× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুধু উদ্যোক্তা নয়, চাই শ্রম খাতে নারীর সমান সুযোগ

খুশী কবির

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১১:০৩ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

শ্রম খাতসহ বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিশেষত অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। বিষয়গুলো অনেক সময় আমাদের নজর এড়িয়ে গেলেও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আগের তুলনায় বেড়েছে। যদিও একাধিক সমীক্ষা বা গবেষণা ভিন্নমত পোষণ করছে। যেহেতু তাদের জরিপের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা পুরোপুরি পরিচিত হতে পারিনি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণের সংখ্যা নিয়ে চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাবা প্রয়োজন নারীর শ্রমের মজুরি এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার কথা। নারীর মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা আগেও পর্যাপ্ত ছিল না, এখনও নেই। এর পেছনে অবশ্যই কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আবার এও সত্য, নারীর অংশগ্রহণকে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি না। নারীর কর্মসংস্থান বাড়ছে। সময়ের তাগিদে বিভিন্ন খাতে কিংবা প্রতিষ্ঠানে নতুন পদ তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় লক্ষ করা যায়, নারীর জন্য যে পদ তৈরি হয় তা হয়ে থাকে নিম্ন মজুরি ও নিম্নপদস্থ। অনেকে এখনও নারীর কাজের পরিসর হিসেবে ঘরের কাজ, দিনমজুর বা ক্ষেতমজুরিকেই দেখতে অভ্যস্ত। এখানে নারীকে মজুরিবৈষম্যের শিকার হতে হয়। যদি পুরুষ ক্ষেতমজুরের পারিশ্রমিক পাঁচশ হয় তাহলে নারীকে দেওয়া হয়। সাড়ে তিনশ টাকা। এমনটি ঘটার পেছনেও কারণ আছে। যেহেতু নারীর মূল কাজ এখনও ঘরে, তাই বাইরে পরিশ্রমকে এখনও বাড়তি বলেই বিবেচনা করা হয়। আর এই বাড়তি কাজের সুবিধা করে দেওয়ার কথা বলেই নারীর মজুরিতে বৈষম্য করা হচ্ছে। এটি মোটেও ভালো কিছু নয়। বিশেষত অর্থনীতির জন্য তো নয়ই।

কলকারখানা, বিশেষত গার্মেন্টসশিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। এখানেও যে পদবৈষম্য নেই, তা কিন্তু নয়। এখানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে আলাদা কাজে সংযুক্ত করা হয়। সচরাচর প্রযুক্তি কিংবা মেশিনারিজ সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত পদে নারীর নিয়োগ হয় কম। সেখানে পুরুষের চাহিদা থাকে বেশি। আধুনিক সময়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই যান্ত্রিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই যান্ত্রিকীকরণের ফলে ভবিষ্যতে গার্মেন্টসশিল্পেও নারীর কর্মসংস্থান কমে আসার শঙ্কা রয়েছে। আবার এই মুহূর্তে একটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে শ্রমিকের মজুরি এবং গার্মেন্টসশিল্পের অন্য কোনো পদের মজুরির মধ্যে পার্থক্য আছে। ফলে নারীর শ্রমের মূল্যের বিষয়টি আজও আমাদের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হয় না। ফলে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। বৈশ্বিক সংকট ও অন্যান্য সমস্যার কারণেই এমনটা হচ্ছে।

যেমনটা বলেছি, সব প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর দিকেই সবার মনোযোগ বেশি। প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পুরুষের বেশি থাকায় এই কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে যাচ্ছে পুরুষের হাতে। এককালে যেসব কাজে বাড়তি শ্রমের প্রয়োজন হতো সেসব কাজে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হতো। যন্ত্রের আগমনে এখন তার অনেকাংশে প্রয়োজন কমেছে। অর্থাৎ মূল কর্মসংস্থান এখন যন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণই। সেখানে নারীর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাব রয়েছে বলে অনেক জায়গায় নারীর কর্মসংস্থান কমছে। এই দিক বিবেচনায় আমরা বলতে পারি, নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। কিন্তু বাড়ছে না, এমনটিও বলা যাবে না। নারীকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ করে তোলা গেলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।

সামাজিকভাবে ধরে নেওয়া হয় যন্ত্র পরিচালনা নারীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই ধারণা সমাজে বদ্ধমূল হয়ে থাকায় নারীকে ওই প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দেওয়া হয় না। তবে নারীরা বরাবরই নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। হাজারো প্রতিবন্ধকতার মুখে নারী নিজের সুযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে। যেহেতু যন্ত্রনির্ভর শিল্প খাত পুরুষের দখলে, তাই নারীকে অন্য কোনো খাতে অংশ নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই নারী ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে বেশি। নারী উদ্যোক্তা হয়ে নানাভাবে অর্থনীতিতে অবদা রাখছে। এগুলোও অনানুষ্ঠানিক খাতের মধ্যেই পড়ে। কারণ উদ্যোক্তাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতা কম নয়। শ্রমবাজারের অনানুষ্ঠানিক খাতে নারী সীমিত পরিসরে হলেও কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক খাতে এ সুযোগ তার নেই। অথচ নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। গ্রাম কিংবা শহর- এই দুই অঞ্চলেই নারী ব্যবসা বা উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। সেটি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করলে অল্পসংখ্যক নারীই এই খাতে অংশ নিতে পারছে। উদ্যোক্তা হওয়া কিংবা ব্যবসা করার মাধ্যমে মজুরি পাওয়া যায় না। অথচ শ্রম খাতে বিরাট একটি অংশ এখনও নারী। তাদের মজুরির প্রশ্নটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার, যদি নাগরিক জীবনে উন্নতি আনতে হয়। নারীর কাজের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সুযোগ যেন তারা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং কর্মপরিবেশ যেন নারীবান্ধব হয়, তা নিয়ে ভাবা হয়েছে কম। অথচ নারীর জন্য নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

আপাতত নারীর কাজের সুযোগ বাড়লেও তা মজুরির ক্ষেত্রে না। নারী আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছে। ই-কমার্স বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অনেক নারী এখন আয় করছেন। রাজধানী বাদেও জেলা শহরেও নারীরা অংশ নিচ্ছেন। শ্রমের বাজার আধুনিকায়নে বদলে যাওয়ায় নারীকে নানাভাবে ছাঁটাই করা হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে এখনও নারীকে কিছু প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সচরাচর ছোটখাটো প্রযুক্তিপণ্য যেমন মাইক্রোওভেন, স্মার্ট টিভি, কম্পিউটার চালানো- এসব পরিচালনার প্রশিক্ষণই বেশি দেওয়া হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে প্রশিক্ষণের ধরনেরও বদল আনতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি প্রতিবছরই রূপ বদলায়। মানুষকে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে মানুষকে পিছিয়ে পড়তে হয়। অবশ্য সরকারের পরিকল্পনার পেছনে সামাজিক ভাবনার একটি চাপ রয়েছে। সমাজে এখনও যদি এমন ধারণা থাকে, নারী ঘরের কাজ করবে এবং সব দায়-দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি নারী ছোটখাটো প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে দক্ষ হয়ে সংসারেই তা প্রয়োগ করবে, তাহলে প্রশিক্ষণের ধরনও তেমনই থাকবে। একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা চালু করার আগে ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের অবস্থান পর্যালোচনা করা হয় অবশ্যই। তাই নারীকে শ্রম খাতে পর্যাপ্ত মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে সামাজিক সচেতনতা ও মনোভাব বদলের পরিকল্পনায় জোর দিতে হবে।

নগরাঞ্চলে এখনও অনেকের মনে একটি ভুল ধারণা টিকে আছে। অনেকে ভাবেন নারীকে অনেক বেশি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে। শিক্ষা, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এখনও বিভিন্ন কোটা সুবিধা ও আলাদা সুবিধা নারীকে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি নির্দিষ্ট খাত ও সীমিত কয়েকটি পদের ক্ষেত্রে। অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টি টেনে আনলে উল্টোচিত্র দেখতে হবে। পুরোনো ধাঁচের ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পুরো বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। পুরো বিশ্বই এখন আস্তে আস্তে নারীর অংশগ্রহণ এবং তাদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে নারীকে পিছিয়ে থাকতে হবে। নারী যে বৃহদাংশে পিছিয়ে আছে তার প্রমাণ অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানও বলে, কোনো গোষ্ঠী পিছিয়ে থাকলে তাদের অবশ্যই বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় নারীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে আরও বড় পরিসরে ভাবতে হবে। আলোচনা পরিসংখ্যান, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বহুবার হয়েছে। এখন প্রয়োজন পুরো বিষয়টিকে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টি দিয়ে দেখা। তবেই আমাদের কাছে বড় চিত্রটি ভেসে উঠবে। পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনের দিকেও আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে। সমাজে ইতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তনই মূলত নারীর সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করার চাবিকাঠি।


  • সমন্বয়ক, নিজেরা করি
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা