× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ওসমানী উদ্যান উন্মুক্ত করুন

সম্পাদক

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

ঢাকা শহরে যে কয়েকটি উন্মুক্ত প্রান্তর, খোলা হাওয়ায় যেখানে মানুষ শ্বাস নিতে পারে, ওসমানী উদ্যান তারই একটি। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে মনে রেখেই পার্কটির নাম হয় ‘ওসমানী উদ্যান’। যারা পুরোনো মানুষ, তাদের নস্টালজিয়া রয়েছে ওসমানী উদ্যান ঘিরে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ওসমানী উদ্যানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের স্মৃতি। গুলিস্তানের ব্যস্ততায় এখানে দেখা মিলত অন্য এক ঢাকার। সমস্ত বয়সের মানুষই নিয়মিত আসতেন। উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়াও আশেপাশের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ সকাল-বিকাল হাঁটতে আসতেন এ উদ্যানে। শহুরে কোলাহলের মধ্যেই এই পার্কে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে নিতে পারতেন একটু স্বস্তির সময়। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই। উদ্যানটি দীর্ঘদিন বন্ধ। কেন?

কারণ, উদ্যানের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প। গাছ কেটে এখানে-ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে। রড-সিমেন্টের অর্ধেক স্থাপনা তৈরি করে অবিন্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ করা হয়েছে উদ্যান। প্রকল্প গ্রহণের সময়ে উদ্যানটির নাম দেওয়া হয় ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’। শুধু নামই নয়, উদ্যানটির খোলনলচে পাল্টে দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ছয়টি বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্যানের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়নি। মাঝ থেকে নগরবাসী হারিয়ে ফেলেছে উদ্যানের উন্মুক্ত পরিবেশে নিজেদের ক্লান্তি দূর করার পথ। প্রকল্প গ্রহণের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র বলেছিলেন, ‘কর্মস্থলে ও পরিবারে প্রতিনিয়ত মানুষ গোস্বা করে, রাগ হয়। এ পার্ক এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে এখানে কেউ মন খারাপ নিয়ে এলে পরিবেশের সান্নিধ্যে মন ভালো হয়ে যায়, উৎফুল্লতা বাড়ে। নতুন উদ্যমে কাজে ফিরে যেতে পারে।’ প্রাথমিক পর্যায়ে এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে যোগ হয় নতুন পরিকল্পনা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ কোটি টাকায়। এরপর আরেক দফা পরিকল্পনা যোগ হওয়ায় ব্যয় দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকার ওপরে।

নগর কর্তৃপক্ষ উদ্যানের উন্নয়নের কথা বলে প্রকল্প গ্রহণ করলেও, তাদের সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের। নগর কর্তৃপক্ষ যেখানে দাবি করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এ উদ্যানে এলে মানুষের গোস্বা নিবারণ হবে, সেখানে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওসমানী উদ্যান তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হারাবে। শতকোটি টাকা খরচের মাধ্যমে মূলত ঐতিহাসিক উদ্যানটিকে ধ্বংসই করা হচ্ছে।

আমাদের মনে আছে, ১৯৯৯ সালে এই উদ্যানের ১১ হাজার গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সচেতন মানুষের প্রতিবাদের মুখে তখন উদ্যানটি রক্ষা পেলেও এখন এটি পরিণত হয়েছে প্রায় ধ্বংসস্তূপে। যেখানে শহরে বিনোদনের কোনো জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে, সেখানে উন্নয়নের নামে এভাবে দীর্ঘদিন ওসমানী উদ্যানকে বন্দি করে রাখা যেমন হতাশাজনক, তেমনি ক্ষোভ জাগানিয়া। ওসমানী উদ্যানকে আমরা দ্রুত উন্মুক্ত দেখতে চাই। এ উদ্যানে যেন পরিবেশবিরোধী কোনো স্থাপনা গড়ে না ওঠে তাও চাই। নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত জায়গা কমছে। কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে উদাসীনতাও রয়েছে। আমরা চাই না, প্রশাসনের উদাসীনতায় শহরের খোলা জায়গাগুলো হারিয়ে যাক।

১৯ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত ‘শতকোটির প্রকল্প নিয়ে বিপদে ওসমানী উদ্যান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে ঢাকার পার্ক-উদ্যানের নকশা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। সমীক্ষায় বলা হয়, ওসমানী উদ্যানের নকশায় ৫২ ভাগ কংক্রিট রাখা হয়েছে। অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, পাবলিক পার্ক ও খোলা পরিসরে শতকরা ৫ ভাগের বেশি জায়গায় অবকাঠামো তৈরির সুযোগ নেই। যদিও পার্কটির নকশাপ্রণেতা স্থপতি অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।

পুরো ঢাকা শহরই যেখানে ক্রমশ কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। সেখানে উন্মুক্ত স্থান ঘিরে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। আমরা চাই, দ্রুত এই গোস্বা নিবারণী পার্কটি খুলে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর জন্য যেমন বলি তেমনি বলি উদ্যানকে উদ্যানের চরিত্রের মধ্যেই থাকতে দিন। তাকে প্রকৃতিরই অংশ করে তুলুন, ইট-কাঠ-কংক্রিটের সীমাবদ্ধ জঞ্জালে পরিণত করবেন না। সারা বছরই মানুষের আনাগোনায় উদ্যানটি জমাটি আড্ডাস্থলে পরিণত হোক। ক্লান্ত মানুষের শ্বাস ফেলার জায়গা হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা