× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রযুক্তি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিম ‘সংস্কৃতি’

রাজীব নন্দী

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৪৩ এএম

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১১:৩৩ এএম

রাজীব নন্দী

রাজীব নন্দী

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউব। এ প্ল্যাটফর্মগুলো যোগাযোগ, বিনোদন, তথ্য আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সমর্থন জোগাড় করে। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও কমিউনিকেশন স্টাডিজের একটি বড় জায়গা জুড়ে আছে মিম কালচার। ইন্টারনেটে মিম অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি যোগাযোগমাধ্যম এখন, যা বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে প্রভাবিত করছে। এর থেকে ধারণা করা যায়, নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে মিম তৈরি হয় না। মিম প্রস্তুতকারক ও ভোক্তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য কাজ করে। তাদের সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতিও জানা যায়।

রাজনৈতিক যোগাযোগে মিমের ভূমিকা বেশ শক্তিশালী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এমএসএস পর্বের সম্পাদিত গবেষণা ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিমের ব্যবহার : একটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষা’য় উঠে আসে মিমের বহুমুখী প্রভাবের বিষয়টি। বিভাগের শিক্ষক শাহাব উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি সম্পাদন করেছেন মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন। গবেষণায় তিনি দেখান, ‘ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল এই আধুনিক বিশ্বে প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময়ে মিমের নাম শুনেছে বা দেখেছে। মিডিয়ার এ আধেয়টি আজ ইন্টারনেটে বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মিম বলতে যা কোনো পরিস্থিতি, অবস্থা, ব্যক্তি, ঘটনা বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে রসিকতা করে। মিম সাধারণত অনলাইনে একজন থেকে আরেকজনের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা রাখে, যেখানে সেটির প্রতিলিপি বা পুনরাবৃত্তি হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়। মিম সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মনে নানান প্রভাব রাখে।’

মনে পড়ে করোনাকালে আমরা সবাই যখন গৃহবন্দি ছিলাম, তখন অনেকের কাছেই সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছিল আনন্দ সমবায়ের জায়গা। তখন অনেকেরই মন জয় করে নিয়েছিল বলটজ নামের একটি কুকুর। সোশ্যাল মিডিয়ায় চিম নামে পরিচিত ছিল এই বলটজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিবা ইনু জাতের কুকুরটির জনপ্রিয়তার জুড়ি মেলা ভার। অত্যন্ত আদুরে এক কুকুরের মিমস নজর কেড়েছে গোটা বিশ্ববাসীর। কখনও তার নিষ্পাপ হাসিমুখ, কখনও তার রাগত ভঙ্গি, কখনও প্রেমকাতুর চোখের ইশারা দিয়ে মিমের মাধ্যমে মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়েছে। সম্প্রতি সেই সারমেয় চিম ওরফে বলটজ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। চিমের মালিক ইনস্টাগ্রামে আবেদন করে লিখেছেন, ‘কেউ দুঃখিত হবেন না। মনে করুন বলটজ এই দুনিয়াকে কতটা আনন্দ দিয়েছিল। একটি শিবা ইনুর হাসিমুখ আপনাদের সঙ্গে আমাকে যুক্ত করেছিল। অতিমারির সময় কত মানুষকে সে সাহায্য করেছিল। অনেককেই সে আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু এখন ওর লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে’। তিনি আরও লিখেছেন, ‘এখন বলটজ আকাশে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানেও নিশ্চয়ই ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে।’

চিমের মতো আরও নানান বিষয় নিয়ে আমরা ইন্টারনেটে ব্যঙ্গ কিংবা কৌতুকে মেতে থাকি। আগে নিছক মজার জন্যই লোকে জোকস্ পাঠাত, প্যারোডি করত। সামাজিক যোগাযোগ সাইটের কল্যাণে সে জায়গাটা দখল করেছে মিমস। মিমের গুঁতো থেকে রেহাই নেই সেলিব্রেটিদের। কিছু কিছু মিম তো ট্রলের পর্যায়েও চলে যায়। বিপুলা এই পৃথবীতে কত কিছু আছে।

হংকংয়ের একটি মিম জাদুঘর হয়েছে। অনলাইনে পাঠানো রঙ্গরসিকতার বিপুল সংগ্রহ আছে সেখানে। নেটমাধ্যমে জনপ্রিয় একটি সংস্থা তৈরি করেছে এ জাদুঘরটি। খবরে প্রকাশ, নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও বা ছবি থেকে শুরু করে জনপ্রিয় ঠাট্টাÑঅনেক কিছুই রয়েছে এ জাদুঘরের সংগ্রহে। মূলত সাতটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে যাবতীয় ‘মিম’কে। চারদিকে মিম ও ট্রল কালচার দেখে হঠাৎ অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রযুক্তিময় এ বিশ্বের মজা নেওয়ার সংস্কৃতি আজ হঠাৎ পয়দা হয়নি। জিন যেমন আমাদের বংশের ধারা এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে বয়ে নিয়ে যায়, তেমনি মিমও ইন্টারনেট দুনিয়ায় আমাদের রুচিগত জিন বয়ে নিয়ে যায়। মিম ধারণাটির প্রবক্তা জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স। ১৯৭৬ সালে তার লেখা বই ‘দ্য সেলফিস জিন’-এ তিনি প্রথম জানান, জিন যেমন বংশগতির ধারকবাহক, মিমও তেমনি সংস্কৃতির ধারকবাহক। কোনো আচরণ বা স্টাইল যখন এক ব্যক্তি থেকে আর এক ব্যক্তিতে এবং এভাবে ক্রমাগত সংস্কৃতিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সেই আইডিয়া বা আচরণই হলো মিম। ডকিন্সের মতে, এই মিম সংস্কৃতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষের আচরণের মধ্য দিয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

গণমাধ্যম-বিশ্লেষক ও অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হকের মতে, ডিজিটাল মাধ্যমে ভাবনা প্রকাশের অন্যতম উপায় হলো মিম। তবে মিম হাস্যরসাত্মক কনটেন্ট হলেও তার ভূমিকা রাজনৈতিক হতে পারে। বিশেষত যেসব সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত, সেখানে মিম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সংবাদপত্রে কার্টুনের যে ভূমিকা, সামাজিক মাধ্যমে মিম যেন সেই ভূমিকা নিয়েছে। বাংলাদেশকেন্দ্রিক সামাজিক মাধ্যমেও হাস্যরসের আশ্রয়ে মিম এক রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের মনের ভাব, কথা বা লিখিত আকারে যা যায় না বলা, তা মিমের মাধ্যমে তুলে ধরা যাচ্ছে। পলিটিক্যাল কমিউনিকেশনে সংবাদপত্রে একসময় কার্টুনের যে ভূমিকা ছিল, আজ সে জায়গা নিয়েছে মিম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা জনপরিসর হিসেবে কাজ করছে মিম। ‘ফেসবুক ট্রল : নিছক কৌতুক না আত্মতৃপ্তি?’ শীর্ষক প্রবন্ধে (উৎস : ‘অগ্রায়ন’, সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্র বিষয়ক যোগাযোগ জার্নাল, এপ্রিল ২০১৯) গবেষক সারা মনামী হোসেন ফেসবুক ট্রলের মতো অবমাননাকর বিষয় নিয়ে মনঃসমীক্ষণমূলক আলোচনা করছেন। তিনি দেখান, ফেসবুকে শেয়ার করা মিম কখনও কখনও ট্রলে পরিণত হয়।

গণমাধ্যম থেকে ব্যঙ্গ, ক্যারিকেচার ও কার্টুন যখন প্রায় নির্বাসিত; তখন সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে ইন্টারনেট মিম। তাই আজ ইন্টারনেট ভুবন মাতিয়ে বেড়াচ্ছে মিম। ফলে বাঙালি সংবাদপত্র পাঠক আগে যেমন কার্টুন দেখে বিমলানন্দ লাভ করতে, তা এখন পাচ্ছে মিম কালচারে। জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’-এর ওসি হারুন চরিত্রের মতো বললে বলতে হয়, ‘দুইটি কথা মনে রাখবেন’Ñ প্রকৃতি কখনও শূন্যস্থান পছন্দ করে না আর বাঙালি কখনও রসিকতা ছাড়া থাকতে পারে না।

  • সহযোগী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা