অলঙ্করন : প্রবা
বর্জ্য
এখন আর পরিত্যাজ্য বস্তু নয়, বর্জ্য থেকে জ্বালানি ও আরও অনেক কিছুই উৎপাদন সম্ভব। আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য তো বটেই,
এখন গৃহস্থালি বর্জ্যও অনেক ক্ষেত্রেই বিপন্ন করে চলেছে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ। জীবমণ্ডলের স্থিতাবস্থায় সৃষ্টি করছে নানারকম বিঘ্ন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ কথাটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতিসহ বর্জ্য ফেলার জায়গার অভাব ইত্যাদি সমস্যার প্রেক্ষাপটে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৩১ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘আলোচনাতেই গেল বর্জ্য বিদ্যুতের ১১ বছর’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে সহজেই প্রতীয়মান হয় সরকারের এই প্রকল্প শুধু মুখথুবড়েই পড়েনি,
সিদ্ধান্ত-আলোচনা ইত্যাদির জটাজালেই আটকে আছে উদ্যোগটি।
সভ্যতার
ক্রমবিকাশে যে পর্যায়ে আমরা উন্নীত হয়েছি,
সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবদান এবং প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দেশে ক্রমাগত বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বর্ধিত চাহিদা মেটাতে সরকার যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে,
তখন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আলোচনাতেই কেটে গেছে এগারো বছরÑ
এটি বিস্ময়কর বৈকি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা-পর্যালোচনার পাশাপাশি অনেক সেমিনারও হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর পর ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশনও এ ব্যাপারে নেয় পৃথক উদ্যোগ। এমনকি পৌর এলাকাতেও এমন প্ল্যান্ট স্থাপনের আলোচনা শুরু হয়। ইতালির একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা আর এগোয়নি। এর পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি করে। সে ক্ষেত্রে কাজের সূচনা হয়েছিল বটে,
কিন্তু অগ্রগতি প্রশ্নবোধক। এর আগেও এমন চিন্তা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে,
১৯৯০ সালে ঢাকার মাতুয়াইলে বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য ৫০ একর জমির ওপর ল্যান্ডফিল্ড তৈরি করে তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু এরও পশ্চাৎচিত্র অনুজ্জ্বল। জানা গেছে,
চীন-জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দফায় দফায় আলোচনা করে ডিএসসিসি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে,
দেশের যেকোনো প্রকল্প গ্রহণে যে রকম তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়,
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। সময় গড়িয়ে যায়,
প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ে, কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের আয়ু ফুরায় নাÑ এমন অনেক কিছুই আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মূর্ত। প্রশ্ন হচ্ছে,
যদি এই হয় অবস্থা,
তা হলে প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রক্রিয়াগত জটিলতায় সময় ও অর্থনাশের মানেটাই বা কি?
দেশের
বিদ্যুৎ চাহিদার নিরিখে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা এবং প্রকল্প হাতে নেওয়ার বিষয়টি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য হলেও, এক দশকেরও বেশি সময়ে তা বাস্তবায়িত না হওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কেউই এড়াতে পারেন না। অনস্বীকার্য, দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ও বিতরণ ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি কলাকৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দূরদৃষ্টির অভাব রয়েছেÑ এমন অভিযোগও কম নয়। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন সমান্তরালে হচ্ছে নাÑ এও পুরোনো অভিযোগ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা এ জন্যই সুফল পাচ্ছি না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন দর্শনে ত্রুটি আছেÑ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমন অভিযোগও ইতোমধ্যে বহুবারই উত্থাপন করেছেন।
বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে,
বিশেষ করে উন্নত দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ভাবনার বিষয়টি দূর অতীতের নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য,
এ ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনা শুধু প্রক্রিয়ার গণ্ডিবদ্ধই রয়ে গেল! আমরা ইতোমধ্যে বহুবার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের তরফে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নানারকম প্রতিশ্রুতি শুনেছি। কিন্তু কার্যত তাদের সব প্রতিশ্রুতিই হবে-হচ্ছের বৃত্তে আটকে আছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি এগারো বছর অতিক্রান্তে এ সাক্ষ্যই দিচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চাহিদার কিছুটা হলেও পূরণ হতো। আমরা মনে করি, জবাবদিহি এবং দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া গতিশীল হোক এবং এ প্রকল্প বাস্তবায়নে যা কিছু করণীয় তা দ্রুত করা হোক। একই সঙ্গে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণের ব্যাখ্যা আদায়ও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.