× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুদ্রাস্ফীতির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়

ড. মীজানুর রহমান

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনদের ইতিহাসের নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই কান্তিকালে কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ক্রেতা কি আচরণ করছে বা করবে এবং এর সঙ্গে বাজারজাতকরণ কৌশলের সমন্বয় করে তাদের নিকট ভ্যালু পৌঁছে দেওয়া এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে তার ভিন্নতা বজায় রাখা। সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে হবে কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগকেই। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময় কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের লোকদের কাজ ক্রেতার অবস্থা অনুধাবন করে, ক্রেতার অবস্থা মূল্যায়ন করে উপযুক্ত কর্মকৌশল নির্ধারণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে টিকে থাকার সবচেয়ে বড় কৌশল হচ্ছে, ‘কম খরচে ব্যবসা করা’। এর জন্য যা করতে হবে তা হলোÑ নির্মোহভাবে খরচ ও মুনাফা পর্যালোচনা করা। সৃজনশীল হওয়া। প্রয়োজনে খরচ স্থিতিশীল রাখার জন্য পণ্য ও সেবার সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া। লেনদেন প্রক্রিয়াটিকে সংক্ষিপ্ত এবং স্বয়ংক্রিয় করাও প্রয়োজন। কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মীদের সন্তুষ্টও রাখতে হবে। অপচয় রোধ করে নির্মোহভাবে খরচ কমাতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির সময় নগদ টাকা ধরে রাখলে লোকসান বাড়বে, নগদ দ্রুত অবমূল্যায়িত হয়। অপব্যবহারযোগ্য নগদ থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য সম্পদ সংগ্রহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা যেতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি স্বল্প বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে চিরস্থায়ী হবে না।

মুদ্রাস্ফীতির অতি সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে বিগত সময়ে নির্ধারিত টাকা দিয়ে আমি যে পণ্য পেতাম, এখন সেই টাকা দিয়ে একই পণ্যের আরও কম পাচ্ছি। এতে সীমিত আয়ের লোকদের জীবন নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক পণ্যের কেনাকাটা বাদ দিতে হয় অথবা কম কিনতে হয়। মূল্যস্ফীতির প্রভাব অর্থনীতি এবং সমাজজীবনে ব্যাপক। মুদ্রাস্ফীতির সুফল এবং কুফল দুটোই আছে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ এবং এর পরিমাপ পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক আছে। সরকারি হিসাবেই আমাদের চলমান মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে। পৃথিবীর অনেক দেশে এই হার ৩০, ৫০, ৭০ এবং ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত আছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে গণমাধ্যম এবং টেলিভিশনে অধিকাংশ আলোচনাতেই ক্রেতাদের দুর্দশার কথাই উঠে আসে। অন্য পক্ষগুলো যেমনÑ শিল্প উৎপাদনকারী, ছোট ব্যবসায়ী, ছোট ও নতুন উদ্যোক্তা, এমনকি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমস্যা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। বর্তমানে যে মুদ্রাস্ফীতি চলছে তা সহসা আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, বৈশ্বিক পর্যায়ে সেটা ১৯৮০ দশকের মুদ্রাস্ফীতিকেও ছাড়িয়ে যাবে। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা উভয়ের জন্যই এটা একটা দারুণ সংকট।

সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। মূল্যবৃদ্ধিকে ক্রেতা, ডিলার, এমনকি নিজস্ব বিক্রয়কর্মীরাও ভালোভাবে নেয় না; তা জেনেশুনেই কোম্পানিগুলো মূল্য বৃদ্ধি করছে। মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ উৎপাদন ও বিতরণ খরচ বেড়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান খরচ কোম্পানির মুনাফাকে কমিয়ে দেয়। আর কোম্পানি তখন বাধ্য হয়ে নিয়মিত মূল্য বাড়াতে থাকে। কোম্পানি অনেক সময় খরচ আরও বৃদ্ধি পাবেÑ এ আশঙ্কায় যতটুকু খরচ বেড়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে মূল্য বাড়ায়। কোম্পানিগুলো এ সময়ে সাধারণত তার ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যচুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায় না। কারণ তাদের ভয় থাকে খরচ বৃদ্ধির কারণে মুনাফা নাও হতে পারে। অন্য যে উপাদানটি অবদান রাখে তা হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে (রোজা, ঈদ, পূজা) উপলক্ষ করে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা। যখন কোনো কোম্পানি তার ক্রেতাদের চাহিদার পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করতে পারে না, তখন মূল্য বাড়িয়ে দেয়। কখনও কখনও ক্রেতাদের জন্য পণ্যের কোটা নির্ধারণ করে দেয়। ক্রমবর্ধমান খরচের সঙ্গে তাল রাখার উদ্দেশ্যে কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো পথ খোলা আছে। যে পণ্যটি বেশি চলে, তার বাট্টা প্রত্যাহার করে এবং পণ্য লাইনে বেশি দামি পণ্য যোগ করে প্রায় অদৃশ্যভাবেই মূল্যবৃদ্ধি করা যায়। অথবা খোলাখুলিভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ানো যায়। অতিরিক্ত বর্ধিত মূল্য ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায় করার সময় পণ্যটি যেন ‘বাটালি’ বা ‘মূল্য ডাকাতের’ ভাবমূর্তি না পায়, সেদিকে কোম্পানিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোম্পানি কেন মূল্যবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে তা ব্যবসায়ী এবং শিল্প ক্রেতাদের জানানোর জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। কোম্পানির বিক্রয়কর্মীদের উচিত, ক্রেতারা কীভাবে পণ্যটি মিতব্যয়িতার সঙ্গে পেতে এবং ব্যবহার করতে পারে সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ দেওয়া।

মূলত ক্রেতার অগ্রাধিকার জেনে এবং সে অনুযায়ী সাড়া দিয়েই এই দুর্মূল্যের বাজারে টিকে থাকতে হবে। ক্রেতাকে জানাই হচ্ছে মার্কেটিংয়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু। মুদ্রাস্ফীতি একপর্যায়ে কমে যাবে, যদিও কয়েক মাস ধরে এটা দেখা যাচ্ছে না। কিছু সমন্বয় করে এবং এজাইল থেকে ব্যবসায় চালিয়ে নেওয়া এবং ব্যবসায় বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়েই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এমনটি হচ্ছেÑ এ বিষয়টি সরকার এবং ব্যবসায়ের পক্ষ থেকে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও যেহেতু এ বিষয়টি দ্বারাই জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এ বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে এবং সরকার ও ব্যবসায়ীকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারা এ বিষয়টাকেই বেশি মনে রাখবে। বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু, ট্যানেল, যোগাযোগ ও সরকারের অন্যান্য পরিসেবা থেকে যে উপকার পাচ্ছে সেটাকে ছাড়িয়ে যাবে মুদ্রাস্ফীতির ক্ষতি। মানুষ উপকার অপেক্ষা অপকার বেশি মনে রাখে। ২০০২ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ক্যায়েনম্যান বলেছেন, ‘মানুষ ঝুঁকি নিতে চায় না, লাভের চেয়ে ক্ষতিকে অনেক বেশি ঘৃণা করে। উপকারের চেয়ে অপকারকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ... মানুষ পুরাতন অতীত ভুলে যায়, বর্তমানের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।’

  • অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা