ফিরে দেখা
মো. খসরু চৌধুরী
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৬ এএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:২৭ এএম
পঁচাত্তরের ১৫
আগস্টের বিভীষিকার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সভ্যতার ইতিহাসে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের
ভয়াল দিন হিসেবে চিহ্নিত। চোখের সামনে ভাসে রক্ত, বাঁচার আর্তচিৎকার ও বীভৎস ছবি। ২০০৪
সালের ওই সমাবেশে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুরু হয় বিকাল ৫টা ২ মিনিটে। তার
দুই পাশে ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন
কেন্দ্রীয় নেতা। ৫টা ২২ মিনিটে বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’
বলে মাইক থেকে সরে দাঁড়ানোর মুহূর্তেই প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়া হয়। ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে
গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতা ও নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে
ট্রাকের ওপর বসিয়ে দেন। এর পরপরই আরও তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন
হয়ে যায়। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত মেজর শোয়েব মো. তারিকুল্লাহ
ট্রাকের সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে নামিয়ে আনতে বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে।
সেদিনের হামলায়
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট
মারা যান। প্রায় দেড় বছর পর মৃত্যু হয় ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের।
সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৪। হামলার শিকার আওয়ামী লীগকেই দোষী প্রমাণ করার নানা অপচেষ্টা
চলে! গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার একটি
ফরমায়েশি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয় এই কমিশন। এরপর আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুরু
হয় নানা নাটক। তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নিতে শৈবাল সাহা পার্থ নামে এক তরুণকে আটক করে
ফাঁসানোর চেষ্টা চলে। মঞ্চস্থ হয় জজ মিয়া নাটক। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগে
জজ মিয়াকে আটক করার পর জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। এটি সাজানো
নাটক প্রমাণ হওয়ার পর থামিয়ে দেওয়া হয় তদন্তকাজ। চার বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন বিগত
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হত্যার অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেয়
সিআইডি। জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
ওই বছরের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে বিচারও শুরু হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ২০০৯
সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় নাম আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ
আরও ৩০ জনের। তারেকসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মামলার আসামি সাবেক পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি আজও। ষড়যন্ত্রকারীরা যে নিষ্ক্রিয় নয় দুহাজার চার সালের একুশ অগাস্ট এরই মর্মস্পর্শী নজির।