প্রেক্ষাপট
মো. হাসান উল বারী
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৪৪ এএম
গাছ উপকারী বন্ধু।
মানব জীবনে গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধনেই নয়,
গাছ পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন
গ্রহণ করি, পক্ষান্তরে গাছ মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ
বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি হিসেবে আমাদের দেশে রয়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বনভূমি
যেটুকু আছে তাও উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানা, শিল্পকেন্দ্র স্থাপন, জ্বালানি, ঘরবাড়ি
নির্মাণ আর প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ফলে। বিশ্বজুড়ে অরণ্য নিধনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে।
বনভূমি উজাড়ে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ। ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে, গলে
যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ এবং বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। আঘাত হানছে জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়,
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ও নদীভাঙন। উপকূলীয় অঞ্চলে লোনা পানির অনুপ্রবেশ
ঘটছে।
১ হেক্টর আয়তনের
ঘন বন বছরে প্রায় ৪ টন ওজনের কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় এবং প্রায় ২ টন বিশুদ্ধ
অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে সরবরাহ করে; যা থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে বনভূমির গুরুত্ব। পরিবেশ
রক্ষায় বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব এত দিনে আমরা সবাই কমবেশি জেনেছি। পৃথিবীর পরিবেশ বাঁচাতে
আরও বৃক্ষরোপণ দরকার। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
টম ক্রওথারের নেতৃত্বে একদল গবেষক জানিয়েছেন, গত কয়েক শতকের লাগামহীন গাছ কাটার পরও
পৃথিবীতে এখনও প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ কোটি গাছ টিকে আছে। তবে গাছের এ সংখ্যা প্রয়োজনের
তুলনায় বেশ কম। এই গবেষকদের মতে, নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধের পাশাপাশি পরিবেশরক্ষায়
বিশ্ববাসীকে আরও অন্তত ১.২ ট্রিলিয়ন গাছ রোপণ করা জরুরি। ১.২ ট্রিলিয়ন মানে ১ লাখ ২০
হাজার কোটি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী কর্মকাণ্ড থেকে
বাদ যায়নি বৃক্ষরোপণের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও। আমরা এখন যা কেবল ভাবতে শুরু
করেছি, তিনি ভেবেছিলেন আরও ৫০ বছর আগে। এ দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি
বৃক্ষরোপণের ওপরই জোর দিয়েছিলেন বেশি। তাঁর এ উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশও ঘটেছিল নানাভাবে।
সদ্যস্বাধীন দেশে তিনি সবাইকে বৃক্ষপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গণভবন, বঙ্গভবন ও বর্তমান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ লাগিয়েছিলেন।
অনেকেই বলেন,
দেশে গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা নেই। অথচ সড়ক, মহাসড়ক ও রেললাইনের পাশে প্রচুর
ফাঁকা জায়গা। এগুলোয় যদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, সফেদা,
বেদানা ইত্যাদি ফলের গাছ লাগানো হয় তাহলে এগুলো একদিকে যেমন আমাদের ফলের চাহিদা পূরণে
ভূমিকা রাখবে, তেমনি আমরা তা থেকে পাব কাঠ। এ ছাড়া দেশের আনাচে-কানাচে, চর, নদীর পাড়সহ
প্রচুর খালি, অনাবাদি জায়গা রয়েছে। আসুন খালি জায়গাগুলোয় গাছ লাগিয়ে দেশটা সবুজে ভরে
তুলি। আজ আমাদের সামনে পরিবেশের গভীর সংকট। এ মহাসংকট থেকে বাঁচাতে পারে কেবল সবুজ
বন্ধুরা, অর্থাৎ গাছপালা।
এখন বর্ষাকাল, গাছ লাগানোর মোক্ষম সময়। দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, এমনকি স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বনায়নের গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিতকরণসহ টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকহারে প্রচার করা প্রয়োজন। তাহলে দেশকে সবুজ, সজীব, শস্যশ্যামলা দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে।