× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্য

জামালপুরের লোকমেলা

জাহিদুর রহমান উজ্জ্বল

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৫ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

পহেলা বৈশাখে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বালিজুড়ি সন্ন্যাসী মেলা অনুষ্ঠিত হতো। বালিজুড়ি বাজারের পশ্চিম পাশে একটি দহ (বিল) ছিল, যার কিছুটা এখনও বিদ্যমান। এ স্থানে কয়েকটি বিশাল অশথ গাছ ছিল, তার পাশে একটি ছোট্ট মন্দির। ওই মন্দিরে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে এখানে একটি মেলা বসত। এটি ছিল ভারতবর্ষের অন্যতম একটি সন্ন্যাসীদের মিলনমেলা।

১৭০০ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাঞ্চলে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ দেখা দেয়। তখন ওই অঞ্চল সন্ন্যাসীদের দখলে চলে যায়। সন্ন্যাসীরা যমুনার চরাঞ্চলে ঘাঁটি করে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। তখনই তারা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবানের গোলাবড়ি (এখানে নৌবন্দর ছিল) এলাকায় গাড়িদহ নদের পাড়ে দি বটতলায় একটি মন্দির স্থাপন করেন। মন্দিরে তারা সন্ন্যাসী পূজা করতেন। ওই সময়ই তারা মাদারগঞ্জে গমন করেন এবং বালিজুড়ি দহপাড়ায় বিলের ধারে একটি মন্দির স্থাপন করেন। দুটি মন্দিরেই তারা সন্যাসী পূজা ও মেলার আয়োজন করতেন। এসব মন্দিরে জমায়েতের মধ্য দিয়ে তারা দল বেঁধে জামালপুর (সন্ন্যাসীগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল) দয়াময়ী মন্দিরে এসে বার্ষিক স্নানোৎসবে মিলিত হতেন। ওই মেলা ছিল খুবই জমজমাট। কয়েক যুগ মেলাটি চলার পর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই মেলার আদলে তার পাশে ঈদমেলার প্রচলন করা হয়। প্রায় পৌনে দুইশ বছর ধরে বালিজুড়ি ঈদমেলা চলে আসছে। প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তিন বা পাঁচ দিন এ মেলা চলে। মেলায় কৃষিপণ্য, মাটির জিনিস, টেপাপুতুল, মৃৎশিল্পের খেলনাসামগ্রী, বাঁশ ও বেতের সাংসারিক জিনিস, কামারদের লোহাসামগ্রী, কাঠের লাঙল, লাঙলের বিভিন্ন উপকরণ, বীজ, প্লাস্টিক খেলনা, মেয়েদের চুড়ি, ফিতা, আলতা, কসমেটিকসামগ্রী, কাগজ ও শোলার বিভিন্ন খেলনা মেলে। ইদানীং কাঠের আসবাবপত্রও মেলায় পাওয়া যায়। তার সঙ্গে নাগরদোলা শিশুদের বাড়তি পাওনা। মেলায় সবচেয়ে বেশি দোকান বসে খাবার ও মিষ্টির। মেলার পাশে একটি গ্রামে যুগ যুগ ধরে কারিগররা জিলাপি, গজা, বাতাসা, সাজ, মুড়কি, মোয়া, বুন্দিয়া, রঙবেঙের মিষ্টি তৈরি করে আসছেন। ঐতিহ্যবাহী মেলায় বেশি বিক্রি হয় মিষ্টিজাতীয় জিনিস। এ মেলাটি ইদানীং ফের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। মেলা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় জারি-সারি, মুর্শিদি ও পালাগানের আসর বসত। বৈশাখী উৎসবে বিভিন্ন খেলাধুলা হতো। যাঁড়দৌড়, মইদৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদির প্রতিযোগিতা ছিল মেলাজুড়ে। বৈশাখের প্রধান বিষয় ছিল হালখাতা। সারা বছরের বাকি লেনদেন মিটিয়ে ফেলার জন্য ওই দিন দোকানিরা দোকান সাজিয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের দাওয়াত দিতেন। গ্রাহকরা তাদের বাকি মিটিয়ে মিষ্টিমুখ করে বাড়ি ফিরতেন। এখনও এ রেওয়াজ রয়ে গেছে। আগেকার আমলে জমিদাররা তাদের বাড়িতে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে আয়োজন করতেন। তালুকদার, মহাজনরা জমিদারের কাছে বছরের খাজনা মিটিয়ে আবার জমি ইজারা নিতেন। বৈশাখী উৎসবের এই রূপ এখন অনেকটা পাল্টে গেছে। উৎসব বা মেলার ভাবগত অর্থ মানবতার আত্মিক সম্মিলন। আবহমান বাংলার মেলা শুধু পণ্য প্রদর্শনী নয়, জাতিধর্মনির্বিশেষে মানুষের আধ্যাত্মিক মিলন। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের একাত্মতা হওয়ার বিষয়টিও হয়ে ওঠে দৃশ্যমান।

  • লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা