× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষায় থাকতে হবে অবিচল

ড. মোহীত উল আলম

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৪:০৮ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

মহান স্বাধীনতা দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবারের স্বাধীনতা দিবস আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ থেকে ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ সময়ের ব্যবধান ৫২ বছর এই ৫২ বছরে আমাদের অর্জন কম নয় আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির সড়ক যেমন অনেক চওড়া হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান ভিন্ন মাত্রায় এখন নির্ণীত কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্রে অর্জন-অনার্জন দুই- আছে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক রেসকোর্সের ময়দানে মার্চ তাঁর কালজয়ী ভাষণে যে সুনির্দিষ্ট প্রত্যয়গুলো ঘোষণা করেছিলেন, সেসবই তাঁর দূরদৃষ্টির প্রতিফলন দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতা-উত্তর স্বল্প সময়ে জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন তা অক্ষত নেই রাজনৈতিক হীনস্বার্থবাদীদের কারণে ওই সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলোয় আঘাত লাগে সময়ের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হলেও সংবিধানের সেই আদিরূপ জনদাবি সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় আমরা ফিরে পাইনি

একসময় যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িবলে কিসিঞ্জার আখ্যায়িত করেছিলেন, সেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ জয়ী হয়েছে ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের বৃহদাংশ চালুর পাশাপাশি ভূতল মেট্রোরেলের কাজের সূচনাও হয়েছে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম এবং আরও কিছু অঞ্চলে উড়াল সড়কসহ যোগাযোগব্যবস্থায় উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত আরও বেশ কিছু মেগা প্রকল্প চলমান অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটেও আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ না সুসংবাদ আরও আছে, কিন্তু এর পাশপাশি দুঃসংবাদও কম নয় আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৈষম্য বেড়েছে, জীবনযাত্রায় নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা জিইয়ে আছে এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা এখনও সম্ভব হয়নি অঙ্গীকার সত্ত্বেও অর্থনীতিসহ নানা সূচকে আমাদের অগ্রগতি দৃশ্যমান বটে, কিন্তু এই সত্যও অনস্বীকার্য, সুশাসন জবাবদিহির মতো জরুরি বিষয়গুলোও এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিশ্চিত করা যায়নি

বাংলাদেশের জন্মই পুরো বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময় ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়াশীলতা-পশ্চাৎপদতাসহ নেতিবাচক অনেক কিছু নির্বাসনে পাঠিয়ে ছিল কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতা অর্জনের কিছু কাল যেতে না যেতেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বজাতদ্রোহীরা দেশকে আবার পেছনে নিয়ে যেতে শুরু করে ওই অন্ধকার অধ্যায় কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠিন হয়ে দাঁড়ালেন সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যা, জেলহত্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ নিলেন তিনি সফল হলেন কিন্তু এর মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে সৃষ্ট সব অন্ধকার ভেদ করে আমরা এগিয়ে চলেছি সর্বাংশে, এটি বলা যাবে না মুখোশধারীরা এখনও ঘাপটি মেরে আছে উগ্রবাদী-ধর্মান্ধরা এখনও তৎপর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এখনও ছড়ায় রাজনীতিতে স্ববিরোধিতা জিইয়ে আছে রাজনীতিতে অস্বচ্ছতার ছায়াও কম প্রলম্বিত নয় অথচ এসবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে বাঙালির যে প্রতিরোধ মুক্তির লড়াই শুরু হয়েছিল, এর পূর্ণতা আসে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে

জুলিয়াস সিজার, সিরাজ-উদ-দৌলা এবং বঙ্গবন্ধুÑ এই তিনজনের হত্যাকাণ্ড নিষ্ঠুর নজির, কেননা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্র সমাজে মৌল পরিবর্তন এসেছে নেতিবাচক অর্থে জুলিয়াস সিজারের হত্যাকাণ্ডের পর রোমান রাজ্য রিপাবলিক থেকে সম্রাটশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয় শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যবাদ অর্থাৎ যে প্রজাতন্ত্রীর প্রতি হুমকি মনে করে জুলিয়াস সিজারকে ব্রুটাসের নেতৃত্বে খুন করা হয়, তার মৃত্যুতে ফল হয় ঠিক উল্টো প্রজাতন্ত্রী রূপ পেয়ে রোম হয়ে যায় সাম্রাজ্য এবং সিজারেরই ভ্রাতুষ্পুত্র অক্টোভিওস সিজার হন রোমের প্রথম সম্রাট ঠিক সে রকম বাংলার মসনদ পাওয়ার লোভে রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে জোট বেঁধে মীরজাফর সিরাজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন সিরাজের পরাজয়ের পর মীরজাফর বাংলার মসনদে বসলেও রবার্ট ক্লাইভের পুতুল হয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিশ্বাসঘাতক খোন্দকার মোশতাক দুই মাস ২২ দিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তারপর ঘটনাক্রমে জিয়াউর রহমান আসেন ক্ষমতায় এবং এর পর থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আমরা কিভাবে শাসিত হয়েছি, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানা

আজকের বাংলাদেশ যে পর্যায়ে অবস্থান করছে, তা অনেক দিক থেকেই প্রশংসার দাবি রাখে কিন্তু তাতে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই আমাদের যে আরও অনেক কিছু করণীয় রয়ে গেছে, সেটি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তি শব্দটি বিশেষভাবে উচ্চারিত হয়েছিল শুধু ভৌগোলিকভাবে স্বাধীনতা অর্জনই নয়, সার্বিক মুক্তিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর প্রশ্ন দাঁড়াল আমাদের মুক্তি কিভাবে আসবে? আসবার একটা পথ বাংলাদেশের আদি সংবিধানে দেখানো হয়েছিল চারটি মূলনীতি বের হয়ে এসেছিল কিন্তু পথের দিশা সংবিধানে থাকাই যথেষ্ট নয়, পথটা বাস্তব ক্ষেত্রে গড়ে তোলা অনিবার্য ছিল, তা আর নতুন করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন রাখে না আগেই বলেছি, তৎকালীন শাসকরা হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার স্বার্থে সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলোতে আঘাত করেছিলেন বিলম্বে হলেও উচিত, সংবিধানের সেই আদিরূপ ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেশবিরোধী যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এরও প্রতিকার প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ বটে, কিন্তু ধর্মান্ধ নয় বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন তা আবার কিভাবে ফিরে এলো এবং হীনস্বার্থবাদীর রাজনীতিতে ধর্মের সংমিশ্রণ পুনর্বার ঘটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে যা কিছু করেছে, এরও প্রতিকার প্রয়োজন

স্বাধীনতার সড়ক নির্মাণ হয়েছিল অনেক আগেই আমরা যদি ৫২-এর ভাষা আন্দোলন-পর্ব থেকে ৭১-পর্ব পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সব কিছু বিশ্লেষণ করি, তাহলে এর কোনো কিছুই অস্পষ্ট থাকে না যে রাজনীতির অর্জন এত কিছু, সেই রাজনীতিই আমাদের জন্য ধাপে ধাপে যে দুর্ভোগ ক্ষত সৃষ্টি করেছে, এর সলুক সন্ধান জরুরি সুশাসন নিশ্চিত হলে এই কাজটি সহজ হবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি-দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারলে কদাচারের পথ রুদ্ধ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথও মসৃণ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে তাঁর নীতি-আদর্শ চলার পথে পাথেয় করতে হবে দেশে গণতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্র সমতল করতে সাধারণ মানুষের ভূমিকা কম নয় দেশের কৃষক, গার্মেন্টসকর্মীসহ আমাদের প্রবাসীরা অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন তাদের যেন যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় তাদের বঞ্চিত রেখে অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ রাখা যাবে না টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য করণীয় আছে আরও অনেক কিছু সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয় সেসব ব্যাপারে জ্ঞাত দেশপ্রেম থাকুক মুখ্য হয়ে দেশপ্রেম যদি অন্তরের অন্তঃস্থলে থাকে, তাহলে দেশ আলোকিত না হয়ে পারে না

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান, তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয় বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটে বাংলাদেশের উন্নয়নকে জনমুখী টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর সব ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকার, পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের শাসন সুসংহত হলেই নিশ্চিত হবে মানুষের অধিকারের সব পথ জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি বটে, কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন না তাদের এই পথে টেনে আনা হবে অনুচিত আমাদের দারিদ্র্য, সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের বিষয়গুলো রাজনৈতিক এজেন্ডার মুখ্য বিষয় হিসেবে সামনে রাখতে হবে প্রতিজ্ঞা চাই মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সব অপশক্তি হটানোর

শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, সেই জানা-অজানা শহীদকে, যারা তাদের জীবন উৎসগ করে গেছেন জাতির ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আরও স্মরণ করি ভারত-রাশিয়াসহ (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) বন্ধুরাষ্ট্র, বিদেশি নাগরিক সবাইকে, যারা আমাদের জন্মবেদনার ওই ক্ষণে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্বাধীনতার সুফল সর্বক্ষেত্রে অর্থবহ করতে হলে সুশাসন, মানবাধিকারসহ নাগরিক অধিকারের সব অনুষঙ্গ নিশ্চিত করতে হবে এবং নজর গভীর করতে হবে অর্জনের পাশাপাশি অপূর্ণতার দিকেও বিজয়ী জাতির তো দমে যাওয়ার অবকাশ নেই সব অপূর্ণতা পূর্ণতা পাক  আমরা বিশ্বাস করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা যে অঙ্গীকার রয়েছে, এর বাস্তবায়নে সরকার নির্মোহ অবস্থান নেবে স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধের ব্যাপারে দেশপ্রেমিক সবার অবস্থান হবে আপসহীন


  • শিক্ষাবিদ  কথাসাহিত্যিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা