবলতা-দুর্বলতাকে মূল্যায়ন করতে পারতেন। একবার দেখা হলে তিনি আর তাকে ভুলতেন না। তেমন সাক্ষাতে মানুষটিকে তিনি স্বতন্ত্র মনোযোগ দিতেন, জীবনে তাদের অবস্থান যাই হোক এবং একজন মানুষ হিসেবে যুক্ত হতেন।' বঙ্গবন্ধু দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত 'নিখিল ভারত গ্রামীণ ক্রীড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন্নেসা হক বকুলের নেতৃত্বে একটি দল পাঠিয়েছিলেন। লংজাম্পে সুলতানা আহমদ (পরবর্তীকালে সুলতানা কামাল) রৌপ্য পদক এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টে শামীম আরা টলি ব্রোঞ্জপদক লাভ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের এটাই প্রথম সাফল্য বিদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা গঠন, মেয়েদের জন্য ক্রীড়া পরিকল্পনা, পৃথক ক্রীড়া চত্বর- এ সবকিছুই বঙ্গবন্ধুর অবদান। তাঁর স্বপ্ন ও বিশ্বাস ছিল ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরা তাদের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা তুলে ধরবে। এখন সেই স্বপ্ন পূরণের পথ ধরেই তো হাঁটা চলছে। ক্রিকেট চর্চা, ক্রিকেটার ও ক্রিকেট সংগঠকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন এ দেশে আগেও ক্রিকেট ছিল, ক্রিকেট থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ত্বরিত ব্যবস্থায় ক্রিকেটের আকাশ থেকে মেঘ কেটে যায়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেটে তরুণদের সম্ভাবনা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই ক্রিকেটের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, একসময় ক্রিকেট বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত করাবে। জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমান্তরালে। বিশ্বের খুব কম দেশ আছে যেখানে একজন মানুষ ও দেশকে একসঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রায় পাঁচ দশক আগে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে যে চিন্তা করেছিলেন, নির্দেশ-উপদেশ দিয়েছিলেন এবং উদ্যোগ নিয়েছিলেন- এগুলো নিয়ে যখন ভাবি, অবাক হই। তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের শেষ নেই। প্রথম থেকেই তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সব বিষয়ই বড় করে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবদান ক্রীড়াঙ্গনে ভোলার নয়। মৃত্যু তাঁকে থামাতে পারেনি। ইতিহাস তাঁকে বন্দি করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু আজ সশরীরে নেই সত্য, কিন্তু তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সব সময় আছেন আমাদের মধ্যে আদর্শ, নীতি দর্শন ও অনুপ্রেরক হিসেবে। দরকার আত্মসমালোচনা ও আত্মজিজ্ঞাসার। কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ? অনেক ক্ষেত্রে কি উলটোভাবে ক্রীড়াঙ্গন চলছে না? বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।


  • ক্রীড়া বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও এআইপিএস এশিয়া

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা