× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যস্ফীতি

জোগান আশানুরূপ তবুও দাম অসহনীয়

জন বাফস

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩ ১০:২১ এএম

জন বাফস

জন বাফস

বিশ্বব্যাংকের খাদ্যমূল্য ইনডেক্স সাত মাস ধরে স্থিতিশীলই অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমতির দিকে থাকায় অন্য খাদ্যপণ্যের দাম হ্রাস করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ইনডেক্সে খাদ্যপণ্যের দাম ৫০ শতাংশ বেশি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কৃষ্ণসাগর খাদ্যশস্য চুক্তি নবায়ন করেনি রাশিয়া। পাশাপাশি বাসমতী বাদে অন্য চালের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। এই দুই বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট সত্ত্বেও ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে খাদ্যের দামের ইনডেক্সের গড় তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। খাদ্যের দাম কমার ক্ষেত্রেও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় তেল ও খাদ্যশস্যের দাম কমার অবদান রয়েছে। বিশেষত চলতি বছর সারা বিশ্বে ফসল সংগ্রহের সময় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আগস্ট থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়টি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যশস্য আহরণের সময় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটের কারণে যদি বাধাগ্রস্ত না হয়, তাহলে এর সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দামও কমবে।

২০২৩-২৪ সালে সারা বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। চলতি বছর গম, ভুট্টা ও চালের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে এবং সামনেও এই ধারা অব্যাহত থাকার কথা। বিশ্বে গমের সর্বোচ্চ উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর্জেন্টিনার খরা সংকট কেটে গেছে, কানাডাও গমের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং ভারতেও গমের উৎপাদন আশাজাগানিয়া। আর্জেন্টিনা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা রয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ সালের মধ্যেই পাকিস্তানের চাল রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বছরের শুরুতে দেশটিতে আকস্মিক বন্যায় ধান আহরণে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল। বাসমতী বাদে অন্য চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ভারত থেকে বৈশ্বিক সরবরাহকৃত চালের ৪০ শতাংশ আসার কথা ছিল। তবে চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এর বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করতে পারে। চাল সরবরাহ সংকট বাদেও সারা বিশ্বে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৬০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এই পরিমাণ বেশি নয়, তবে বার্ষিক গড় খাদ্যশস্যের থেকে সামান্য হলেও বেশি। অন্তত কৃষ্ণসাগর খাদ্যশস্য চুক্তি নবায়ন না করার ফলে যে সংকট দেখা গিয়েছিল তা এই আহরণকৃত মজুদের কারণে কিছুটা হলেও কমে আসবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভোজ্য তেলের সরবরাহও আশানুরূপ হতে পারে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিনের উৎপাদন আশানুরূপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে সূর্যমুখীর উৎপাদনও ভালো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডায় রেপসিডের উৎপাদন থেকে প্রত্যাশা করা যায় বৈশ্বিক ভোজ্য তেলের গড় চাহিদা এই উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা কঠিন কিছু হবে না। তবে চলতি বছর ভোজ্য তেলের উৎপাদন ২০১৯ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন বেড়ে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন টনে পৌঁছতে পারে। বিশ্বে মূল খাদ্যশস্য ও পণ্যের চাহিদা পূরণের স্বাভাবিক অবস্থা অর্জন করা গেছে। তবে চাল ও গমের সরবরাহে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে এই স্থিতিশীলতা কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ভুট্টার মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। খাদ্য সরবরাহের আশাজাগানিয়া উত্তর পরিস্থিতি সত্ত্বেও খাদ্যশস্য ও পণ্যের দাম কমবেÑ এমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে কোভিড মহামারি পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কিছুটা দায় রয়েছে। আর খাদ্যশস্য ও পণ্যের দাম ২০১০-১১ সালের মূল্যস্ফীতির তুলনায় এখনও অনেক বেশি।

বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করে। বিশেষত বিশ্বের অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি একটি চলমান সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির এই সংকট অস্থায়ীকালের জন্য বাজার ব্যবস্থাকে অসংহত করে তুলেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষত উন্নয়নশীল ও সম্ভাবনাময় বাজারে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। এই দুই অঞ্চলের অন্তত অর্ধেক দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৬ দশমিক ৭ শতাংশের আকারও ধারণ করেছে। সাব-সাহারান অঞ্চলের অর্ধেক দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের অর্ধেক দেশে বাজারে মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ ২০২৩ সালের প্রথম থেকেই মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত। আর্জেন্টিনা, লেবানন, ভেনিজুয়েলা এবং জিম্বাবুয়েতে বাজারের মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আর ৩০ শতাংশ দেশে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশেরও বেশি। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি উন্নয়নশীল এবং সম্ভাবনাময় বাজারের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। মূলত উন্নয়নশীল ও সম্ভাবনাময় বাজার অর্থনীতির দেশগুলোতে খাদ্যপণ্যের পেছনেই যাপিত জীবনের এক-তৃতীয়াংশ অর্থ খরচ করতে হয়। তাদের সামর্থ্যের বিচারে বড় ধরনের চাপও বটে।

বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা জোগানের অনুপাতে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আঞ্চলিক বাজার ব্যবস্থার প্রকৃতি এক্ষেত্রে একটি বড় সংকটের কারণ। কিন্তু মহামারিকালের তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখনও বড় সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতাকে অনেকাংশে দায়ী মনে করা হলেও এখনও খাদ্য সরবরাহের পরিসংখ্যান অর্জিত হয়নি। তবে পরিসংখ্যান ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশা করা যায়, বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হলে খাদ্যপণ্যের দামও কমার আশানুরূপ চিত্র দেখা যাবে। তবে পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নানা রকম মেরূকরণ ও সমীকরণের বিষয়টি যে থাকবে অগ্রভাগে, এ সন্দেহও অমূলক নয়। 

  • কৃষি অর্থনীতিবিদ, ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স প্রসপেক্ট গ্রুপ, বিশ্বব্যাংক

 ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ব্লগ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা