× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেন প্রশ্নবিদ্ধ

বদিউল আলম মজুমদার

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৫ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতির চিত্র সম্প্রতি উঠে এসেছে সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসির (ভি-ডেম) একটি প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচক নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম ডিফাইঅ্যান্স ইন দ্য ফেস অব অটোক্রাটাইজেশন শিরোনামে ভি-ডেমের এবারের প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায় গত মার্চ সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে সাত বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে (লিবারেল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম যেখানে আমাদের স্কোর শূন্য দশমিক ১১, তা এবার গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ০২ কমেছে এর মানে দেশে গণতন্ত্র অপস্রিয়মাণ আর সে জায়গায় ধীরে ধীরে স্থান হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতার

আন্তর্জাতিক সূচকে এই যে পিছিয়ে পড়াÑ এর পেছনে রয়েছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ঘাটতি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূর্বশর্ত মূলত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা চেয়েছিলাম একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সেই লক্ষ্যেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি দেখা দেয় স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা এসেছেন, তাদের প্রায় সবাই প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন করতে কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তবে ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা গেছে, যা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম অথচ পাকিস্তান আমলেও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা দেখেছি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম এবং শেষ সাধারণ নির্বাচন ওই নির্বাচনে কোনো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি ইয়াহিয়া খান সরকারের মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের অনুমতি ছিল না ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উপদেষ্টা মন্ত্রী জিডব্লিউ চৌধুরীর মতে, সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সত্যিকার অর্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরঅধীনে নির্বাচনের ফলে প্রতিফলিত হয়েছিল জনগণের সত্যিকারের চাওয়া ওই নির্বাচনী ফলই আমাদের স্বাধীনতার দাবিকে ত্বরান্বিত করে মনে রাখা প্রয়োজন, কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ব্যক্তি কোটারি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র পরিচালনা করা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাস্তবায়নের একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা

কথা আজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় দেশে এখন পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে এর মধ্যে চারটি হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বাকিগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচন ঘিরেই রয়েছে নানা প্রশ্ন প্রশ্ন আছে দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনই দেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে ওই চারটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরবিরুদ্ধে বিষ্দেঘার ছিল, কিন্তু নির্বাচন বিতর্কিত বা অগ্রহণযোগ্য ছিল না আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নানাবিধ ক্ষত এখনও দৃশ্যমান এর মধ্যে অন্যতম নির্বাচন প্রক্রিয়া কিংবা ব্যবস্থা রাজনৈতিক মতবিরোধকে কেন্দ্র করেই বর্তমান রাজনৈতিক সংকট আবার ঘনীভূত হচ্ছে এই বিতর্কের শুরু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে ১৯৯০- গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়নি কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী দলের অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্মত হয়নি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটল দলগুলোর দাবি উপেক্ষা করেই দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক সমালোচিত প্রশ্নবিদ্ধ ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি নির্বাচনের পরে ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে প্রবর্তন করা হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এটি ছিল মূলত রাজনৈতিক সমঝোতা

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়েই বিএনপি ওই সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানে নির্বাচনের ব্যাপারে অন্তর্ভুক্ত এই ব্যবস্থা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের পথই সুগম করেনি, বরং সব রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সমসুযোগও সৃষ্টি করে কিন্তু এই প্রক্রিয়া আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে বিএনপি সরকার কর্তৃক ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনার মাধ্যমে সচেতন মহলের অভিযোগ, ওই সংশোধনী অনুযায়ী বিএনপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয় এর পরের ধাক্কা আসে ২০১০ সালের ১০ মে দিন আপিল বিভাগের এক সংক্ষিপ্তআদেশে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রসপেকটিভলিবা ভবিষ্যতের জন্য ২০১৪ ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন যদিও এর আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সংবিধানসম্মত বলে রায় দিয়েছিলেন দেখা গেল নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পুরোপুরি ভেঙে যেতে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের নেতিবাচক ফল ২০১৪ ২০১৮ সালে দলীয় সরকারের অধীনে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন, যার মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে

অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ রাজনৈতিক সমঝোতা এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছুতে হবে অন্যথায় দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান মেলা কঠিন আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীনতার পর থেকে দলীয় সরকারের অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এবং এর কোনোটিই বৃহদার্থে গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই তো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে কেন নির্বাচন নিয়ে এত  নেতিবাচকতা? এর উত্তরেও বলতে হয়, অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তাদের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের কর্তৃত্ব ফলানোর সুযোগ নেই এবং তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্রিশালী স্বয়ংসম্পূর্ণ অন্যদিকে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতার সুযোগে দলীয়করণের যে অপছায়া জেঁকে বসে তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া তো বটেই, নির্বাচন কমিশনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে তাতে তৈরি হয় আস্থার সংকট আর এই সংকট কত বৈরী পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এর নজিরও আমাদের সামনে আছে

২০০৮ সালে জাতিকে দিনবদলেরস্বপ্ন দেখিয়ে, যে স্বপ্নের অংশ ছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে দলীয়করণের অবসান, বর্তমান মহাজোট সরকার প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা, সুশাসনের অভাব এবং অব্যবস্থার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই দিনবদলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হয় এবং গণতন্ত্র বনাম উন্নয়নেরস্লোগান ব্যবহার করে চড়া শর্তে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে চোখ ধাঁধানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল অনেক অবকাঠামো তৈরিতে সরকার মনোনিবেশ করে কর্তৃত্ববাদ’-এর তকমা ঘোচাতে এবং অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে প্রয়োজন ছিল সরকারের নমনীয়তা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পদক্ষেপ এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে

অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দরকার কার্যকর রাজনৈতিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হবে অবাধ, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা কারণ অতীতের মতো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা যদি না হয়, তাহলে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঙ্গের আঁচে সাধারণ মানুষকে আরও বিড়ম্বনা সইতে হবে এর আরও বহুমুখী বিরূপ ফল দৃশ্যমান হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না দেশের সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রের জন্য, স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য কম মূল্য দেয়নি রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া আগামী নির্বাচনও যে বিতর্কিত হবে না, এই নিশ্চয়তা তো কারও কাছেই নেই আর সেই অনিশ্চয়তাই আমাদেরকে ঠেলে দিতে পারে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যদি আগের মতো রাজনৈতিক সমঝোতা না হয়, তাহলে আমাদের পরবর্তী নির্বাচনও বিতর্কিত হতে বাধ্য এবং এমনটি অশুভর ইঙ্গিতই করছে

সংঘাত-সহিংসতার পথ কোনো রাষ্ট্রের জন্যই শুভ ফল বয়ে আনে না সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের প্রত্যাশায় শান্তি-সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বন্দোবস্তের জন্য সাধারণ মানুষেরও সজাগ হওয়ার সময় এসেছে প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে


  • সম্পাদকসুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক  বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা