সম্পাদকীয়
সম্পাদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৭ এএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৯ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
রোজায় দাম বাড়ে। এটিই চরম সত্য। শুধু নিত্যপণ্য নয়, অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়ে। রোজায় দাম বাড়ার প্রবণতা নিয়ে সমালোচনা আছে। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের নানা সংস্থার তরফে বাজার মনিটর করারও ব্যবস্থা রয়েছে। সমালোচনা ও মনিটরিংয়ের জেরে গত কয়েক বছর রোজায় না বাড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ছে রোজার আগেই। এবারও যথারীতি রোজার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে, দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব। বিশ্ববাজারেই পণ্যের দাম চড়া। কিন্তু সেই প্রভাবে আমাদের বাজারে এমন আকাল তৈরি হয়নি যে, এক রাতের ব্যবধানে এক হালি লেবুর দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়ে যাবে। রোজায় তরল দুধের চাহিদাও বাড়ে। তাই রোজার আগেই তরল দুধের দাম লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা। এ দুটি পণ্যের কোনোটিই আমদানিনির্ভর নয়। রোজায় লেবু, তরল দুধের চাহিদা বাড়লেও বাজারে এই পণ্যগুলোর সরবরাহে ঘাটতি রয়েছেÑ এমন তথ্য সংবাদমাধ্যমে নেই। তারপরও দাম বেড়েছে। আমাদের প্রশ্ন, রোজা এলেই কেন এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে? সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া কেন এত বছরেও গড়ে উঠল না? কেন প্রতিবার রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সোচ্চার হতে হবে? একটি সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থার দাবি তো দীর্ঘদিনের। এ তো জানা কথাই যে রোজায় কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে।
আশার কথা,
এবারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকার কথাই জানা যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে। ২১ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
রোজায় আমাদের ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় তিন লাখ টনের বিপরীতে মজুদ আছে তিন লাখ দুই হাজার ১৬৩ টন। আমদানির পাইপলাইনে আছে আরও দুই লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন। একই রকম ইতিবাচক তথ্য চিনির ক্ষেত্রেও। চাহিদার চেয়ে খেজুরের মজুদও বেশি। ছোলাও আমদানি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় প্রায় সব পণ্যের মজুদই বেশি রয়েছে। বাজারে ফলের আমদানিও যথেষ্ট। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অন্য
একটি প্রতিবেদনে খোদ আমদানিকারকরাই বলেছেন,
ফলের বাজারে এবার কোনো সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল আমদানি হয়েছে। সম্প্রতি এলসি
(ঋণপত্র)
খোলা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল তাও কেটে গেছে।’
এবার রোজায় দাম বাড়ানোর অপকৌশলের বিরুদ্ধেও সরকার শুরু থেকেই সতর্ক। এসব দেখে-শুনে
আমরাও আশাবাদী রোজায় পণ্যের সংকট তৈরি হবে না। বাজারে অসাধুদের কারসাজি না থাকলে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। বাজার স্বাভাবিক থাকবে। মানুষ স্বস্তিতে থাকবে। একটি জরিপ বলছে,
মহামারিতে গড় আয় কমেছে ২০ শতাংশ। ফলে বর্তমান দাম যদি স্থিতিশীলও থাকে,
তারপরও সাধারণ মানুষের চলা দায়। কারণ করোনা মহামারিতে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমেছে,
অনেকে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গত দুই বছরে আগের আয়ে অনেকে পৌঁছাতে পারলেও,
নতুন সংকট ইউক্রেন-রাশিয়া
যুদ্ধের প্রভাব দ্রব্যমূল্যের ওপর পড়ায় জীবনযাত্রার মান কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম হাতের মুঠোয় না থাকায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ। এ অবস্থায় রোজাকে সামনে রেখে দাম বাড়ানোর যেকোনো অপকৌশল মানুষকে আরেক দফা বিপাকে ফেলবে। আমাদের এ উদ্বেগের মধ্যে স্বস্তির খবর,
ট্রেডিং করপোরেশনের মাধ্যমে সরকার নায্যমূল্যে মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেবা কার্যক্রমও বাড়িয়েছে।
আমরা এ নিশ্চয়তাও চাই যে বাজারে আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের বিপুল ফারাক থাকবে না। রোজায় একটি স্বাভাবিক বাজার চাই আমরা। মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে কেউ অর্থের পাহাড় গড়ে তুলুক,
তা চাই না। সংকট না থাকলেও যারা পণ্যের দাম বাড়ানোর অপকৌশলের সঙ্গে যুক্ত,
তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগও দেখতে চাই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সঙ্গে
এক সাক্ষাৎকারে এবারের পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হবে না বলে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেছেন। সঙ্গে এও বলেছেন,
পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে,
কেউ অনিয়ম করলেই নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। সরকার রোজায় ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে চায়। আমরাও চাই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও সরকার সফল হোক। বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকুক। শুধু কথায় নয়,
আমরা সেটা কাজেই দেখতে চাই।