প্রজন্মের ভাবনা
আল-আমিন আহমেদ
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৬ এএম
‘বুলিং’ শব্দটি পশ্চিমা দেশে ব্যাপক প্রচলিত। সেন্টার ফর
ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত ও আক্রমণাত্মক
আচরণ, যা সাধারণত স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আচরণের মাধ্যমে
দুই পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার অসামঞ্জস্য প্রকাশ পায়। এ আচরণের শিকার শিশু বা কিশোর
থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের ব্যক্তিই হতে পারেন। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী
বা অফিসের সহকর্মীদের মধ্যেও এমন আচরণ দেখা যায়। এর অর্থ হচ্ছে, কাউকে শারীরিক বা
মানসিকভাবে অপদস্থ করা। বুলিং মূলত সচেতন বা অবচেতনভাবে এক ধরনের আক্রমণাত্মক
আচরণ, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে অপমান, অপদস্থ বা হেয় করা। বুলিংকে মজা হিসেবে দেখার
শিকড় আমাদের সমাজের গভীর পর্যন্ত। আর এই মজা করতে গিয়ে অনেক সময় ঘটে যায় ভয়াবহ
ঘটনা। কখনও বুলিং এর শিকার ব্যক্তির মানসিক জগতে কালো ছাপ রাখে। আমাদের সমাজে
বুলিংয়ের একটি সাধারণ দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় কারও জন্মদিন এলে।
জন্মদিন মানেই একটি মজার দিন। এককালে জন্মদিন এলে ধুমধামে
পালনের চল ছিল। অঞ্চলভেদে জন্মদিন উদযাপনের সংস্কৃতিও ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
সেসবে বদল এসেছে। আজকাল জন্মদিন এলেই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের ট্রিট
দেওয়া বা কিছু গৎবাঁধা কাজ করা হয়। কিন্তু উদযাপনের বদলে অনেকে জন্মদিনকে উল্টো ভয়
পেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কারও জন্মদিন হলে তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে
রাখা হয়। তারপর কাঁচা ডিম, কাদা, মাটি, আবর্জনা, আটা-ময়দা ও রঙ মাখিয়ে তার জন্মদিন
পালন করা হয়। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বন্ধুরা এভাবে জন্মদিন উদযাপন করতে
গিয়ে একটি ছেলের চোখের ভেতর ডিমের খোসা ঢুকে যায়। এভাবে তার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু
তাই নয়, অনেক সময় জন্মদিন উপলক্ষে দুষ্টুমি করে বন্ধুবান্ধবের মুখ কেকের মধ্যে
ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, অনেক সময় কেকের উচ্চতা কিংবা ওজন বেশি হওয়ায় কেকের মধ্যে সরু
কাঠি বসানো হয় যাতে ভারসাম্য ঠিক থাকে; এমন অবস্থায় যেকোনো দুর্ঘটনা হতে পারে
এমনকি এসব সরু কাঠি চোখ নষ্টও করে দিতে পারে!
যেভাবেই দেখা হোক না কেন, বিষয়টি যে বুলিং তাতে কোনো সন্দেহ
নেই। জন্মদিনের মতো একটি উৎসব কারও জন্য কেন আতঙ্কের হয়ে উঠবে, তা স্পষ্ট নয়। অথচ
আমরা দেখছি এমনটিই। জন্মদিন উদযাপনের সুন্দর কিছু সংস্কৃতি আমাদের রয়েছে। এ
দিনটিকে একজন ব্যক্তি মনে করবেন তার আগমন অন্যদের জন্য আনন্দের। তার বদলে তাকে
হাসির খোরাক হয়ে অন্যদের আনন্দ দিতে হয়। কারও জন্মদিনে কাউকে হেয় করা কখনই কাম্য
হতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা, মজার ছলে এভাবে নানা কায়দায় বন্ধুদের নির্যাতন করলে
তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে এবং এমনটি হয়েও থাকে। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে এমনটি
কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। বিশেষত মজার ছলে কারও জন্মদিনে অদ্ভুত বুলিংকে দমনের
জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।