সম্পাদকীয়
সম্পাদক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১১:১০ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
সমাজে
যখন মূল্যবোধের ধ্স, কারও কারও
চেতনাবিনাশী কর্মকাণ্ড অনেকের
মনে দুর্ভাবনার রেখাপাত
করেছে তখন আশি বছরের বৃদ্ধ
খোরশেদ আলী মহান
মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারীদের স্মৃতির
প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
রেখে যে অনন্য
উদ্যোগ নিয়েছেন,
তা আমাদের আবেগাপ্লুত
না করে পারে
না। ‘শহীদ স্মরণে
৫২ হাজার তালগাছ’ শিরোনামে প্রতিদিনের
বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত
সচিত্র প্রতিবেদনটি অনেকের
চেতনাই শানিত করবে। প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে,
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার
চিলারং ইউনিয়নের রাস্তার
দুই পাশে নিজ অর্থে তালগাছ
রোপণ করেছেন পল্লীচিকিৎসক
খোরশেদ আলী। ইউনিয়নের
আটটি রাস্তার পাশে
এ পর্যন্ত ৫২ হাজার তালগাছ
রোপণ করেছেন তিনি। গাছগুলোর
পরিচর্যাও করছেন নিজেই। খোরশেদ
আলীর লক্ষ্য এলাকায়
১ লাখ তালগাছ
রোপণ করবেন।
পাহাড়ভাঙা
গ্রামের এই কৃষক
ও পল্লীচিকিৎসকের আয়ের
উৎস নির্দিষ্ট। কিছু
কৃষিজমি চাষাবাদ ও চিকিৎসার মাধ্যমে
অর্জিত অর্থ দিয়ে
চলে তাঁর ১২ জনের সংসার। তিনি
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদককে
জানান, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে
যাদের আত্মত্যাগের জন্য
আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেসব বীর শহীদের আত্মার
শান্তি কামনায় তালগাছ
রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। একই সঙ্গে মানুষ
যেন বজ্রপাত থেকে
রক্ষা পায় তাই ইউনিয়নের আটটি
রাস্তার পাশ ধরে তালগাছ রোপণ
করছি।’ আমরা এই বৃদ্ধের কর্মপরিকল্পনা
ও অনন্য উদ্যোগকে
সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি
গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ
করি মহান মুক্তিযুদ্ধে
আত্মদানকারী সব শহীদকে। আমরা
মনে করি,
বৃদ্ধ খোরশেদ আলীর
এ উদ্যোগ অনন্য
দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রজন্মের
সামনে থাকবে। খোরশেদ
আলী যে চেতনার
আলোকে এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন
তা প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার
আলো প্রজ্বলিত রাখতেও
বড় সহায়ক শক্তি
হিসেবে কাজ করবে।
মুক্তিযুদ্ধের
চেতনাই প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সম্পাদকীয়
নীতির ভিত্তি। পাকিস্তান
রাষ্ট্রের ভেতরে জিইয়ে
থাকা সাম্প্রদায়িকতা,
বৈষম্য, তথাকথিত গণতন্ত্রের
বিরুদ্ধে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের ডাকে ও নেতৃত্বে ১৯৭১
সালে বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়তে অনিবার্য
করে তুলেছিল। এই চেতনাই আমাদের
সাংবাদিকতা-চর্চারও ভিত্তি। আমরা
বিশ্বাস করি,
এ চেতনা চর্চার
মধ্যেই রয়েছে আমাদের
উন্নয়ন ও নাগরিক
অধিকারের পরিপূর্ণতা লাভের
মোক্ষম শক্তি। স্বাধীনতা
অর্জনের পর আমরা
ইতোমধ্যে ৫২ বছর অতিক্রম করে এসেছি। দীর্ঘ
এই সময়ে আমাদের
উন্নয়ন-অগ্রগতি নিঃসন্দেহে
কম হয়নি। কিন্তু
দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
আঘাতকারী অপশক্তি এখনও
সক্রিয়। প্রজন্মের মনে বিভ্রান্তির জাল ছড়িয়ে দিতে
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
বিকৃত করার মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের
চক্রান্ত এখনও চলে। আমরা
জানি, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ-মূল্যবোধ ধারণ
করে। রাজনীতি থেকে
শুরু করে সমাজের
বিভিন্ন স্তরে যখন কদাচারের ছায়া
ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে, তখন একজন
খোরশেদ আলীর এমন উদ্যোগ প্রজন্মের
কাছে উজ্জীবনশক্তি সঞ্চারক
বলেও আমরা মনে করি। প্রতিদিনের
বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও যুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের
প্রতি খোরশেদ আলীর
যে কর্মঅধ্যায় উঠে এসেছে,
তা সমাজের আরও অনেককেই অনুপ্রাণিত
করবে বলে আমরা
বিশ্বাস করি। তিনি
যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে
তাঁর কর্মযজ্ঞে নিরলস
তা সবারই গভীরভাবে
আত্মস্থ করা জরুরি। উচ্চারণসর্বস্ব
অঙ্গীকার আর হৃদয়ের
ভেতর থেকে উঠে আসা ইচ্ছার
প্রতিফলনের বাস্তবায়ন যে এক নয়, তাও এই বৃদ্ধ দেখিয়ে
দিয়েছেন। তাঁর রোপিত
তালগাছগুলো রক্ষার দায়িত্ব
সবার।
সংবাদমাধ্যমে
আমরা এও দেখছি, দেশে সংরক্ষিত
ও সামাজিক বনায়নে
বৃক্ষখেকোদের থাবা চলছেই। ক্ষমতাবান
কেউ কেউ একে পুঁজি করে ‘আঙুল ফুলে
কলাগাছ’ হয়েছেন এমন নজিরও আছে। আমরা
জানি, দেশে বৃক্ষপ্রেমীর
সংখ্যাও কম নয়। শুধু
পরিবেশ রক্ষাই নয়, প্রকৃতির রুদ্ররোষ
থেকে বাঁচার জন্যও
বৃক্ষ অপরিহার্য। পরিবেশবাদীরা
বৃক্ষ রক্ষায় এবং বনায়নে জোর দেওয়ার দাবি
জানিয়ে আসছেন। সরকারেরও
এ ব্যাপারে রয়েছে
বিশেষ উদ্যোগ। কিন্তু
পাহাড়ভাঙ্গা গ্রামের বৃদ্ধ
খোরশেদ আলী যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে
তালগাছ রোপণ এবং পরিচর্যা করে চলেছেন,
তা নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমী
দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করব খোরশেদ
আলী তাঁর কর্মের
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবেন
এবং প্রজন্ম তাঁর
এ দৃষ্টান্ত ধারণ-লালন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
ধারণ করে দৃঢ়ভাবে
এগিয়ে যাবে। অভিনন্দন
খোরশেদ আলী।