× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নাদিয়াদের সুরক্ষাবলয় ঢেকে আছে নীরবতার ছায়ায়

রোকসানা সুলতানা

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ১৩:২১ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

নাদিয়ার ছোট্ট শরীরে ২৩টি আঘাতের চিহ্ন! ছোট্ট একটি শরীর। এই ছোট শরীরের এমন কোনো স্থান বাদ নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয় পুরো শরীর। কে আঘাত করল? কেন এত নির্মমতা। এই পরিণাম যে আঘাত করল, তার কি কিছু শাস্তি হবে? স্বভাবতই এই প্রশ্নগুলো আমাদের মনে আসবেÑ এ কথা সত্যি, কিন্তু আমরা যার যার অবস্থান থেকে কোনো কিছু করার জন্য কি এগিয়ে যাই?

১ মার্চ ২০২৩ তারিখ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নাদিয়ার ওপর নির্মমতার চিত্র। নাদিয়া নামটি মা-বাবার আদরের দেওয়া নাম। আদরের সেই রাজকন্যাটিকে জীবিকার তাগিদে মাত্র ১১ বছর বয়সে গৃহকর্মী হিসেবে তথাকথিত ভদ্রসমাজের কারও বাসায় কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল। না সেই মা-বাবার জানার কোনো দরকার নেই শিশুশ্রম হিসেবে ১৮ বছরের নিচে যেকোনো শিশুই কোথাও কাজের জন্য যাওয়ার বিধান নেই। কারণ অভাব এসব জানলেও তা মানতে দেয় না। আদরের বুকের রাজকন্যা বা রাজপুত্রকে এভাবেই আমাদের জিম্মায় দিতে যায়। আমরা কিন্তু জানি এটা যে অপরাধ। তার পরও আমরা শিশু গৃহকর্মী নিয়োগ দেই। অবুঝ মা-বাবাকে মিথ্যা কিছু আশ্বাস দিই, তার সন্তান ভালো থাকবে। নিজের সন্তারের মতো বাসায় থাকবে। তাকে পড়াশোনার সুবিধা দেওয়া হবে। সর্বশেষ যে অশ্বাসটি দেওয়া হয় তা হলো সময়মতো বিয়েও দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এসব মিথ্যাচার আমরা শিক্ষিত মানুষরা করি। নিম্ন আয়ের সেই অসহায় মানষরা কিন্তু মিথ্যা বলে কম। তারা আমাদের অনেকের মুখোশের নিচের হিংস্রতার বিষয়ে অজ্ঞ। অতীতের দিকে তাকালে বেশ কয়েকজন নামিদামি মানুষের নাম বলা যাবে, যারা গৃহকর্মীদের নির্যাতন করে রাস্তায় অমানবিকভাবে ফেলে গেছেন এবং মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। এখানেও আমাদের হিংস্রতার আরেক রূপ আছে। পরিবারে সঙ্গে টাকার বিনিময়ে আপসে আনা। জানি না এই জায়গায় মধ্যস্থতায় কারা আছেন। তবে এর মধ্যে যে কেউ কেউ থাকেন, যারা বিত্তহীন সন্তানের পিতা-মাতাকে অর্থের টোপে ফেলেন তা বলা যায়। অনেকটা টোপ ফেলে পুঁটিমাছ ধরার মতো।

এ বছর শুধু জানুয়ারি মাসেই তিনজন শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ৭ থেকে ১২-এর মধ্যে এবং একজনের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে (আইন ও সালিশ কেন্দ্র)। অসংখ্য শিশু ও নারী গৃহকর্মীর নির্যাতিত হওয়ার কথা লেখা যাবে। পাশাপাশি তাদের কেউই বিচার পায়নি, এ অভিযোগও তো আছে। সংবাদমাধ্যমে যেসব ঘটনা আমরা জানতে পারি, বাস্তবে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা আরও অনেক বেশি। গৃহকর্মীরা সামাজিক সুরক্ষা, যেমনÑ চাকরি থেকে বহিষ্কার-পরবর্তী সুবিধাদি, পেনশন, দুর্ঘটনাসম্পর্কিত সুবিধাদি, চিকিৎসা ভাতাÑ এসব কখনও পায় না। যা পায় তা হলো কথায় কথায় মারধর আর ভর্ৎসনা। এ ছাড়া যৌন হয়রানি, ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। তবে ঠিক কতজন গৃহকর্মী কাজ করতে এসে মালিকের নির্যাতনে প্রাণ হারাচ্ছে, এর সঠিক হিসাব নেই। এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে গৃহকর্মী নিহত হলে সেটা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয় বা অন্যভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলোআপ দেখি না। মরে যাওয়া অথবা আহত শিশু গৃহকর্মীর মামলার সর্বশেষ অবস্থা আমরা জানি না।

অধিকাংশ গৃহকর্মীই নারী ও শিশু। যারা ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তাদের বয়স ১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। আমরা অনেকেই এসব দেখেও যেন না দেখার ভান করছি। চোখ বন্ধ করে রাখলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের হার উদ্বেগজনক এবং গৃহকর্মী নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয় না বলেই মর্মন্তুদতার ছায়া সরছে না। এ ব্যাপারে আমাদের সংস্থার কাজের অংশ হিসেবেই আমরা আমাদের কর্ম এলাকায় শিশুশ্রমের বিষয়টি সম্পর্কে বলার চেষ্টা করি। শিশু আইন, শিশু শ্রম আইনÑ এ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের স্বল্প পরিসরে কাজের এলাকায় বাংলাদেশের সকল শিশু ও তাদের পিতা-মাতাকে সচেতন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এ বিষয়ে সরকারেরই এগিয়ে আসতে হবে। ১৪ বছরের আগে কোনো শিশু কাজ করতে পারবে নাÑ এটি সরকারি বিধান। গৃহকর্মী তো একেবারেই নয়। কারণ পথের শিশুর ওপর নির্যাতন হলে কিছু মানুষ এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু ঘরের ভেতরে কী হচ্ছে তা একমাত্র ঘরের লোক ছাড়া আর কেই জানে না। অনেকেই অভিযোগ করেন, গৃহকর্মীরা চুরি করে, বেয়াদবি করে, ঠিকমতো কাজ করতে চায় না। কাউকে পছন্দ না হলে তাকে বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু নিপীড়ন-নির্যাতন কেন? গৃহকর্মীদের নাম কোথাও রেজিস্ট্রেশন করা হয় না এবং গৃহশ্রমিক হিসেবে কোনো পরিচয়পত্র বা নিয়োগপত্র থাকে না বলে তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্যও পাওয়া যায় না। তারা সারা দিন কাজ করার পরও তাদের শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হয় না। এ কারণে তাদের বেতন ও অধিকার রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নাদিয়ার মতো শিশুর ওপর এ ধরনের অমানবিক আচরণের একটু সূক্ষ্ম পর্যালোচনায় আমার অভিমত হলো, যারা এ ধরনের অত্যাচার করছে, তারা আসলে অন্য কোথাও কিছু করতে না পেরে শিশুর ওপরে এ ধরনের অত্যাচার করে তাদের ব্যভিচারী আচরণগুলোর আশ মেটায়।

শিশুরা সব সময় বড়দের চেয়ে কম শক্তির অধিকারী। আমরা শিশুদের প্রতিবাদ করতে শিখাই না। আর যে শিশুটি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে, তাকে তো কথা বলার, প্রতিবাদ করার অধিকার বঞ্চিত করেই এ পেশায় নিয়োজিত করা হয়। নাদিয়ার মা-বাবার কাছে আমরা কী বলব? উত্তর নেই। কেন জানি মনে হয়, এই মর্মস্পর্শী ঘটনারও মধ্যস্থতায় ইতি হবে। আমরা নাদিয়াকে ভুলো যাব। আবার কোনো নাদিয়ার ঘটনা ঘটলে আমরা খবরের পাতায় চোখ বুলিয়ে আহা বলেই শেষ করব! না, এর অবসান হোক।


  • নির্বাহী পরিচালক, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা