× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পের দুর্দিন ঘোচান

সম্পাদক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম

জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পের দুর্দিন ঘোচান

শিল্প-কারখানার সমৃদ্ধি অর্থনীতির শক্তি। বিগত প্রায় চার দশকে নতুন কিছু শিল্পের সম্ভাবনা জাতীয় অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর বার্তা বয়ে এনেছে। এর মধ্যে অন্যতম জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্প। জাহাজ ভাঙা শিল্প অর্থনীতিতে শক্তি জোগাচ্ছে। দেশের ইস্পাত শিল্প বড় হচ্ছে এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প বিশ্ববাজারও সৃষ্টি করেছে। এই বার্তাগুলো সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা দূর অতীতের নয়। কিন্তু ২২ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর বিশেষ আয়োজনে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এই দুটি শিল্প ঘিরে যে চিত্র উঠে এসেছে তা দুর্ভাবনার বিষয়। প্রতিদিনের বাংলাদশ-এর বিশেষ আয়োজনে জানা গেছে, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ধস নামার পাশাপাশি ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হওয়ার পথে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট এবং সাগরে চর জাগাকে এই শিল্পগুলোতে মন্দা দেখা দেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিকট অতীতে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি দেশেই ইস্পাতের চাহিদা বেড়েছে। তারা উচ্চ মূল্যে ইস্পাত কিনছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইস্পাত শিল্পে। ডলার জটিলতায় স্ক্র্যাপ আমদানি সংকটে পড়ায় পুরো ইস্পাত শিল্পে নতুন করে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং বিশ্ববাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।

জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পে অক্সিজেন অপরিহার্য। চাহিদার প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা পনেরটি অক্সিজেন কারখানার মধ্যে সাতটি বন্ধ হয়ে গেছে জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পে বিদ্যমান সংকটের কারণে। আমরা দেখছি, জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের কপালে দুর্ভাবনার ভাঁজ পড়েছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর বিশেষ আয়োজনে এও উঠে এসেছে, এই দুই শিল্প ঘিরে সংকটের কারণ অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ের পাশাপাশি বাড়তি অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি। জাহাজ ভাঙা শিল্প দেশের অন্য কয়েকটি শিল্পের কাঁচামালের জোগান দেয়। আমরা জানি, বিশেষ করে বড় ও ছোট জলযান নির্মাণ শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম উৎস জাহাজ ভাঙা শিল্প। ঝুঁকি এবং পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও জাহাজ ভাঙা শিল্প বিকশিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ এই শিল্পে কর্মসংস্থানের পরিসর বৃদ্ধি। দু বছর আগেও জাহাজ ভাঙার পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। এই তথ্য উঠে এসেছিল বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে। সম্ভাবনাময় এই দুটি শিল্পে দুর্দিনের ছায়া ক্রমেই কেন বিস্তৃত হচ্ছে, এই কারণগুলো অচিহ্নিত নয়। আমরা মনে করি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পরিবেশ সুরক্ষার মতো জরুরি বিষয়গুলো নিশ্চিত করে পরিকল্পিত উপায়ে এই দুটি শিল্পের বিকাশের পথ যাতে রুদ্ধ না হয় সেদিকে সরকারের নজর বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি শিল্পই সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজ ভাঙা শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অন্যতম কারণ, জাহাজের সব উপকরণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে বড় বড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদনের শিল্প। এক সময় আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর মধ্যেই এই শিল্প সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পের প্রভাব সুস্পষ্ট।

এমন প্রেক্ষাপটে এই দুটি শিল্পেরই বিকাশের সম্ভাবনা আমাদের এখানে তুলনামূলকভাবে বেশি। দেশের স্থানীয় রড ও ইস্পাতের বাজার সম্পূর্ণভাবে এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। মূলত চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করেই এই শিল্প আবর্তিত হলেও এর আরও কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করে শিল্পের বিকাশে মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিলে সার্বিক প্রেক্ষাপটে তা আমাদের জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে। এই শিল্প দুটিকে পরিবেশসম্মতভাবে লাভজনক করার উপায় খুঁজতে হবে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনেই। জাহাজ ভাঙা শিল্পে বাংলাদেশ টানা পাঁচবার প্রথম হয়েছে। এটি এই শিল্পের সম্ভাবনাকেই সামনে নিয়ে আসে। পরিবেশদূষণ ও শ্রমিকের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে এর নিরসন যূথবদ্ধ প্রচেষ্টায় দুরূহ নয় বলেই আমরা মনে করি। উদ্যোক্তা বাঁচলে শিল্প বাঁচবে। আর শিল্প বাঁচলে কর্মসংস্থানের পরিসর আরও বাড়বে এবং একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতির জোগানদার হিসেবে শিল্পগুলো নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি। যে সমস্যা সংকটে এই দুটি শিল্প নিপতিত, তা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ উদ্যোক্তাদেরও কর্মপরিকল্পনা আধুনিক করার বিকল্প নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা