× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সড়ক কি মৃত্যুর স্থায়ী বন্দোবস্ত

সম্পাদক

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৩ ১৩:০২ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

আমরা শোকাহত। স্তব্ধ। ক্ষুব্ধও। প্রশ্ন হচ্ছে, সড়ক কি মৃত্যুর স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে দাঁড়াল? এর উত্তর দেওয়ার দায় যাদের, তাদের নির্বিকারত্বও বিস্ময়কর। দেশের সড়কে করুণ ট্র্যাজেডি সৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিনিয়ত। এ ট্র্যাজেডির পরিসংখ্যান অনেক ভারী। জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত পরিবহন খাতের নজরদারিমূলক বেসরকারি সংস্থা যাত্রীকল্যাণ সমিতির বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় সড়ক-মহাসড়কে অরাজকতার খতিয়ান কত দীর্ঘ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ৬ হাজার ৭৪৯টি দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন ১২ হাজার ৩৫৬ জন। তাদের এ পরিসংখ্যান গত আট বছরের মধ্যে হতাহতের হার পর্যালোচনায় সর্বোচ্চ। করুণ পরিহাস হচ্ছে, সড়কে কাঠামোগত ত্রুটির কারণে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। ২০ মার্চ এক্সপ্রেসওয়েতে রক্তবন্যা’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে সড়ক নৈরাজ্যের যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, এর বিশ্লেষণ মানবিক বিচারে দুরূহ হলেও প্রশ্নের পাহাড় ক্রমেই উঁচু থেকে উঁচু হচ্ছে।

‘সত্যবাদীরা সুকর্মের পথ দেখায় আর সুকর্ম বেহেস্তের পথ দেখায়’ ইমাদ পরিবহনের ফিটনেসবিহীন বাসটির গায়ে যুক্ত অমিয়বাণী ছাপিয়ে চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে হতাহতের ঘটনার পেছনের কারণ উঠে এসেছে সেই পুরোনো বিষয়গুলোই। ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর রক্তে প্লাবিত হয় মুখ্যত চালকের উদাসীনতায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যে জানা যায়, ওই বাসটি চার বছর আগেও গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও কম ছিল না। ওই ঘটনার পর বাসটির চলাচলের অনুমতি স্থগিত করা হলেও ফিটনেস সনদ না নিয়ে কী করে এতদিন সেটি সড়কে চলাচল করছিল? এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এমন মর্মান্তিক ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর কয়েকটি প্রতিবেদনে ওই মর্মস্পর্শী ঘটনার শিকার স্বজনদের যে জিজ্ঞাসা-আর্তনাদ এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যে ব্যর্থতার চিত্র ফের উঠে এসেছে তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে কাতর না করে পারে না।

এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা ইতোমধ্যে প্রশ্ন রেখেছিÑ সড়ক-মহাসড়ক কি মৃত্যুফাঁদ হয়েই থাকবে? আমাদের স্মরণে আছে, রাজধানীর কুর্মিটোলায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় প্রাণ হারানোর পর দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি মিলেছিল, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে প্রাণরক্ষার দাবিতে রাস্তায় নামা আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে গেলেও সড়ক-মহাসড়কে রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই কিংবা একটি ভয়াবহতার রেশ কাটতে না কাটতেই এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে। আমাদের বোধগম্য নয়, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জরুরি অনুষঙ্গগুলো কী কারণে আজও অনিশ্চিত।

সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে, ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত ইমাদ পরিবহনের ওই বাসটির চালককে অবসন্নতা জেঁকে ধরেছিল। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, এর শেষ কোথায়? প্রশ্ন রাখতে চাই, চলাচলের অনুপযোগী যানবাহনের সংখ্যা কত? কোনো প্রশ্নের উত্তরই প্রীতিকর নয়। আমাদের এও স্মরণে আছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং অতিরিক্ত চাপ নিয়ে চালককে যাতে মানুষের জীবন হাতে নিয়ে গাড়ি চালাতে না হয়, সে রকম কিছু ব্যবস্থার কথা সরকারের তরফে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিস্ময় যুগপৎ দুঃখের ছায়া অনেক বিস্তৃত। সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য ভয়াবহ ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাধির কারণগুলো যেহেতু অচিহ্নিত নয় এবং এর উপশমে সরকার ও দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ রয়েছে, সেহেতু এর নিরাময়ের পথ এখনও কেন এত বিপৎসংকুল? আমরা স্পষ্টতই মনে করি, এসব ঘটনার দায় সরকার এড়াতে পারে না। সরকার যদি কঠোর ও নির্মোহ হয় এবং প্রতিটি দায়িত্বশীল মহলের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এমন বিভীষিকার মুখোমুখি হওয়ার পথ রুদ্ধ হতে বাধ্য। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে অনেক, সুপারিশের স্তূপ সামনে রয়েছে কিন্তু করণীয় প্রায় সবই যে রয়ে গেছে অবাস্তবায়িতÑ মাদারীপুরের মর্মন্তুদ ঘটনা এরও সাক্ষ্য দেয়। সরকার একশ্রেণির পরিবহন নেতা ও মালিকের কাছে দায়বদ্ধ এমন অভিযোগ নানা মহল থেকে ফিরে ফিরে ওঠে। সরকার সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে দায়বদ্ধ হোক এবং নির্মোহ অবস্থান নিয়ে প্রতিকারের মধ্য দিয়ে প্রতিবিধান নিশ্চিত করে প্রমাণ করুক সড়কে লাশের পর লাশ অমোচনীয় অভিশাপ হয়ে থাকতে পারে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা