× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল

ন্যাটোর আগ্রহের নেপথ্য

গোরানা জর্জিক

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩ ০৬:১৯ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনার পর ন্যাটোর অধিবেশন ও সম্মেলন বাড়তে শুরু করেছে। ১১ জুলাই থেকে লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে আলোচনার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো ভবিষ্যতে সামরিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী করবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তা ছাড়া অস্ত্র সরবরাহে দেরি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাস্টার বোমা সরবরাহের মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে বলেই ধারণা। ন্যাটো অবশ্যই ইউক্রেনকে জোটের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে বরাবরই আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু চলমান যুদ্ধের কারণে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছে। অবশ্যই নিরাপত্তা বিষয়ে ন্যাটো আলোচনা করবে। তবে এই সম্মেলনে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি ন্যাটোর আগ্রহ সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

ন্যাটোর এই সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এন্থনি আলবানেজ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইউলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। টানা দুই বছর এই চার এশিয়ান নেতা ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং অবশ্য এই জোটের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না। এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো টোকিওতে ন্যাটোর লিয়াসন অফিস খোলার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন। ন্যাটো এই মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বেশি ভাবিত। সঙ্গত কারণেই পৃথিবীর অন্যপ্রান্তের ভূখণ্ড নিয়ে তাদের আগ্রহ নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার একটি জোটের সম্মেলনে এই চার এশিয়ান নেতা কী করছেন? প্রথম কারণ হলো, এই চারটি রাষ্ট্রই ইউক্রেনকে সহযোগিতা বাড়ানো এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তাই নিরাপত্তাবিষয়ক এক কনফারেন্সে এই চার নেতার উপস্থিতি অস্বাভাবিক কিছুই নয়।

সবচেয়ে বড় কথা, ২০২২ সালে ন্যাটোর কৌশলগত ধারণার মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন, তাদের স্বার্থ আদায় এবং এই সম্পর্কের ভূমিকা নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। গত বছর ন্যাটো প্রথম অনুধাবন করতে পারে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং নীতিমালা ন্যাটোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তা ছাড়া চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা পাওয়ায় ন্যাটো অনেকটাই শঙ্কিত। তাদের ধারণা, এই সম্পর্ককে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়মভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে। কাজেই কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ন্যাটোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চলে যেকোনো উন্নয়ন ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে। অর্থাৎ এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অনেক কারণ ন্যাটোর রয়েছে।

পলিসি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই সহযোগিতার পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা বলছে। যদিও অনেকে এ বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন, কিন্তু এই চার রাষ্ট্রই ন্যাটোর সঙ্গে সহযোগিতা প্রকাশের দিকেই এগিয়ে চলেছে। গত বছর মাদ্রিদে ন্যাটোর সম্মেলনে জোটের এই চার সহযোগী রাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সহযোগিতা বাড়ানোর একটি সুযোগ পেয়েছে। তখন তারা ন্যাটোকে ভবিষ্যতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যয়ও জানিয়েছিল। ভিলনিয়াস সম্মেলন অবশ্যই এই সহযোগিতার স্বরূপ আমাদের সামনে উন্মোচন করবে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। টোকিও ও কানরেরা ন্যাটোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ইনডিভিজুয়ালি টেইলরড পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম (আইটিপিপি) বলে অভিহিত করছে। ন্যাটো ব্লকের সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে। এই সহযোগিতার ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। ন্যাটোর সঙ্গে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এই সহযোগিতা মূলত বৈশ্বিক নানা সংকট অর্থাৎ নিরাপত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, জলবায়ু পরিবর্তন, মহাকাশ অভিযান, সমুদ্র নিরাপত্তা, নতুন প্রযুক্তি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ন্যাটো এবং তাদের নতুন চার সহযোগী রাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতায় আরও বিস্তৃত করবে। ফলে সামরিক জ্ঞান বিষয়ে আরও গভীর ধারণা তৈরি হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময় কেন এই সহযোগিতা। এই সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার পথ গড়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে কোয়াড ও আউকুসের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয় রয়েছে। এই সহযোগিতাকে আমরা ঐতিহাসিক মাত্রা থেকেও দেখতে পারি। গত কয়েক দশকে ন্যাটো পুরো বিশ্বেই তাদের ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অতীতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তারা নিরাপত্তা অভিযানে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ১৯৯০-এর দিকে বলকান এবং ২০০০-এর দিকে আফগানিস্তান অভিযানের কথা উল্লেখ করতে হয়।

এই মুহূর্তে তারা মূলত রাশিয়া ও চীনকে নতুন প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করছে। তার মানে এই নয় যে, ন্যাটোর সামরিক শক্তি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থায়ী হবে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী শক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া-চীন সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের আরও কৌশলী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য থেকে শুরু করে সমুদ্রসীমা নিয়েও তাদের ভাবতে হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিংবা চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এই সম্পর্ককে ভালো চোখে দেখবেন না- এটাই স্বাভাবিক। চীনও টোকিওতে ন্যাটোর লিয়াসন অফিস গড়ার বিষয়টিতে সমালোচনা করেছে। চীন ও রাশিয়া সম্ভবত এই চার রাষ্ট্রেরই আলাদা স্বার্থ দেখতে পাচ্ছে। তাদের আলাদা স্বার্থ থাকতেই পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা একটি বিষয়ে অবশ্যই একমত হবে। চীন-রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতার ময়দান আরও বিস্তৃত হোক- এমনটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

  • প্রভাষক, সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য কনভার্সেশন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা