× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলবায়ু পরিবর্তন

ইউরোপের দাবদাহের নেপথ্যে

এমা হিল ও বেন ভিভিয়ান

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম

ইউরোপের দাবদাহের নেপথ্যে

ইউরোপজুড়ে বইছে দাবদাহ। বিশেষত ইতালিতে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ২০২১ সালে ইতালির সিসিলিতে ছিল ৪৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ধারণা করা হচ্ছে, এই মাত্রাও এবার পেরিয়ে যাবে। ফ্রান্স, স্পেন, পোল্যান্ড, গ্রিসসহ দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ স্থানেই ভয়াবহ গরম। ভয়াবহ এই গরম অনেকেরই ভ্রমণ পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। দাবদাহ হলে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তীব্র গরম বাতাস বইতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতি ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। অতীতে ইউরোপে এমন ভয়াবহ দাবদাহের অসংখ্য নজির রয়েছে। ২০০৩ সালের দাবদাহে সমগ্র ইউরোপে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তারপরের দাবদাহ অনুভূত হয় ২০২২ সালে। তখন ইউরোপে ৬২ হাজার মানুষ মারা যায়।

এখন ইউরোপে যে দাবদাহ চলছে তার নেপথ্যে সারবেরাস নামক অ্যান্টিসাইক্লোনকে দায়ী করা হচ্ছে। গ্রিক পুরাণে তিন মাথাওয়ালা রাক্ষুসে কুকুর সারবেরাসের নামানুসারে অ্যান্টিসাইক্লোনটির নাম রাখা হয়। অ্যান্টিসাইক্লোন বলতে আসলে কী বোঝায়? এটি উচ্চ চাপযুক্ত দুর্যোগ। ভূতাত্ত্বিক বিবেচনায় এটি স্বাভাবিক ঘটনা। বায়ুমণ্ডলের চারপাশের বাতাস কমে যাওয়ায় নির্দিষ্ট অঞ্চলে শুষ্ক আবহাওয়া তৈরি হয়। এই শুষ্ক আবহাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাতাস না থাকায় আকাশে মেঘ জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হয়। উচ্চ চাপযুক্ত এরকম দুর্যোগ খুব ধীরগতিতে এগিয়ে চলে। এমন দুর্যোগ কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত নির্দিষ্ট এলাকায় স্থায়ী হয়। আবার অনেক সময় এই দুর্যোগ বা পরিবেশগত অবস্থা বিশাল-বিস্তৃত এলাকায় অনেকটা স্থায়ী আকার ধারণ করে। সাহারার মতো উষ্ণ অঞ্চলে এমন প্রাকৃতিক ঘটনা সংঘটিত হলে আরও বেশি তাপমাত্রা বিকিরণ করতে শুরু করে। সাহারার মতো অঞ্চল এমনিতেই গরম। তার ওপর এমন তীব্র গরমে সাইক্লোন গড়ে ওঠা মানে চারপাশে আরও বেশি গরম ছড়িয়ে পড়বে। তবে আস্তে আস্তে হলেও অ্যান্টিসাইক্লোন দুর্বল হয়ে উঠবে এবং দাবদাহ শেষ হবে। ইতালির ম্যাটেওরোলজিক্যাল সোসাইটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সারবেরাস নামক এই দাবদাহ দুই সপ্তাহের জন্য স্থায়ী হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এমন হাই প্রেশার সিস্টেমের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা দায়ী। ইউরোপ বাদেও দাবদাহ উত্তরের দিকে ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট ঘটনা থেকে আমরা অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের পুরো দৃশ্যচিত্র কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু দাবদাহের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ঠিকই অনুমান করে নিতে পারি। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুমণ্ডলের আবর্তনচক্রও নানাভাবে প্রভাবিত হয়। আর এই অস্বাভাবিকতার ফলে অতিরিক্ত গরম এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইউরোপে দেখা যাচ্ছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের গবেষণাও এই ধারণাকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণে ১৯৫০ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ প্রাকৃতিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং তীব্রতার তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া ইউরোপে পরিচালিত একাধিক গবেষণায় দাবদাহের পৌনঃপুনিকতা ও তীব্রতার নেতিবাচক প্রভাবও পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ইউরোপে ভয়াবহ তাপমাত্রা মানুষকে চরম ভোগান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। সচরাচর ওই সময়ে যেমন গরম অনুভূত হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালির দৈনিক গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, অস্বাভাবিক গরম জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। অনেকের ধারণা এমন অস্বাভাবিকতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। চলতি বছরেই এই দুর্যোগের মাত্রা কেমন হতে পারে তা অনেকেই ধারণা করতে পারছেন না।

দাবদাহ ও মাত্রাতিরিক্ত গরম মানবশরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হিটস্ট্রোক, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত গরমে পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে বিপাক ও হজমক্রিয়া ব্যাহত হয়। তীব্র গরমে শারীরিক অসুবিধা সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা গেছে। স্পেন ও ইতালিতে ইতোমধ্যে অনেকেরই স্বাস্থ্য সমস্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি তীব্র গরমের মধ্যে ইতালির একজন শ্রমিক গরমে মারা গেছেন। স্পেন ও ইতালিতে গরমে মারা যাওয়ার একাধিক খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাগরিকদের খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে আসার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। বিশেষত দিনের সবচেয়ে গরম সময় অর্থাৎ দুপুরে সবাই যেন পারতপক্ষে ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করে সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ব্যক্তিপর্যায়েই দাবদাহের নেতিবাচক প্রভাব সীমাবদ্ধ নয়। আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটেও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তীব্র গরমে সড়কপথ নষ্ট হতে পারে এমনকি রেললাইন বেঁকে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ায়। দাবদাহের ফলে সুপেয় পানির সংকট বাড়ে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়, কৃষিতে সেঁচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। ২০২২ সালে ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেনি। কারণ পার্শ্ববর্তী নদীর ওপর বায়ুমণ্ডলের বাতাস প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল। আর পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ঠান্ডা হওয়ায় পর্যাপ্ত বাতাস পায় না। একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, অত্যধিক গরমে ইউরোপের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত এক দশকে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত গরমের সরাসরি প্রভাব রয়েছে।

ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যত বাড়বে দাবদাহ তত ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেই হবে। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা যদি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ একেবারে বন্ধ করতেও পারি, তার পরও ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়বে। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ ইতোমধ্যে তাপমাত্রা শুষে নিয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে ধীরগতির করে তুলতে পারি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করবেই। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনকে শ্লথ করে দেওয়ার মধ্যেই মঙ্গল।

  • লেখকদ্বয় যথাক্রমে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

. দ্য কনভার্সেশন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত। অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা