× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রেনেড হামলা

ঘৃণিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে

মোহাম্মদ আলী শিকদার

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:২১ এএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১১:২৭ এএম

মোহাম্মদ আলী শিকদার

মোহাম্মদ আলী শিকদার

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যম কিংবা অন্যভাবে আরও আগেই যা জানা  গিয়েছিল তা থেকে বলা যায়, এটি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাষ্ট্র ও সন্ত্রাস ওইদিন মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ কোনটি আর সন্ত্রাসী সংগঠন কোনটিÑ এই পার্থক্য খুঁজে বের করার কোনো সুযোগই ছিল না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রের সবচেয়ে জনাকীর্ণ অঞ্চলে গ্রেনেড হামলা করা হয়। হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং দলটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা। হামলায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। সারা দেশের মানুষ দেখেছে কীভাবে প্রাণচঞ্চল রাজপথ রক্তে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ওই হামলার পর ক্রমান্বয়ে অনেক কিছুই আমাদের সামনে আসে। ২০০৪ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এমনকি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থার কয়েক কর্মকর্তাকেও সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তখন যেন সমান্তরাল একটি সরকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়। ওই সময়ের আইজিপি, ডিজি ও গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যে সংস্থাগুলো তারা জঙ্গিদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এমন একটি হামলা পরিচালনা করে। এ জন্যই বলছি, রাষ্ট্র ও সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে কোনো পার্থক্য তখন দেখা যায়নি। পৃথিবীতে সম্ভবত এমন ঘটনা বিরল। সম্পূর্ণ দিবালোকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইশারায় অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেছে আর এ নিয়ে বিচারের নামে তৎকালীন সরকার প্রহসন করে!

২০০৪ থেকে আরও ২৯ বছর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের অনেকের পরিচয় বেরিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উত্তরসূরিরাই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়- এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। ওই গ্রেনেড হামলা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওই দুটো হামলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী সত্তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর পক্ষে যুক্তি হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সামরিক শাসনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রের সবকিছু বাতিল করে দেওয়া হলো। বাহ্যত নাম বাংলাদেশ থাকলেও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের আর কোনো বিভেদ থাকল না। ওই গোষ্ঠীই পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন চিরতরে বন্ধ করার পথ প্রশস্ত করে দেয়। শেখ হাসিনা জীবিত থাকলে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে যে নীল নকশার ছক কষা হয়েছিল এর বাস্তবায়ন কঠিন হবে এমন আতঙ্ক থেকেই তারা বর্বরোাচিত হামলা পরিচালনা করে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের শাসনভার নেন। তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিযুক্ত করেন। পুরো বিশ্ব হতবাক। যে রাষ্ট্রে হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয় না, সেই রাষ্ট্রের প্রতি বহির্বিশ্বের আস্থা কমতে বাধ্য। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। অন্যায়ভাবে তারা রাষ্ট্রের ওপর শোষণ-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওইসব অপকাণ্ডে জনগণের সমর্থন ছিল না। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের ফলে তাই তারা নানাভাবে তটস্থ হয়ে পড়েন। তখন  অপতৎপরতাকারীরা একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগীরা ২০০৪ সালের আগেও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু তারা সফল হননি। কারণ প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তাকর্মী নিযুক্ত ছিলেন তারা তাদের দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে একাত্তরের বিরুদ্ধপক্ষ নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা জানতেন, বঙ্গবন্ধু যতদিন আছেন ততদিন পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতি এদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তারা দীর্ঘদিন দেশে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসার পর দলটি তাদের হারানো শক্তি ফিরে পায়। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির এই পুনর্জাগরণ একাত্তরের বিরুদ্ধপক্ষের মনে ভীতি ছড়িয়ে দেয়। তারা বুঝতে পারেন, শেখ হাসিনাকে সরাতে পারলে এ দেশে তারা চিরদিনের জন্য ক্ষমতার আসন গেড়ে বসতে পারবেন। আওয়ামী লীগ নামক একটি দল পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাদের ভয়ের আরেকটি কারণ ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী, জঙ্গি, মৌলবাদী, বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং এসব হামলার বিচারের রায় তাদের পক্ষে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এই একটি জায়গায় হীন স্বার্থবাদীদের লক্ষ্য এক হয়ে যায়। তারা একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করতে শুরু করে। ২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর দেশের প্রধান একটি ইংরেজি দৈনিক প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। ওই হামলার জন্য সন্ত্রাসী ভাড়া করা হয়। আবার ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণির একটি বাংলা দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর আরেকটি বাংলা দৈনিকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মেজর ডালিম ও আনোয়ার ওই সময় বিদেশ থেকে যোগাযোগ করেছিলেন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে হামলাকারীরা বহুবার মিটিং করেছিল। ওই মিটিং কখনও হাওয়া ভবন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হয়। এসব ঘটনা কি বার্তা দেয় তা কি এরপরও অস্পষ্ট থাকে?

২০০৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়ভার তো তাদের ওপরই ছিল। আওয়ামী লীগের ওই জনসভায় কয়েকশ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এমন জনসমাবেশে গোয়ান্দারাও সাদা পোশাকে অবস্থান করেন। নিরাপত্তাকারীদের ভালোভাবেই জানা ছিল শেখ হাসিনার ওপর অতীতেও হামলার পরিকল্পনা হয়েছে এবং যেকোনো বড় সমাবেশে তার ওপর হামলা হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই তাদের আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল। অথচ হামলাকারীরা বহু আগে থেকেই সমাবেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। হামলায় যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয় তা সামরিক বাহিনীর গ্রেনেড। এই বিপজ্জনক অস্ত্র বাইরে থেকে আনা হয়। এমন অস্ত্র নিয়ে জনসমাবেশে তারা ঘুরে বেড়িয়েছে কীভাবে, সেটিও কিন্তু অনেক প্রশ্ন দাঁড় করায়। গ্রেনেড ছোড়ার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। ওই সমাবেশ স্থলে দায়িত্বপালনকারী পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও পরবর্তীতে তদন্তে ওই  অপতৎপরতাকারীদের ধরার চেষ্টা না করে পুলিশ উল্টো আক্রান্ত আওয়ামী নেতাকর্মীদের ওপরই সেদিন কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল। এতে যারা অতর্কিত হামলায় চিৎকার চেঁচামেচি করছিল তারা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে জঙ্গিরা পালিয়ে যায়।

ওই নারকীয় হামলার আলামতও নষ্ট করে দেওয়া হয়। এ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই করা, তাও পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে উঠে এসেছে। হামলাকারীদের গ্রেনেড আক্রমণ চালানোর সুবিধার্থে সেদিন যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তেমনি ওই হামলায় ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও নিয়মানুযায়ী তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। আদালতের অনুমতি না নিয়েই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই গ্রেনেডগুলো ধ্বংস করা হয়। আরও একটি  বিষয় হলো, তখন আক্রান্ত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো তাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল অস্বাভাবিক অবস্থা, যাতে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে। এমনকি একুশ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পরদিন ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারের মতো স্পর্শকাতর স্থান থেকে উদ্ধার হয় আরেকটি অবিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেড। তাজা গ্রেনেড উদ্ধার হলেও সেটিও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি, ওই গ্রেনেডটিও ধ্বংস করে আলামত নষ্ট করা হয়। এভাবে একুশ আগষ্টের নারকীয় ওই হামলার সব আলামতই মুছে ফেলা হলো। অথচ যে কোনো ধরনের অপরাধের আলামতে এভাবে নষ্ট করাও গুরুতর অপরাধ। অবিস্ফোরিত গ্রেনেডের গায়ে লেখা ছিল পিওএফ (পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্র্যাকচার)। অর্থাৎ গ্রেনেডগুলো পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর সমরাস্ত্র কারখানায় তৈরি। এ ধরনের গ্রেনেড সামরিক বাহিনীই ব্যবহার করে। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় না। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে এসব গ্রেনেড কিভাবে এসেছিল?  এর উত্তর নিশ্চয় জটিল কিছু নয়।

ওই বর্বরাচিত ঘটনার পূর্বাপর বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আদালতের রায়, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে যা জানা যায়, তাতে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় গতি এনে দ্রুত বিচার  শেষ করা জরুরি।

  • বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা