× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাওরে বাঁধ ভাঙার ভয়

মো. অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ০০:৫০ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

হাওরের খাদ্য উৎপাদকরাই সুরক্ষিত রাখেন দেশের খাদ্য কৃষি সচল রাখে দেশের অর্থনীতির চাকা তলার হাওর, শনির হাওর, ডিঙ্গাপোত হাওর, জালিয়ার হাওর, মহিষের হাওর, গুরমার হাওর, গণেশের হাওর, সুনুই হাওর, বাগরার হাওর, হাকালুকি হাওরসহ দেশের ৪২৩টি হাওরের কৃষকের মার্চ মাস এলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাওরের বাঁধের আশপাশে অবস্থান নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটান আগাম বন্যা,আকস্মিক বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, শিলাবৃষ্টি, কুয়াশা,বজ্রপাত, হট ইনজুরি, কোল্ড ইনজুরি, ধানে ছিটা, বীজ সমস্যা, কৃষি উপকরণের চড়া মূল্য, মানসম্মত বীজের অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ নানাবিধ কারণে হাওর এলাকার কৃষকরা প্রতিনিয়তই ক্ষতির সম্মুখীন হন এসব সমস্যা সীমাবদ্ধতাকে সঙ্গে নিয়েই কৃষকরা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন হাওর অঞ্চলে বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ধান দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় অবদান রেখে আসছে হাওর এলাকায় বোরো মৌসুমের ধানের ফলন বিপর্যয়ে শুধু কৃষকের ক্ষতিই হয় না, একই সঙ্গে তা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাওর এলাকার কৃষি, কৃষকের জীবন, তাদের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়গুলো আলোচনার পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় কী হতে পারে, সেই বিষয়গুলো ভাবা জরুরি     

দেশের মোট ভূখণ্ডের ভাগ হাওর হাওরের জমি মূলত এক ফসলি এবং শুধু বোরো মৌসুমে ধানের চাষ হয় আবার কিছু জমি রয়েছে, যেখানে বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি অল্প পরিমাণে চাষ হয় তবে মূল হাওরের জমি এক ফসলি বোরো ধান ঘরে তোলা নির্ভর করে মূলত প্রকৃতির ওপর যে বছর তেমন কোনো দুর্যোগ হয় না, সে বছর হাওরের কৃষকরা প্রচুর ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হন ২০১৭ সালের বোরো মৌসুমে ধান কাটার আগাম মুহূর্তে হঠাৎ আগাম বন্যা অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দুর্যোগের জন্য হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক ধান কাটতে পারেননি এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তবে ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তুলে কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হন

হাওরাঞ্চলের বিরাজমান জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে ধনী আধুনিক দেশের লাগামহীন ভোগ-বিলাসিতা এবং অন্যায় অনৈতিক বাণিজ্যের কারণেই হাওরসহ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ যদিও হাওর অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনও সেভাবে বিবেচনা করা হয়নি হাওর অঞ্চলের কৃষি প্রতিবেশ, মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এলাকা উপযোগী শস্য ফসল ফসলের জাতকে গুরুত্ব না দিয়ে রাসায়নিক তথা বাণিজ্যিক কৃষি প্রবর্তন করা হয়েছে কিন্তু মনে রাখা দরকারÑ হাওরবাসী কৃষি, মৎস্যসহ হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের ভেতর দিয়েই এককালে গড়ে তুলেছিলেন স্বনির্ভর হাওর জীবন হাওর জনপদের মানুষের সেই সার্বভৌমত্বের হাওর জীবন আজ নানাভাবে বিপন্নপ্রায় জলাভূমির অন্যায় ইজারা, ভূ-প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তন, করপোরেট কৃষির দ্রুত বিস্তার, উজানে বাঁধ কয়লা খনি প্রকল্প, লোভ লাভের বাণিজ্যিক আগ্রাসন, প্রতিবেশীয় নীতি সনদের লঙ্ঘন, হাওর প্রাণ, প্রকৃতি প্রতিবেশকে বিবেচনা না করে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, সব মিলিয়ে হাওড়ের সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হুমকিতে হাওরবাসী হাওরের জন্য এক সমন্বিত হাওর নীতিমালা পরিকল্পনার দাবিকে সামনে রেখে ২০১২ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয় তিন খণ্ডের হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা মনে রাখতে হবে, হাওরের উত্তর-পূর্ব হাইড্রোলজিক্যাল রিজিয়নের ভোগাই, সুমেশ্বরী, উমিয়াম, নয়াগাং (খাসিয়ামারা), জালুখালি (চলতি), নিতাই, চিতল, যাদুকাটা-রক্তি, সুরমা, কুশিয়ারা, ধলা, সারী-গোয়াইন, পিয়াইন, সোনাই-বরদল, মনু, ধলাই, জুড়ী, লংলা, খোয়াই, সুতাং, সোনাই, কোরাঙ্গী ভারতীয় এলাকা থেকে উৎপন্ন এই ২২টি নদী সীমান্তবর্তী পাহাড় থেকে নেমে আসা নানা পাহাড়ি ছড়ার জলধারাই হাওর জলাভূমির জলের মূল উৎস এককালে পাহাড়ি এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি নেমে হাওর এলাকায় বর্ষায় ঋতুভিত্তিক যে বন্যার সৃষ্টি হতো, সেই বন্যার সঙ্গে মানুষের এক ধরনের অভিজ্ঞতার সম্পর্ক বিরাজমান ছিল কিন্তু বর্তমানে মেঘালয় পাহাড়ে বৃষ্টির জলকে ধারণ করার মতো প্রাকৃতিক বনভূমির আচ্ছাদন নেই এবং তা ছাড়া হাওরে বাঁধ তৈরিতে দুর্নীতির একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে

হাওরের কৃষিসহ সামগ্রিক উন্নয়নে হাওরে বসবাসকারী জনোগোষ্ঠীর জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সম্পদ বিবেচনা করে তাদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ বাস্তবায়ন করতে হবে হাওরের কৃষিজমির শ্রেণি বিভাগ করে একক ফসলনির্ভরতা কমিয়ে স্বল্পমেয়াদি রবিশস্য চাষে প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে কৃষককে সম্পৃক্ত করে প্রায়োগিক গবেষণা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে হাওরাঞ্চলের প্রতিটি ইউনিয়নে উৎপাদিত শস্য ফসল সংরক্ষণ ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে শস্যগুদাম বা সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে হাওর প্রতিবেশ উপযোগী ফসলের বীজ উৎপাদন সংরক্ষণে কৃষকদের উৎসাহ প্রদানের পাশপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে হাওরের অবকাঠামো উন্নয়নের সময় জলনির্ভর নিজস্ব যোগাযোগব্যবস্থা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে হাওর এলাকার কৃষকদের জন্য সহজশর্তে ঋণসহ শস্যবীমা চালু করতে হবে হাওরের ফসল ঘরে তোলার জন্য হাওরের সঙ্গে গ্রামের সংযোগ রাস্তাগুলোকে কংক্রিট দিয়ে ডুবো রাস্তা তৈরি করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি গ্রামের দুই বাড়ির দুই পাশে হিজল-করচের সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা যাতে এলাকার পরিবেশ উন্নয়নসহ আফল থেকে ঘরবাড়ি রক্ষা হয় ভূমিক্ষয় হ্রাস পায়

এক সময় ঠিকাদারের মাধ্যমে হাওরে বাঁধ মেরামত করা হতো কিন্তু ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসলহানির পর পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে পরে ঠিকাদারি বাতিল করে পিআইসি ব্যবস্থা চালু করা হয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পিআইসি কমিটি গঠন করে পাউবো এই ফসলরক্ষা বাঁধগুলো মেরামত করা হয় প্রতিবছর এভাবে বাঁধ না করে স্থায়ীভাবে বাঁধ করা হলে কৃষকের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হবে না কৃষকের ফসলরক্ষার বাঁধ স্থায়ী করে তৈরি করার উদ্যোগ নিতে হবে মনে রাখতে হবে, হাওর দেশের খাদ্যনিরাপত্তা, মিঠা পানির মাছ, যোগাযোগ পর্যটন ব্যবস্থা সব মিলে আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় উৎস


  • পরিবেশকর্মী  আঞ্চলিক সমন্বয়কারীবারসিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা