স্মরণ
সাইফুল হক মোল্লা দুলু
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট ঘাতকের নিশানা থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বারবার আক্রমণের লক্ষ্য
হয়েছেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র কম হয়নি। চট্টগ্রামের লালদীঘি
মাঠে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে যাওয়ার সময় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে
বহনকারী ট্রাক লক্ষ্য করে আদালত ভবনের সামনে নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়। আইনজীবীদের মানববেষ্টনী
তাকে নিরাপদে রাখলেও সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী। এরপরও অনেকবার
তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে ঘাতকের দল। লালদীঘির হামলার ১৬ বছর পর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে
আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে (২১ আগস্ট) চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। সমাবেশস্থলে
মুহুর্মুহু সেদিনের গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। তাদেরই
একজন আইভি রহমান। ঘটনাস্থলেই দুটি পা হারানো আইভি রহমানকে প্রথমে ভর্তি করা হয় ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা নিয়ে যান সম্মিলিত
সামরিক হাসপাতালে। কয়েক দিন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে ২৪ আগস্ট মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়েন। আইভি রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয়, তিনি প্রয়াত
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী। তবে আইভি রহমান নিজের নামেই সংগঠনের নেতাকর্মী
এবং সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে
অভিহিত করেন, ‘রাজপথের নেতা’ হিসেবে।
১৯৫৮ সালে আইভি
রহমান নবম শ্রেণির ছাত্রী। ওই সময় স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে তাকে দেখেন জিল্লুর রহমান।
তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে আইভি রহমানের বাবা ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের
কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি সম্মতি দিলে ওই বছরের ২৭ জুন সম্পন্ন হয় জিল্লুর রহমান-আইভি
রহমানের বিয়ে। বিয়েতে সাক্ষী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও খান আতাউর রহমান।
অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও পড়ালেখা থেকে সরেননি আইভি রহমান। বাংলাবাজার স্কুল থেকে
১৯৬০ সালে এসএসসি, ১৯৬৯ সালে ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা
ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন,
ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন। বিয়ের পর স্বামী জিল্লুর রহমানের
সংস্পর্শে নিজের রাজনৈতিক বোধ আরও শানিত করেন। অংশ নেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারে।
যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। বেগম বদরুন্নেছা ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের
জন্য স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের দায়িত্ব
নিয়েছিলেন। কথিকা পড়তেন স্বাধীন বাংলা বেতারে।
জেবুন্নেছা আইভি
বিয়ের পর নামের সঙ্গে যুক্ত করে হন আইভি রহমান। ১৯৭৫ সালে সদস্য হন মহিলা আওয়ামী লীগের।
প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের। ১৯৮০ সালে এ দলের সভাপতির
দায়িত্ব পাওয়ার পর মহিলা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রায় দুই যুগ। সভাপতি হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতির। চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার।
জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৪৪ সালের ১
ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার চন্ডিবের গ্রামে জন্ম নেওয়া আইভি রহমান যে আদর্শ
সামনে রেখে রাজনীতিতে এসেছিলেন আমৃত্যু অবিচল ছিলেন সেই আদর্শে। আজকের প্রচারমুখী রাজনীতির
বাইরের রাজনীতিক এই নেতার প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা।