× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ম্যানগ্রোভ রক্ষার বিকল্প নেই

সম্পাদক

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১১:০৭ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে যেখানে ম্যানগ্রোভ রোপণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, আজ তারই বিনাশ দেখছে স্থানীয়রা। উপজেলায় বন বিভাগের মোট আয়তন ১০ হাজার ১৭৭ দশমিক ১১ একর। এর মাঝে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ৩ হাজার ৯৭৮ দশমিক ৩৩ একর। ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি করা হয়েছে চাষের জমি, ঘর-বাড়ি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা, শিল্পপতি ও ভূমিদস্যুদের লোলুপদৃষ্টিতে মাত্র কয়েক বছরে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে এই ম্যানগ্রোভ বনভূমি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ঘনত্ব কমায় প্রাণিকুল ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস করে বিরানভূমিতে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার কলাপাড়ায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে ১২ ইউনিয়নের বনাঞ্চল। অভিযোগের তীর বন-জঙ্গল পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই। তাদের দুর্নীতি ও বন বিনষ্টকারীদের সঙ্গে তাদের সখ্যে বেদখল হচ্ছে ওই এলাকার বনজ সম্পদ। ২০ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কলাপাড়ার বালিয়াতলী খেয়াঘাটসংলগ্ন গোলপাতার বনটি কেটে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। পোটিনকেন্দ্র কুয়াকাটার বিন, তার আবাস হারাচ্ছে। স্থানীয়দের উদ্ধৃত করে জিরো উজাড় করে জমি বানিয়ে চলছে চাষাবাদ। বনের বিভিন্ন স্থানে চাষের জমি তৈরি করে নামে-বেনামে কাগজ করে চলছে কেনাবেচা। বনের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বায়নাসূত্রে জমি কেনার সাইনবোর্ডও। কীভাবে তারা এসব জমির মালিক হলেন- প্রশ্ন স্থানীয়দের। প্রশ্ন আমাদেরও।

দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আর অপরিকল্পিত উন্নয়নে মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভারসাম্য। ‘নিরাপদে নেই সবুজ ম্যানগ্রোভ’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন তারই সাক্ষ্য বহন করে। ১৯৫৭ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়তে লাগানো হয় ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় গাছ। পুরো উপকূল ভরে ওঠে সবুজে, যা হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঢালস্বরূপ। উপজেলার ম্যানগ্রোভ বনে ছিল অজগর, হনুমান, বনবিড়ালসহ অনেক প্রাণী। কিন্তু ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে চাষযোগ্য কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়ায় হাজার হাজার একর বনভূমি এখন শুধুই ভূমি। ভুলে গেলে চলবে না, সুন্দরবন বা আমাদের উপকূলীয় বনাঞ্চল নিছক সৌন্দর্যের আধার নয়, জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার সমুদ্র উপকূলের প্রাকৃতিক রক্ষী। ম্যানগ্রোভ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। অথচ বন ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখাতে আমরা যেভাবে হোটেল, রিসোর্ট তৈরি করছি, বসতি স্থাপন করছি, বনভূমি উজাড় করে কৃষিজমি বাড়াচ্ছি, মাছের ঘের তৈরি করছি, গাছহীন চরাঞ্চলে বসতি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, এতে লাগাম না টানলে, ম্যানগ্রোভ কাটা বন্ধ না হলে অদূরভবিষ্যতে পুরো সুন্দরবনও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ম্যানগ্রোভ নির্দিষ্ট কোনো গাছ নয়। গাছের একটি প্রজাতি। যারা লবণাক্ত পানিতেও জীবন ধারণ করতে পারে। ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণের মধ্য দিয়েই বাঁচবে পরিবেশ ও প্রকৃতি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল প্রাকৃতিক প্রাচীর। সে প্রমাণ আমরা পেয়েছি গত কয়েক বছরে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণী, বুলবুল ও আফানে। একটা সময় পর্যন্ত, প্রায় গড়ে ১০ বছরে একটি বড় মাত্রায় ঘূর্ণিঝড়ের দেখা মিললেও বর্তমানে প্রতিবছরই সাগর থেকে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে হানা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কাটিয়ে উপকূলের মানুষকে রক্ষাকবচ ভাবা হয় ম্যানগ্রোভকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, ম্যানগ্রোভের প্রাচীর তৈরি করেই সামাল দেওয়া সম্ভব প্রলয়ংকরী ঝড়ের ঝাপ্টা। তাই ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তারা বলছেন। কিন্তু আমরাই যেন হাঁটছি উল্টো পথে।

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ম্যানগ্রোভ আমাদের রক্ষাকবচ হয়ে ওঠার পরও কলাপাড়ায় যেভাবে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা বেআইনি। এ ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দখলদারদের কবজা থেকে বনভূমি উদ্ধারের কথা বলি। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় আমরা উপকূলীয় এলাকাজুড়ে শুধু ম্যানগ্রোভের চারা রোপণই নয়, সারা বছরই গুরুত্ব দিয়ে পরিচর্যার কথাও বলি। কোথাও কোনোভাবে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করা হলে প্রশাসনকে কড়া আইনি পদক্ষেপের পথ বেছে নিতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা