× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পাহাড়ে আঁধার কাটুক

সম্পাদক

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ১৩:৪৯ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

পার্বত্যাঞ্চলে তো বটেই, পাশাপাশি কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকাও মানুষের জন্য ক্রমেই কতটা হুমকি হয়ে উঠছে তারই মর্মন্তুদ চিত্র উঠে এসেছে ২৫ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। ‘পাহাড়ে পুলিশ-র‌্যাবের অভিযানে মিলল তিন বন্ধুর মরদেহ’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমাদের অধিকতর উদ্বিগ্ন না করে পারে না। প্রতিবেদনে জানা গেছে, কক্সবাজারের গহিন পাহাড়ে অপহরণকারী চক্রের আস্তানায় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে অর্ধগলিত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। র‌্যাবের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফে গেলে তিন বন্ধুকে বহন করা একটি সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে একদল অপহরণকারী তাদের গহিন জঙ্গলে নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দিতে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় অপহরণকারীরা। ঘটনার পর থেকে অপহৃত তিনজনের পরিবারের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পাহাড়ে আঁধারে সন্ত্রাসীদের স্থান পরিবর্তন করার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম না হলেও পরে প্রযুক্তির সহায়তায় একজন অপহরণকারীকে আটক করতে সক্ষম হন। আটক ওই ব্যক্তির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপহরণের ২৬ দিন পর টেকনাফ পাহাড়ের গহিন জঙ্গল দমদমিয়া থেকে অর্ধগলিত অপহৃত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ইতঃপূর্বে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল পাহাড়ে গত আট মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৭৫ জনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে ৪৩ রোহিঙ্গা ও ৩২ জন স্থানীয় বাসিন্দা। অভিযোগ আছে, পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা দিনে ছদ্মবেশে লোকালয়ে রেকি করে। তারপর তারা ছক কষতে থাকে কীভাবে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যায়। পাশাপাশি এও অভিযোগ আছে, ইতঃপূর্বে অপহরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করলেও অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামিদের কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেন। তাদের দাবি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং শিগগিরই পাহাড়ে অভিযান চালানো হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দাবি মোতাবেক কঠোর নজরদারিতে পাহাড়ি জনপদ যদি থেকেই থাকে তাহলে কী করে একের পর এক অপহরণসহ জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে?

ইতঃপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এও উঠে এসেছিল, পাহাড়ের আঁধারে জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছে এবং অস্ত্রভান্ডার গড়ে তুলছে। আমাদের স্মরণে আছে, কিছুদিন আগে বান্দরবানের পাহাড়ে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কয়েক জঙ্গিকে আটক করেছিলেন। বান্দরবানে সেনা সদস্যদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলায় হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনা দূর অতীতের বিষয় নয়। একের পর এক সংঘটিত ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে, পাহাড়ি এলাকা যেন সন্ত্রাসী কিংবা সমাজবিরোধীদের চারণভূমি হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকাও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ওই সব এলাকায় সমাজবিরোধীরা চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, মাদক কারবারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতেও লিপ্ত হচ্ছে। কক্সবাজারের টেকনাফসহ আশপাশের এলাকায় রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডও উদ্বেগের বাড়তি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশ্রিত বিপথগামী রোহিঙ্গারা জননিরাপত্তার জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। টেকনাফে অপহৃত তিনজনকে খুন করে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু আমরা মনে করি, উল্লিখিত কোনো গ্রুপকেই সন্দেহের বাইরে রাখা সমীচীন হবে না।

আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ-র‌্যাবসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সন্ত্রাসীরা তাদের তীক্ষ্ন দৃষ্টি এড়িয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড তো বটেই, মানুষ হত্যার মতো ঘটনাও নির্বিবাদে ঘটিয়ে চলেছে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির পর সঙ্গতই প্রত্যাশা ছিল পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইবে। কিন্তু তা হয়নি। পাহাড়ি এলাকায় কঠোর নজরদারির পরও কী করে অপরাধের জাল ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে, এর জন্য নজর দিতে হবে উৎসে। আমরা এও মনে করি, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দরকার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। টেকনাফসহ পার্বত্য এলাকায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে সাঁড়াশি অভিযানের বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা