সাধারণ্য
হাবিব ওয়াহিদ
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০১:০৩ এএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০১:০৯ এএম
ছবি : জর্জ ত্রিপুরা
জর্জ
ত্রিপুরা। পেশায় ভ্রমণ
সাহায্যকারী (ট্রাভেল গাইড)। জন্ম
ও বেড়ে ওঠা পার্বত্যাঞ্চল বান্দরবান
জেলায়। পেশার সঙ্গে
যুক্ত হয়েছে নেশাও। পর্যটকদের
সহযোগিতা করে তিনি
আনন্দ পান। তার কিছু অনুভূতি
তুলে ধরা হলো।
নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন...
জর্জ
ত্রিপুরা : আমার বয়স ২৬। বান্দরবানের
থানচি বাজারের পাশেই
বাসা। আমি বিবাহিত
এবং আমার একটা
মেয়ে আছে। নাম সাঁপ্রি ত্রিপুরা, বয়স ছয় বছর। আমার
বাবা সিলভেস্টার আজিম
এবং মা পার্বতী
ত্রিপুরা দুজনই প্রয়াত। বাবা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক
ছিলেন। ছয় ভাইবোনের
মধ্যে আমি সবার
ছোট।
শৈশব ও কৈশোরের গল্প যদি বলেন...
জর্জ
ত্রিপুরা : ছোটবেলায় বেশ দুষ্টু ছিলাম। পড়ালেখার
প্রতি অনীহা ছিল। পড়ালেখার
জন্য আমার বাবার
চেষ্টার কমতি ছিল না। ইন্টারমিডিয়েট
পাসের পর আর পড়াশোনা করিনি।
কোনো আত্মতৃপ্তির জায়গা আছে?
জর্জ
ত্রিপুরা : ক্রিকেটার মাশরাফি
বিন মর্তুজার মতো এত বড় মাপের একজন
মানুষ মাঝেমধ্যে কল দিয়ে আমার
খোঁজ নেন,
আমিও কল দিই। এ রকম আরও অনেকের সঙ্গেই
সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ পেশায় না এলে হয়তো
এমনটি সম্ভব হতো না। যেখানে
আমার বেড়ে ওঠা সেখানে ৬৪ জেলা থেকে
মানুষজন ঘুরতে আসছেন। অনেক
মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি
এটা অনেক আনন্দের। অন্য
পেশায় থাকলে হয়তো
এমনটা হতো না।
ভ্রমণ সাহায্যকারী পেশায় কবে নিজেকে যুক্ত করলেন এবং কেন?
জর্জ
ত্রিপুরা : প্রায় ছয় বছর হয় এ পেশায়
যুক্ত হয়েছি। আমি থানচির নিবন্ধিত
একজন গাইড। অনেকেই
পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাচ্ছেন
না। বেকার থাকলে
তো জীবনযাপন কঠিন
তাই এ পেশায়
নিজেকে যুক্ত করা। থানচিতে
আগের তুলনায় পর্যটকের
আগমন বেড়েছে বিধায়
আমরাও উপার্জন করতে
পারছি।
পাহাড়িদের জীবনযাপনের বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
জর্জ
ত্রিপুরা : পাহাড়িদের জীবনযাপন
আপনাদের মতো সহজ নয়। অনেক
প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে
পাহাড়িরা জীবনযাত্রা চালান। তাদের
মূল পেশা বলতে
জুম চাষ। পাহাড়ে
বিশুদ্ধ পানির সংকট
রয়েছে।
এ পেশায় কি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়?
জর্জ
ত্রিপুরা : পর্যটক না এলে কিংবা
কোনো কারণে প্রশাসন
ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিলে
আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। কারণ
এটাই আমাদের কর্ম
ও উপার্জনের একমাত্র
মাধ্যম। যেহেতু এখানে
অনেক পর্যটক আসেন
তাই যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত করতে
হবে। যাতায়াত খরচ কমাতে হবে। আমি যেহেতু একজন
রেজিস্টার্ড গাইড সেহেতু
মনে করি প্রসেসিং
পদ্ধতি আরও সহজ করা যেতে
পারে। আমিয়াখুম যাওয়ার
অনুমতি না থাকলেও
সব পর্যটক আমিয়াখুমই
যান।
সম্ভাবনার কথা যদি বলেন...
জর্জ
ত্রিপুরা : সম্ভাবনা অনেক
আছে। আগের তুলনায়
ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ
বেড়েছে। প্রকৃতির সব উপাদান আছে বান্দরবানে। সরকারের
উচিত বান্দরবানের পর্যটন
ঘিরে আরও পরিকল্পনা
করা।
ভ্রমণপিপাসুরা পাহাড়ে শান্তি খুঁজতে আসেন। পাহাড়ের আপনাদের শান্তির গল্প শুনতে চাই...
জর্জ
ত্রিপুরা : আমরা শান্তিতেই
আছি। পাহাড়ের সুন্দর
প্রকৃতি আমাদের খোরাক। আগে রেমাক্রি পর্যন্ত
হেঁটে যাওয়া লাগত
কিন্তু এখন পর্যটক
বাড়ার ফলে নৌকার
ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের
শান্তির পেছনে পর্যটকদেরও
অবদান রয়েছে।
বিশেষ কোনো গল্প থাকলে বলুন...
জর্জ
ত্রিপুরা : মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা আগেই বলেছি। তা ছাড়া এই ছয় বছরে
কত মানুষের সঙ্গে
কত স্মৃতি জড়ো হয়েছে। হয়তো
অন্য পেশায় গেলে
এ সুযোগটা পেতাম
না। মানুষের ভালোবাসা
পাচ্ছি এটাই জীবনের
পরম প্রাপ্তি ও সুখ।