২২ মার্চ ১৯৭১
অলঙ্করন : প্রবা
পাকিস্তানিদের
ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উত্তাল বাংলা অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিনেও বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল- স্লোগান আর সমাবেশে রাজপথ ছেড়ে যায়নি। প্রেসিডেন্ট ভবনে ২২ মার্চ বেলা সাড়ে এগারোটায় এক বৈঠকে মিলিত হন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন,
‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার নির্ধারিত বৈঠক ছিল। সে অনুযায়ী আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে মি.
ভুট্টো উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রেসিডেন্টকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, ৪টি শর্ত পূরণ না হলে আমরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে পারি না।’
উপস্থিত সাংবাদিকের উদ্দেশে কথা বলার পরেই বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন নিজের বাসভবনে। সকাল থেকেই মিছিলের ঢল ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে। পরদিনের পত্রিকায় বলা হয়,
‘একদিনে এত মিছিল এর আগে কখনও ৩২ নম্বরে যায়নি।’ বাসভবনে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব।’
অন্যান্য দিনের মতো ২২ মার্চও বঙ্গবন্ধু বাসার ভেতর থেকে বারবার বেরিয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। এ রকম এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি জনতার উদ্দেশে আবারও বলেন, ‘২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব।’
এদিকে
প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বিক্ষুব্ধ জনতার ভুট্টোবিরোধী স্লোগানের মধ্যেই কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফেরেন ভুট্টো। দুপুরে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেন। সন্ধ্যায় ভুট্টোর নেতৃত্বে আবার প্রেসিডেন্ট ভবনে যান পিপলস পার্টির নেতারা। সেখানে আরেক দফা বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন,
‘বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগপ্রধান একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না।’
এ দিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চ আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণাসংবলিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। অধিবেশন পুনরায় কবে বসবে এ রকম কোনো দিন তারিখ উল্লেখ না করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন,
‘পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার ক্ষেত্র অধিকতর প্রসারিত করার সুবিধার্থে ২৫ মার্চে আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হলো।’ প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তে ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের তিনটি পার্লামেন্টারি গ্রুপের নেতা ওয়ালী খান,
দৌলতানা এবং মুফতি মাহমুদ চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে,
যেকোনো রকম জাতীয় ইস্যুতে আলোচনার এবং মীমাংসার সর্বাপেক্ষা উত্তম স্থান হচ্ছে জাতীয় পরিষদ।’