× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা কেন

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ১২:৫৭ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই গণতন্ত্রপ্রিয়। তারা ভাত-কাপড়ের পরই গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেয়। এই গণতন্ত্রের জন্য তারা দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বাংলাদেশ এখন একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে থাকেন। আমরা সাধারণ মানুষও তাদের কথায় উজ্জীবিত হই, আশান্বিত হই। তবে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া বা তাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো যে এখনও সম্ভব হয়নি, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না।

গণতন্ত্র পরিমাপের কোনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে কোথায় গণতন্ত্র কী হালে আছে, তার পরিমাপ করা যায় নির্বাচনের মাধ্যমে। সে হিসাবে নির্বাচন বা ভোটকে গণতন্ত্র মাপার ব্যারোমিটার বলা চলে। কেননা এর মাধ্যমে জনমতের সরাসরি প্রতিফলন ঘটে। একটি দল কিংবা ব্যক্তিবিশেষের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন কিংবা আস্থা-অনাস্থার বিষয়টি ভোটের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়। তবে সে ভোট অবশ্যই হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ; যেখানে ভোটার-সাধারণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক-বচসা চলছে। বিরোধী দল বলছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাই তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। তারা সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রধান দুই স্টেকহোল্ডার যখন নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বাগযুদ্ধে লিপ্ত, ঠিক তখনই গণতন্ত্রের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদ এসেছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম থেকে। গত ২৭ এপ্রিল সেখানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের একটি শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকাটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২। তন্মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ৩০৫ জন। সে হিসাবে একজন প্রার্থীর জামানত বাঁচাতে হলে তাকে মোট প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ অর্থাৎ ৯ হাজার ৪১৩ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে। কিন্তু জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া আর কেউই তার ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেননি। ফলে তাদের জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল চরম হতাশাজনক। বলা যায়, ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের ‘চৈতালী খরা’ বিরাজ করছিল। চান্দগাঁওয়ের একটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অন্য একটি কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের পরিমাণ ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানকার ৭৫টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০ শতাংশ। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে সর্বমোট ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এদিকে ভোটের আকালের এ নির্বাচনেও সরকারি দলের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল এবং অবৈধভাবে ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাবউদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এটি একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে ভোট নিয়েছে। গোপনকক্ষে তাদের লোক ছিল। শহরে ২ থেকে ৩ শতাংশ এবং গ্রামে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু ভোটের হার বলছে ১৪ শতাংশ। এত ভোট কোথা থেকে এলো?’ যদিও রিটার্নিং অফিসার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ভোটার কম উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন।

পরাজিত প্রার্থী সেহাবউদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন এত ভোট এলো কোত্থেকে? আর সচেতন মানুষের প্রশ্ন ৮৬ শতাংশ ভোটার কোথায় গেল? তারা কেন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলো না? এটা ঠিক, কোনো দেশেই ১০০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয় না। আমাদের দেশেও বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট প্রদানের পরিমাণে তারতম্য দেখা গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোটের বাক্সে যে মঙ্গা দেখা দিয়েছে তা সচেতন মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না করে পারে না। দিন দিন কেন জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে, তা নিয়ে বিশিষ্টজনরা আগে পড়ে অনেক মন্তব্যও করেছেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের মন্বন্তরের পর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি দৈনিককে বলেছেন, ‘এটা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের সম্মতি জ্ঞাপন। ১৪ শতাংশ জনগণ ভোট দিয়ে তাদের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। তা-ও কিছু কেন্দ্রে চাপাচাপি করে এসেছে। বাকি ৮৬ শতাংশ মানুষ অনাস্থা দিয়েছেন এই নির্বাচনে। এটা হচ্ছে এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অনাস্থা। সত্যিকার অর্থে যদি সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন দরকার।’

সুজন সম্পাদকের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ কম। কেননা, বিগত কয়েক বছর ধরে জনসাধারণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ-উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু কেন এই অনীহা-অনাস্থা? বাংলাদেশের মানুষ তো সব সময় নির্বাচনকে উৎসবের আমেজে গ্রহণ করেছে। ভোটে তাদের ভাগ্যের কোনো হেরফের হবে না জেনেও তারা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে চিত্র অনুপস্থিত। এর প্রধান কারণ নির্বাচনে ভোটারদের অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে আসা। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও এখন আর তাদের দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে যেতে চান না। আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে থাকেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের সমর্থক। তাহলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সেসব সমর্থক গেল কোথায়? তার মানে কি এই যে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে? এমনিতে নানা কারণে আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাজনীতিকে তারা কিছু মানুষের ভাগ্য গড়ার হা-ডু-ডু খেলা বলেই মনে করেন। বিগত বছরগুলোতে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হতে তারা এখন সেটার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। 


  • সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা