পবিত্র ঈদুল আজহা
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২২ ১৬:৪৯ পিএম
ঈদের আনন্দ উঁকি দিক সকলের দুয়ারে
বছর ঘুরে দুয়ারে আত্মত্যাগ ও খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। প্রতিবছর শান্তি, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে এই উৎসব। আগামীকাল রবিবার যথাযথ মর্যাদার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
পবিত্র ঈদুল আজহায় নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করা মুসলমানদের ঐতিহ্য। পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। আসলে কোরবানি দিতে হয় মানুষের সব রিপুকে; কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরীকাতরতা। এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মনের পশুরে কর জবাই,/পশুরাও বাঁচে সবাই।’ কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কোরবানির এই মর্মবাণী আমাদের সব সময় স্মরণে থাকে না, বরং ত্যাগের সাধনার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতা, ভোগবিলাস ও অপচয়। আধ্যাত্মিকতাকে ছাপিয়ে ওঠে বস্তুগত আনুষ্ঠানিকতা।
গত দু'বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যে উদযাপন করতে হয়েছে ঈদুল আজহা। তবে সংক্রমণ একেবারে কমে যাওয়ায় গত ঈদুল ফিতর কেটেছে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে। সবার প্রত্যাশা ছিল একইভাবে কাটবে কোরবানির ঈদও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কভিড সংক্রমণের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মসজিদে নামাজ আদায়ের বিষয়েও আরোপ হয়েছে নানা শর্ত। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক সংক্রমণ এড়াতে এর বিকল্পও নেই।
পবিত্র ঈদুল আজহায় একই দিনে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানির কারণে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। আমাদের উচিত যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার প্রবণতা ত্যাগ করা। কোরবানির পর পশুর রক্ত, মলমূত্র, হাড় ইত্যাদি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা এবং নিজ নিজ লোকালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রেও সততা-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। যেন কোনো ধরনের অসদুপায় বা কারসাজির সুযোগ কেউ না পায়। সেইসঙ্গে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে এ সময় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই এ উৎসব আনন্দমুখর হয়ে উঠবে।
কোরবানির মধ্যে যে উৎসর্গের মহিমা রয়েছে, আজকাল যেন তার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে লোকদেখানো ভোজনের উৎসব। অথচ এ দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ অন্নকষ্টে ভোগে, অনেক শিশু অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধির শিকার। অনেক মানুষের মাথার ওপর আচ্ছাদন নেই। তারা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, শীতে কষ্ট পায়। এবার ঈদুল আজহার সময় এ দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কাটাচ্ছেন বন্যাজনিত পরিস্থিতির মধ্যে। এই সময় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে, তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সামর্থ্যবানদের একান্ত কর্তব্য। ঈদুল আযহা আমাদের জন্যে আত্মত্যাগের বার্তা বয়ে আনে, এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।
পবিত্র ঈদুল আজহার ভোরের সূর্য ধনী-গরিব সকলের জন্য বয়ে আনুক আনন্দ বার্তা। বয়ে আনুক বিদ্বেষমুক্ত সমাজ ও সাম্যের বার্তা।