× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজনৈতিক কর্মসূচি

জননিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া অনুচিত

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২৮ পিএম

জননিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া অনুচিত

অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সংকট যখন ঘনীভূত হতে শুরু করে তখন নানা অশুভ শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। উগ্রবাদী, জঙ্গি কিংবা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অভিযোগ আছে, এই তৎপরতা চালাতে আড়ালে-আবডালে মদদ দেয় কিছু রাজনৈতিক শক্তি। বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট থেকে সহিংসতার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। আরও অভিযোগ আছে, বিরোধী দলগুলো ক্ষমতায় আসার জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাচ্ছে তা অনেকটা বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রূপ নিলে বিদেশিরাও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পান। দেশে বিভাজনের রাজনীতি অনেক দিন ধরেই বিদ্যমান। এই বিভাজনের রাজনীতি মূলত মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীপক্ষ তারা জানে সবদিক বিবেচনায় তাদের পক্ষে ক্ষমতায় আসা কঠিন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির প্রেক্ষাপট যদি বিবেচনা করি তাহলে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীপক্ষের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। এই আশঙ্কা থেকে তারা রাজনৈতিক পরিকল্পনা বদলের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ আছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে যদি কোনোভাবে সংঘাতময় করে তোলা যায় তবে তারা হয়তো রাজনৈতিক অপকৌশলে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে এমনটিই অনেকের ধারণা। যখন সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন হস্তক্ষেপের সুযোগ বিদেশিদের জন্যও উন্মুক্ত হয়। এখন পর্যন্ত দেশের প্রধান দুই দল শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। রাজনীতির মাঠে তারা পাশাপাশি অবস্থানেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে এবং কোনো সংঘাত ছাড়াই তারা নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজন করে। কিন্তু ২৯ জুলাই রাজধানীতে প্রবেশমুখ অবরোধ কর্মসূচিতে আমরা সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার অপপ্রবণতা দেখতে পাই। সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার এই অপপ্রবণতা ভবিষ্যতে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই মুহূর্তে শুধু বিরোধী দলকেই সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার মূল হোতা না ভেবে আড়ালে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে কি-না তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।

দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো কোনো রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চার করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিন্তু এবার তারা নিজেদের সমর্থন ও শক্তিমত্তা দেখাতে পেরেছে। তবে প্রথম থেকেই অনেকের আশঙ্কা ছিল, এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত সহিংসতার দিকে এগিয়ে যায় কি না। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা কিংবা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় তারা একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। জনজীবনে ভোগান্তি তৈরি না করে যেন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই কাম্য। মানুষ যেন ভোটাধিকারসহ সব অধিকার ভোগ করতে পারে বাধাহীনভাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবেÑ এই প্রত্যাশা সবার। সমস্যা হলো, রাজনীতিতে কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সাধনের পথ সরল না হলে তারা নির্বাচনের বাইরের পথ অনুসরণ করবে। এই পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে যে অনেকে নিয়েছেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকের কাছে তা-ই প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনীতি নির্বাচনমুখী না হয়ে ক্রমেই সংঘাতমুখী হয়ে উঠছে। ক্ষমতারোহণের ক্ষেত্রে নির্বাচনই রাজনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। ৩০ জুলাই চট্টগ্রামে একটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচন হচ্ছে এই সম্পর্কে যেন অনেকের আগ্রহই ছিল না। যেকোনো নির্বাচনই গণতান্ত্রিক চর্চাকারী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শক্তির প্রধান লক্ষ্য। রাজনৈতিক সংকটে একটি বিষয়ই ফিরে ফিরে দেখা দেয় এবং তা হলো, নির্বাচনের বাইরের পথ অনুসরণ করে ক্ষমতারোহণের ইচ্ছার প্রকাশ। এই পথ অনুসরণ করতে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। আমরা দেখছি, জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে এবং অর্থনীতির গতিও শ্লথ হতে শুরু করেছে।

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক শক্তির মোকাবিলা রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের জানমালের হেফাজত করবে এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলো যেন কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না করে, সেজন্য কঠোর নজরদারিও রাখবে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে  আমরা দেখছি, তাদের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ তৈরি করতে পান। রাজনৈতিক সংকটের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী অবস্থান নেবে তা নির্ধারিত না হলেও কিছু বিদেশি শক্তি এ ব্যাপারে কৌশলে ভীতি ছড়াচ্ছে—এই অভিযোগও উড়িয়ে দেয়া যাবে না। মার্কিন ভিসানীতি বা বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা মূলত এই ভীতি ছড়ানোর প্রক্রিয়ারই অংশ, এত অনেকের অভিমত। অনেক সময় কোনো কোনো বিদেশির বক্তব্যে মনে হয়, তারা সংঘাত কমানোর জন্য এমনটি করছেন তা নয়, বরং সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার জন্যই তারা নানাভাবে উসকানি দিচ্ছেন। রাজনৈতিক শক্তিকে প্রশাসন দিয়ে মোকাবিলা করার চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে যুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সূত্র অনুসরণ করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে অন্য রাজনৈতিক শক্তি। তবে প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু দায় তো রয়েছেই। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালনে তাদের নিষ্ঠ হতেই হবে। যখন জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয় তখন স্বভাবতই জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রশক্তিকে পদক্ষেপ নিতে হবেই।

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিক কৌশল ও শক্তি দিয়ে। এই প্রক্রিয়ায় যখন রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ, উদারতা, সহিষ্ণুতা থাকবে তখন সহিংসতা অনেকাংশে কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের কোনো সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ডে সংঘাতের উসকানি থাকে এমন কিছু করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও যথেষ্ট দায় রয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জনগণই যেহেতু সব ক্ষমতার উৎস, তাই জনগণকে আস্থায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থা অর্জন করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল যখন জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারে তখন তার রাজনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে নির্বাচনে। কিন্তু রাজনৈতিক দল সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে জনগণবিমুখ হয়ে পড়ে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথও কণ্টকাকীর্ণ হয়ে ওঠে। আমরা আশা করব, দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবেই সংঘাত সৃষ্টি হয় এমন কোনো রাজনৈতিক কৌশল কেউই অবলম্বন করবে না।

বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে এবং অনেক সময় তাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নাগরিকরা যেন কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত। অর্থাৎ কেউ আইনভঙ্গ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় যদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে উঠবে, এটিই তো স্বাভাবিক। এজন্যই অধিকাংশ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যায়। যারাই সহিংসতা কিংবা সংঘাত উসকে দেবে তাদের প্রত্যেককে নির্মোহভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতা পরিলক্ষিত হয় এবং যারা সংঘাতে জড়ায়, তাদের কেউ যদি আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলের কর্মী হন তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে এর দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আর এই দায় চাপানোর ফলে কারো কারোর মনে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। এই বিষয়টি মূলত ধারণাগত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতমূলক আচরণের বড় সুযোগ রয়েছে, তা কিন্তু নয়। ২৯ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের সহিষ্ণু অবস্থানের ফলে কারোর কারণে যদি জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীকে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য দায়িত্বশীল প্রত্যেকেরই সুনির্দিষ্ট দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল দেশের স্বার্থে পেশিশক্তি ব্যবহার করবে না, বিরোধী দলগুলো সহিংসতা বর্জিত রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্মোহভাবে অপতৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে—এটিই প্রত্যাশা। জননিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করার দায় রাজনীতিকদের। আমরা চাই, রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরুক এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো অহিংসভাবে তাদের অধিকার আদায় করুক। জনগণকে আতংকগ্রস্ত করার অধিকার কারোরই নেই। 


  • নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা