× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন দমন আইনের সাতকাহন

এমএ বাকী বিল্লাহ

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৫১ পিএম

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৫৮ পিএম

বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন দমন আইনের সাতকাহন

নারী নির্যাতন বাংলাদেশের জন্য একটি কমন টার্ম। সময়ের হিসাব করলে বলতে হবে আগের তুলনায় নারী নির্যাতন কমেছে। তবে এখন অহরহ নারী নির্যাতনের ঘটনা জনসম্মুখে আসার কারণে মনে হতে পারে নারী নির্যাতন আগের চেয়ে এখন আরও বেশি হচ্ছে। আগের দিনে গ্রামেগঞ্জে প্রায় ঘরেই নারীরা মারাত্মকভাবে নির্যাতনের শিকার হতেন।

নারী নির্যাতন বন্ধে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি বাংলাদেশে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন পাস করা হয়। তবে ২০০৩ সালে কিছু সংশোধনী আনা হয়। এ আইনে বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারী ও শিশু অপহরণ, আটক করে মুক্তিপণ আদায় বা দাবি, নারী ও শিশু পাচার, নারী ও শিশু ধর্ষণ বা ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো, যৌননিপীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো, ভিক্ষাবৃত্তি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে অঙ্গহানি করা, ধর্ষণের ফলে জন্মলাভকারী শিশুসংক্রান্ত বিধানসংবলিত অপরাধের বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো এসেছে। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সর্বশেষ ২৬ নভেম্বর ২০২০-এ সংশোধন করা হয়।

বর্তমানে বেশিরভাগ নারী নির্যাতনের মামলা অপরকে হয়রানির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রকৃত ভিক্টিম অন্য সব ভেজালের ভেতর ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। তন্মধ্যে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ আইনটির অ্যাবিউজ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে ‘যৌতুকের জন্য নির্যাতন’ আইনের ক্ষেত্রেও অনেক হয়রানিমূলক মামলা করতে দেখা যায়। অপর দিকে দেনমোহর ও প্রাপ্য ভরণপোষণের জন্যও কিছু নিয়মতান্ত্রিক মামলা লক্ষ্য করা যায়; তবে এগুলোতে খুব একটা বেশি ঘাপলা বা হয়রানিমূলক উদ্দেশ্য থাকে না।

জানা প্রয়োজন নারী নির্যাতন বলতে মূলত কী বোঝায়?

‘নারী নির্যাতন বলতে নারীদের ওপর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক যেকোনো ধরনের নিপীড়ন ও নির্যাতনকে বোঝায়। আরও সহজ করে বললে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নারীরা যখন অন্যের দ্বারা জোরপূর্বক বঞ্চনার সম্মুখীন হয় এবং শারীরিক, যৌন ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সে পরিস্থিতিকে নারী নির্যাতন বলে।’ (অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দশম অধ্যায়ে নারী নির্যাতনের সংজ্ঞানুযায়ী) 

নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আলোচিত বা সমালোচিত ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ বলতে বোঝায়, একজন অপরজনকে বিয়ে করার কমিটমেন্ট দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো এবং পরবর্তীকালে যখন ছেলে কোনো কারণে বিয়ে করতে অসম্মতি জানায় অথবা তাদের রিলেশনশিপে ঝামেলা সৃষ্টি হয়, তখন মেয়ের আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ধারা ৯(১) ব্যবহার করে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা।

এখন আসুন দেখি ধারা ৯(১)-এ কী বলা রয়েছে-

ধারা ৯(১) : কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন। এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও তাকে দেওয়া যেতে পারে।

তাহলে ধর্ষণ কাকে বলে?

অধিকাংশ বিচারব্যবস্থায় ধর্ষণ বলতে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া কিংবা অন্য কোনোভাবে তার দেহে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে বোঝায়।

আরও বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে-

দণ্ডবিধি ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী, কোনো পুরুষ অতঃপর উল্লিখিত ব্যতিক্রম ভিন্ন অপর সকল ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পাঁচটির যেকোনো অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোকের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে সে ধর্ষণ করেছে বলে পরিগণিত হবে।

প্রথমত, স্ত্রীলোকটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত, স্ত্রীলোকটির সম্মতি ব্যতিরেকে। তৃতীয়ত, স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে স্ত্রীলোকটির সম্মতি আদায় করা হলে। চতুর্থত, স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে সে স্ত্রীলোকটির স্বামী নয় এবং পুরুষটি ইহাও জানে যে স্ত্রীলোকটি তাকে এমন অপর একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সঙ্গে সে আইনসম্মতভাবে বিবাহিত হয়েছে বা বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে। পঞ্চমত, স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমে অথবা সম্মতি ব্যতিরেকে, যদি স্ত্রীলোকটির বয়স চৌদ্দ বছরের কম হয়।

(ব্যতিক্রম : কোনো পুরুষ কর্তৃক নিজ স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে পরিগণিত হবে না, যদি স্ত্রী তেরো বছরের নিম্ন বয়স্কা না হয়।)

দণ্ডবিধি ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার এসব পর্যায়ের মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ের অপব্যবহার হচ্ছে মারাত্মকভাবে। যেমন ধরুন-

প্রথমত, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে জাস্ট ফ্রেন্ড টাইপ সম্পর্ক থেকে অসংখ্যবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার একপর্যায়ে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে বা সম্পর্কের অবনতি হলে মেয়েটি ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ মামলার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অবিবাহিত যুবকের অবৈধ সম্পর্কের জেরে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে উক্ত যুবকের প্রতি এই নারী চরম আসক্ত হয়ে যুবককে বিয়ে করতে চাইলে যুবক যখন বিয়ে করতে অসম্মতি জানায়, উক্ত নারী তখন তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করতে পারেন।

তৃতীয়ত, ছেলে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক জানা সত্ত্বেও কলেজ/ভার্সিটিপড়ুয়া এক সাবালিকা মেয়ে ছেলেটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে তা জানাজানি হওয়াতে মেয়েটি তাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করতে ছেলের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হলে তখন মেয়েটি তার বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করতে পারেন। 

চতুর্থত, অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতি মেয়েটির মারাত্মক দুর্বলতা থাকায় সে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে এবং কৌশলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তা রেকর্ড করে রাখেন। পরবর্তীতে রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লিপ্স দ্বারা উক্ত ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বিয়ে করতে অসম্মতি জানালে তার বিরুদ্ধে তখন এই ধর্ষণ মামলার আশ্রয় নেওয়া যায়।

উক্ত ঘটনাগুলোতে সাধারণ চোখে নারী-পুরুষ উভয়কে অপরাধী বা দোষী মনে করলেও উক্ত আইনে নারীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় তারা বেপরোয়াভাবে এই আইনের অপব্যবহার করে থাকেন।

সবচেয়েও মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেখা যায়, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হওয়ার প্রায় ছয় মাস বা বছরখানেক পরে নারী এসব মামলার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৮০ ভাগ এ রকম মামলা মিথ্যে ও হয়রানির জন্য করা হয়ে থাকে, যার ফলে প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার নারী সঠিক বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

এসব বিবেচনায় সম্প্রতি ভারতীয় আদালতের এক রায়েও এটা পরিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছেÑ ‘প্রেমের সম্পর্কে পারস্পরিক সম্মতিতে দৈহিক মিলন হলে সেটা ধর্ষণ হবে না।’ বাংলাদেশেও এসব মামলার বিষয়ে আদালত সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করলে একদিকে পুরুষকে অযথা হয়রানি করা বন্ধ হবে এবং অপরদিকে প্রকৃত ধর্ষককে সাজা দিতে সহজ হবে বলে আশা করা যায়।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য মামলা হচ্ছে- যৌতুকের জন্য নির্যাতন। যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮’তে যৌতুকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যৌতুক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হিসেবে এক পক্ষ কর্তৃক অন্য পক্ষের কাছে দাবি করা অর্থসামগ্রী বা অন্য কোনো সম্পদ। এ দাবি বিয়ের আগে, পরে বা বিয়ের সময়—যখনই হোক না কেন, তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে।’

লক্ষণীয় যে- যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ২(খ) ধারায় যৌতুকের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয়- যৌতুক যে সর্বদা বরপক্ষ দাবি করবে, তা নয়। কনেপক্ষ বিয়ের শর্ত হিসেবে দেনমোহর ব্যতীত অন্যান্য অর্থসম্পদ দাবি করলেও তা যৌতুক এবং এর জন্য প্রচলিত আইনের অধীনে আদালতে মামলা করা যায়। আইনের এ ধারার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু মামলা দেখা গেছে, যেখানে স্বামী তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেছেন। মামলার ফলে স্ত্রী ও তার আত্মীয়স্বজন আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন। সুতরাং যেকোনো পক্ষই বিয়ের শর্ত হিসেবে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ দাবি করলে তা যৌতুক হবে এবং যৌতুক দাবি করায় অপরাধী বলে গণ্য হবেন। যৌতুক দেওয়া-নেওয়া ও দাবি করা গুরুতর অপরাধ, যৌতুক নিরোধ আইনে এ অপরাধের জন্য সাজা বা দণ্ডের উল্লেখ রয়েছে। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে যৌতুক দাবি, প্রদান ও গ্রহণ করার দণ্ড হচ্ছে অনধিক পাঁচ (৫) বছর; কিন্তু অন্যূন এক (১) বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। যে ব্যক্তি যৌতুক দেওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারে সহায়তা করবেন, তিনিও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, স্ত্রী যখন স্বামীর বিরুদ্ধে যেকোনো বিষয়ে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করতে যান, তখন ‘যৌতুকের জন্য নির্যাতন’ গল্প সামনে এসে হাজির হয়, তা সত্য বা মিথ্যা যা-ই হোক। এমনকি ডিভোর্স হয়ে গেলেও দেনমোহরের মামলার পাশাপাশি যৌতুকের মামলা করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু যৌতুকের মামলা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবাহ বলবৎ থাকতে হবে। বিচ্ছেদের পর অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে বাধা নেই। তবে যৌতুকের মামলার জন্য বিবাহ বলবৎ থাকা জরুরি।

আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে যৌতুক নিরোধ আইনটিকে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কিছু ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন, যা ব্যাপক হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো আইনানুগ কারণ নেই জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির অধীনেও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের মামলা করলে তার জন্য শাস্তি হবে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। তবে মামলার ধরন যদি এমন হয়, যার জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সাত বছরের অধিক কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাহলে মিথ্যা মামলাকারীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে এ ধারার অধীনে মামলা করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে পারবেন। 

এখন আসুন দেনমোহর ও ভরণপোষণ সম্পর্কে-

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেনমোহর (Dower) পরিশোধের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

এমনকি কাবিননামায় ১৯ নং কলামের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কোনো মুসলিম নারী তার স্বামীকে তালাক দিলেও ওই নারীর দেনমোহর পাওয়ার এই অধিকার ডিভোর্স হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে এবং তা আদায়ের জন্য স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।

অপরদিকে আমরা এটা অনেকেই জানি যে মুসলিম বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। এই চুক্তির ফলে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস ও সংসার পালন করেন। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি কিছু দায়িত্বও সৃষ্টি হয়। এই দায়িত্বগুলোর মাঝে ভরণপোষণ অন্যতম । তবে যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেই যায়, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের পরও স্ত্রী তিন মাস (৯০ দিন) অর্থাৎ ইদ্দতকালীন পর্যন্ত ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। 

সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার দায়িত্ব আইনগতভাবে বাবার। সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মেয়েকে বাবা ভরণপোষণ দেবেন। ভরণপোষণ আদায়ের মামলার ক্ষেত্রে খুব একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা হয়রানির জন্য করতে দেখা যায় না। একজন নারী টিকে থাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে এই অধিকার আদায়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। যদিও নারীকে তার প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষণের অধিকার আদায় করতে অসহনীয় বেগ পেতে হয় এবং দিনশেষে সফলতার হারও খুব একটা সন্তোষজনক হয় না। যার ফলে বেশিরভাগ ভিক্টিমকে মামলার মাঝপথে গিয়ে থেমে যেতে দেখা যায়।

প্রকৃতপক্ষে নারী নির্যাতন যে একটি জঘন্য ব্যাপার, তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। নারী-পুরুষ সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বসুলভ। কিন্তু প্রচলিত অযৌক্তিক সিস্টেম ও অপসংস্কৃতির প্রভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্কটা দেখা যায় মারাত্মক লেভেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরপুর এবং অসহযোগিতাপূর্ণ।

একে-অপরের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব দূর করতে না পারলে এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ বজায় না রাখলে, আইনের মাধ্যমে তা সমাধানে পৌঁছা সম্ভব নয়। বরঞ্চ এই বিদ্বেষ মনোভাবের জন্যই উল্টো আইনের অপব্যবহার হচ্ছে চরমভাবে। একই সঙ্গে আইনের অপব্যবহার রোধ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যথেষ্ট সংশোধনী আনয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। 

নারী-পুরুষ সম্পর্ক হোক সকল আইন ও প্রতিকূলতার ঊর্ধ্বে সুন্দর ও প্রাণবন্ত। আগামী বাংলাদেশ হোক নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে পারস্পরিক সহযোগিতার ও নারী নির্যাতনমুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ। 


  • প্রোগ্রাম অফিসার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা