× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপসম্পাদকীয়

কমিউনিটি ক্লিনিকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১১:০০ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

দেশের প্রায় প্রতিটি খাতের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাত বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে গণমাধ্যম সূত্রমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে মৌলিক চিকিৎসাচাহিদা পূরণ, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রণ-নির্মূল, অসংক্রামক রোগসমূহের ব্যবস্থাপনা প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সূচকসমূহের বিপুল অগ্রগতিতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব অর্জন বাংলাদেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে উপজেলা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুযোগসুবিধা বাড়ানো হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যানসার, নিউরো, চক্ষু, বার্ন, নাক-কান-গলাসহ বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট হাসপাতাল স্থাপন অব্যাহত রয়েছে প্রতিটি জেলায় ন্যূনতম একটি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে বর্তমান সরকার দেশে ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে

১৭ মে ২০২৩ জাতিসংঘ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকেদ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভহিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবার মডেলরূপে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের এই বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাব জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বৈশ্বিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেল এটি নিশ্চয়ই সরকারের বড় অর্জন এই অর্জন যেন কারো অবহেলায় ম্লান না হয় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রেজুলেশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন

বঙ্গবন্ধুর তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্নের সফল সার্থক বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে অভিনব ধারণায় অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেন, যা ইতোমধ্যে দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে ১৪ হাজার ৪৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়েনের গিমাডাঙ্গা গ্রামে ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের মধ্যেই নির্মিত ১০ হাজার ৭২৩টি অবকাঠামো থেকে প্রায় হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সচল করা হয়

দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনে রাজনৈতিক গতিধারায় জনকল্যাণকর এই সফল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ২০০৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল ফলে ক্লিনিকের মূল্যবান চিকিৎসাসামগ্রীসহ ভবনগুলো পরিত্যক্ত-নষ্ট হয়ে যায় ২০০৯ সালে পুনরায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আবার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করা হয় ওই সময় বছর মেয়াদি প্রকল্পে ১৩ হাজার ৫শ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার-সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয় পরিত্যক্ত-ব্যবহার অনুপযোগী ভবনগুলো সংস্কার নতুন নতুন ভবন নির্মাণে দ্রুততর সময়ের মধ্যে ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বর্তমানে ১৪ হাজার ২শটি ক্লিনিক চালু আছেশেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণস্লোগানে পরিচালিত এসব ক্লিনিকে বিনামূল্যে প্রাথমিকভাবে সব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় ক্লিনিকগুলোতে প্রদত্ত সেবার মধ্যে আছেÑ সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় গর্ভবতী মাহিলাদের প্রসবপূর্ব এবং পরবর্তী সেবা, যক্ষ্মা-ডিফথেরিয়া-হুপিং কফ-পোলিও-ধনুষ্টংকার-হাম-হেপাটাইটিস বি, নিউমোনিয়াসহ ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধক এবং শিশু কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা তাছাড়া মহিলা শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণ, ম্যালেরিয়া-যক্ষ্মা-কুষ্ঠ-কালাজ্বর-ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা-চিকিৎসা সুবিধা, সাধারণ জখম-জ্বর-ব্যথা-কাটা-পোড়া-দংশন-বিষক্রিয়া-হাঁপানি-চর্মরোগ-ক্রিমি এবং চোখ-দাঁত-কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা, অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ-বিতরণ, জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদানপূর্বক রেফার করা ইত্যাদি প্রারম্ভিক সময়ে ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে দেশের প্রায় হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবসেবা দেওয়া হচ্ছে

অসচ্ছল দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগীরা বিনামূল্যে ইনসুলিনসহ প্রায় ৩২ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে ক্লিনিকে প্রতিবছর লাখ ৭০ হাজার টাকারও বেশি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে চলতি অর্থবছরে ওষুধ স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রী বাবদ বছরভিত্তিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২৪১ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে বিনামূল্যে সেবা সহজ করার জন্য কর্মরত সব সিএইচসিপিকে দেওয়া হয়েছে ল্যাপটপ মডেম বর্তমানে সব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডিজিটালি অনলাইন রিপোর্টিং এবং মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সিসি কর্ম এলাকায় অবস্থানরত খানার প্রত্যেক সদস্যের ডিজিটালি হেলথ ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে পর্যন্ত ১১ লাখ গ্রামীণ জনগণকে হেলথ আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে বিগত জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোতে মোট ভিজিট হয়েছে ১০ কোটি ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭২৯টি ১০ কোটিও বেশি মানুষ পেয়েছে বিনামূল্যের এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিদিন প্রতিটি ক্লিনিকে ৭০ থেকে ৮০ জনেরও বেশি রোগি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে, যার ৮০ শতাংশই নারী শিশু পর্যন্ত কোটি ৭০ লাখেরও বেশি রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে জরুরি জটিলতার কারণে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা প্রবর্তন করেন মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তৎকালীন মহকুমা থানাপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অর্জিত সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ এবং স্বাস্থ্য খাতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এমডিজি, সাউথ-সাউথ, গ্যাভি ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কারের মতো অনেক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য

এতসব প্রশংসনীয় উদ্যোগের ফলে চলমান স্বাস্থ্য কার্যক্রম সম্পর্কে গণমাধ্যমে অনেক সময় নেতিবাচক কিছু বিষয় উঠে আসে সময়মতো ডাক্তার-প্যারামেডিকস বা সেবাদানকারীর উপস্থিত না থাকার অভিযোগ পুরোনো জেলা-উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিয়মিত তদারকির ক্ষেত্রে অবজ্ঞা-অবহেলা স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে কোনো ধরনের নোটিশ বা অবহিতকরণ প্রক্রিয়া চালু না রেখে দীর্ঘসময় ধরে সেবা কার্যক্রম থেকে সেবা প্রার্থীদের বঞ্চিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

 

  •  শিক্ষাবিদসাবেক উপাচার্যচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা