× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

আ.ক.ম মোজাম্মেল হক

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০২:৫১ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের ( সেই সময়ের জয়দেবপুর) বীর জনতা গর্জে উঠেছিল এবং সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল মনে পড়ে মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালি জাতির এক অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থানের কথা জয়দেবপুরে (বর্তমানে গাজীপুর ) আমার পরামর্শে মার্চ রাতে তৎকালীন থানা পশুপালন কর্মকর্তা আহম্মেদ ফজলুর রহমানের সরকারি বাসায় তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিব উল্লাহ এক সর্বদলীয় সভা আহ্বান করেন সভায় আমাকের আহ্বায়ক করে এবং মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খানকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার পূর্বেই আমরা কমিটি গঠন করেছিলাম স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছিলাম, সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ জয়দেপুরে (গাজীপুরে) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে মার্চ, ’৭১ গাজীপুর স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের বটতলায় এক সমাবেশ করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয় স্লোগান ওঠে ইয়াহিয়ার মুখে লাথি মার- বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর

আমরা মার্চ সোহরাওয়ার্দী (তৎকালীন রেসকোর্স) উদ্যানে তখন জয়দেবপুর (গাজীপুর) থেকে হাজার হাজার বীর জনতা ট্রেনে করে এবং শতাধিক ট্রাক বাসে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে জনসভায় যোগ দিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সম্ভবত ১১ মার্চ গাজীপুর সমরাস্ত্র কারখানা আক্রমণ করি গেটে বাধা দিলে আমি হাজার হাজার মানুষের সামনে টেবিলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছি মাইকে পাকিস্তানিদের বুঝতে পারার জন্য ইংরেজিতে বলেছি সব এই গর্জনে সত্যি কাজ হয়েছিল পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার বক্তৃতা চলাকালীনই পেছনের গেট দিয়ে সালনা হয়ে পালিয়ে ঢাকা চলে যান ১৫ এপ্রিলের পূর্বে তিনি আর গাজীপুরে ফিরেননি পাকিস্তান সমরাস্ত্র কারখানা ২৭ মার্চ পর্যন্ত আমাদের দখলেই ছিল সম্ভবত ১৩ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি সাহেবজাদা ইয়াকুব আলী জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করতে চেষ্টা করলে শত শত বীর জনতা হেলিকপ্টারের প্রতি ইটপাটকেল জুতা ছুড়তে শুরু করলে হেলিকপ্টার না নামতে পেরে ফেরত চলে যায়

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমরা কজন গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার সংবাদ দিতে সন্ধ্যায় আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পেয়ে কিছু বলতে চাই কিনা বঙ্গবন্ধু জানতে চান কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুদ কমে গেছে অজুহাতে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংবাদ জানাই এসময় বঙ্গবন্ধু একটু পায়চারী করে বললেনÑ ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেওয়া যাবে নারেজিস্ট এট দ্য কস্ট অব এনিথিং’, নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম ১৯ মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ (গাজীপুর) দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়

একজন জি.সি. (নায়েব সুবেদার) জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে ( জকি স্মৃতির প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চলে এসেছে খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের তখনকার আবস্থান মুসলিম হোস্টেলে ফিরে গিয়ে উপস্থিত হাবিবউল্লাহ শহীদুল্লাহ বাচ্চুকে সংবাদ জানাই ঘণ্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক-জনতা চারদিক থেকে লাঠিসোটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনলা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয় সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিল জয়দেবপুর রেলগেটে মালগাড়ির বগি, রেলের অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে যেভাবে পেরেছে তা দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয় জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও ৫টি ব্যারিকেড দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে রেলগেটের ব্যারিকেড সরানোর জন্য দ্তিীয় ইস্ট বেঙ্গলের রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেয় কৌশল হিসেবে বাঙালি সৈন্যদের সামনে দিয়ে পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্যদের অবস্থান নিয়ে মেজর শফিউল্লাহকে জনতার ওপর গুলিবর্ষণের আদেশ দেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আমাদের ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে সামনে আসতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করি

পা্কিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে শহীদ হন নেয়ামত মনু খলিফা, আহত হন চতরের সন্তোষ, ডা. ইউসুফসহ শত শত বীর জনতা পাকবাহিনী কার্ফু জারি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করলে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে আমরা পিছু হটলে দীর্ঘসময় চেষ্টা করে ব্যারিকেড পরিষ্কার করে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চান্দনা চৌরাস্তায় এসে আবার প্রবল বাধার সম্মুখীন হন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হুরমত এক পাঞ্জবি সেনাকে পেছন থেকে আক্রমণ করে আমরা সেনাদের রাইফেল কেড়ে নিই কিন্ত পেছনে আর এক পাঞ্জাবি সেনা হুরমতের মাথায় গুলি করলে হুরমত সেখানেই শাহাদাৎ বরণ করেন পরদিন বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলাকালে পাকবাহিনীর আক্রমণে ১৯ মার্চের নিহতের কথা উল্লেখ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করে, জয়দেবপুর জনতা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আধুনিক অস্ত্র চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আক্রমণে করেছে এবং এতে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সৈন্য আহত হয়েছে ১৯ মার্চের পর সারা বাংলাদেশে স্লোগান উঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধরÑ বাংলাদেশ স্বাধীন , ‘জয়দেবপুরের পথ ধরÑ সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু কর

১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাজীপুরবাসীর উদ্দেশ্যে এক পত্রে ১৯ মার্চের সশস্ত্র প্রতিরোধের সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জয়দেবপুরবাসীকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানান ১৯ মার্চের সশস্ত্র যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক মাইলফলক দিনটি সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে উদযাপন করার দাবিতে গাজীপুরের সর্বস্তরের জনতা আবেদন জানিয়ে আসছে উনিশে মার্চকে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে পালিত হলে, মুক্তিযুদ্ধের সূচনার ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে বলে মনে করি


  • বীর মুক্তিযোদ্ধা  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা