প্রেক্ষাপট
শিবরঞ্জন দত্ত
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১০:৫৩ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
ধ্যান বিষয়ে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। তবে আশার কথা,
ধীরে ধীরে সবার মাঝেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে ধ্যান হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। অথচ ধ্যান বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় আমরা অনেকেই এ বিষয়ে জানতে নানান ব্যক্তি বা সংগঠনের দারস্থ হই। অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও ধ্যান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তবে তা এসব প্রচেষ্টাকে ধ্যান নয়,
বরং এটিকে ধ্যানের পূর্বাবস্থা বলা যেতে পারে। অনেকে ধ্যান বিষয়ে পরিচালিত নানান বাণিজ্যিক কার্যক্রম দেখে,
ধ্যানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ উন্নত বিশ্বে ধ্যানের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং রয়েছে পর্যাপ্ত বই। ধ্যানের সম্ভাবনা এখনও আমাদের সামনে ভালোভাবে উন্মোচিত হয়নি।
ধ্যান শব্দটির আভিধানিক অর্থ নিরাময়,
রোগমুক্ত বা উপশম করা। আবেগী ও মানসিক রোগ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা ধ্যানের রয়েছে। ধ্যান বলতে বোঝায় গভীরভাবে চিন্তা করা,
চিন্তার যত্নশীল বিবেচনা,
নিবিষ্টভাবে অবলোকন,
নিরীক্ষণ করে দেখা,
স্মৃতি,
একাগ্রচিত্তে কোনো বিষয়ে চিন্তা করা,
মাথা ঘামানো,
বিবেচনা করা,
তন্ময় হয়ে ভাবা,
মনের ব্যায়াম,
সমাধানে পৌঁছানোর উপায়,
মস্তিষ্কের ক্রিয়া সুস্থিত করা,
দূরকল্পনা করা,
গবেষণা করা,
পূর্ব বিবেচনা করা,
পূর্ব চিন্তা করা,
অন্তভীক্ষণ
(অন্তরাবলোকন)
করা,
ভবিষ্যদ্বাণী করা,
মনের পরিকল্পনা করা,
মনে মনে নাড়াচাড়া করা ইত্যাদি। মন নিয়ে সুস্থির চর্চার এই প্রক্রিয়ার জন্য ধ্যানে একজন দিকনির্দেশক প্রয়োজন হয়। ধ্যানবিষয়ক বই বা প্রতিষ্ঠানের কাজ এই কাজে সাহায্য করা। জিমে যেমন একজন নির্দেশক থাকেন,
তেমনি ধ্যানের কাজেও নির্দেশক প্রয়োজন। ধ্যানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজেকে বোঝার মানসিক প্রশিক্ষণ পান। নিজের মানসিক শান্তি অর্জনের জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালান। অর্থাৎ যোগব্যায়াম যেভাবে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অর্জনের সহজ পথ দেখায়,
তেমনি ধ্যান কাজ করে মন নিয়ে। ফলে অনেকেই ধ্যানের বদলে যোগব্যায়ামকে গুরুত্ব দেন। এজন্য দায়ী ধ্যান প্রশিক্ষণ বা প্রচেষ্টা বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকা। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা প্রায়ই মানসিক আনন্দ বা পরিতৃপ্তি পাওয়ার পথ খুঁজে পাই না। ধ্যান আমাদের সে সুযোগ দেয়। ধ্যান করলে আমরা নতুন কোনো গুণ অর্জন করতে পারব এমনটি বলা যাবে না। তবে ধ্যানের মাধ্যমে মানুষ তার অন্তর্লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন।
ধ্যানের গুরুত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই আলোচনা করছেন। গত বছর এক আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন,
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন চর্চার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দৈহিক,
মানসিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ ও সবল করে তোলা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের দক্ষ,
যোগ্য,
মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
কিন্তু এখনও ধ্যান বিষয়ে আমাদের পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠান নেই। এ ক্ষেত্রে বইয়েরও অভাব রয়েছে। ধ্যানবিষয়ক আধুনিক বই ও ধ্যানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে এ বিষয়ে বইয়ের প্রকাশনা জরুরি। পাশাপাশি ধ্যান প্রচেষ্টা বা ধ্যানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে,
ধ্যান প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং আরও মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার সেবামূলক কাজও অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। বিশেষত মানসিক দৈন্যের এই সময়ে এমন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব হেলাফেলার সুযোগ নেই।