মো. আবু তাহের
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৬ পিএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৭ পিএম
মো. আবু তাহের।
প্রবা : জাহাজ ভাঙা শিল্পের এখন কী অবস্থা?
মো. আবু তাহের : ১৯৮২ সাল থেকে আমি জাহাজ ভাঙা শিল্পে জড়িত। এখন আমাদের ইয়ার্ড ও ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক নিয়োজিত আছে অন্তত এক হাজার। কিন্তু কারখানা চালাতে পারছি না। সপ্তাহে তিন দিন চালালে বাকি দিনগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে এমন সংকটময় সময় আর পার করিনি। ডলার সংকটের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে পারছি না। কাঁচামাল সংকটের কারণে ইস্পাত কারখানা চালু রাখতে পারছি না। অথচ শ্রমিকের বেতনসহ যাবতীয় ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ইয়ার্ড ব্যবসায়ীরা চরম দুরবস্থায় আছেন।
প্রবা : কেন দুরবস্থায় আছেন?
মো. আবু তাহের : আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম, দেশে ডলার সংকট। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫২০ ডলারে এলসি খোলার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের ধরন, মান ও প্রকার ভেদে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম প্রতি টন পড়ছে গড়ে ৫৮০ ডলারের মতো। তাহলে এলসি খুলব কীভাবে? জাহাজই যদি আনতে না পারি, তাহলে ব্যবসা চলবে কীভাবে?
প্রবা : এলসি সমস্যার বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছে?
মো. আবু তাহের : আমাদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও নির্দেশনা দেয়নি। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দাম সঠিক মনে করছে, প্রকৃতপক্ষে প্রদর্শিত সেই দামে সমস্যা আছে। এখন দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্প টিকবে কি না সেই শঙ্কায় আছি। ভারত তুলনামূলক ছোট জাহাজ বেশি ভাঙে। বাংলাদেশে ৫০ হাজার টনের জাহাজও ভাঙা হয়। তুলনামূলক বড় জাহাজ ভাঙার কারণে বিশ্বে জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশ এক নম্বরে। এখন সেই অবস্থান হারিয়ে ফেলছে। এমনকি ভবিষ্যৎও অন্ধকার দেখছি।
প্রবা : বঙ্গোপসাগরে বালুর স্তর জমছে। আপনারা ড্রেজিংয়ের দাবি তুলেছেন। কত দূর এগিয়েছে ড্রেজিং প্রকল্প?
মো. আবু তাহের : আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ড্রেজিংয়ের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এখনও প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেনি। জাহাজ যদি ডুবোচরে আটকে যায়, তাহলেই সর্বনাশ। পুঁজি সব জলে যাবে। এভাবে টিকে থাকা মুশকিল। ইয়ার্ড মালিকরা তো সরকারকে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব দিচ্ছেন। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের এখনই ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। না হলে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব খাতটি বিলুপ্ত হবে। লাখো শ্রমিক বেকার হবেন। উদ্যোক্তারা ফতুর হবেন।
প্রবা : ইয়ার্ড ব্যবসায়ীদের অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন- আগামী দুই দশকের মধ্যে ইয়ার্ড ব্যবসা ভারতে চলে যাবে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
মো. আবু তাহের : এখনই চরম দুরবস্থায় আছেন শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ীরা। ইয়ার্ডে জাহাজ তো এমনি এমনি আসবে না। বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান জরুরি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে ভারতসহ অন্য দেশে জাহাজ ভাঙা শিল্প স্থানান্তর হতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজ বিক্রেতা কিংবা ক্রেতা কেউই বসে থাকবে না। বাংলাদেশ স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনতে না পারলে অন্য দেশ সুযোগ নেবে- এটাই তো স্বাভাবিক।
প্রবা : হংকং কনভেনশন অনুযায়ী ইয়ার্ডগুলোকে গ্রিন ইয়ার্ডে পরিণত করার কথা। আপনারা তো গ্রিন ইয়ার্ড করেননি।
মো. আবু তাহের : হংকং কনভেনশন অনুযায়ী সব ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ড করতে হবে। এতে সুবিধা হলো- তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে স্ক্র্যাপ জাহাজ কেনার সুযোগ পাওয়া যাবে। আবার পরিবেশ উন্নত হওয়ায় মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষই বাড়তি সুবিধা পাবে। পরিবেশগত সুবিধাও বাড়বে। ইতোমধ্যে তিনটি ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ড করা হয়েছে। আরও আটটি ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের কার্যক্রম চলছে। আশা করি, শিগগির সবই গ্রিন ইয়ার্ডে পরিণত হবে।
প্রবা : আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. আবু তাহের : প্রতিদিনের বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ।