× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

বহুমুখী প্রতিভাধারী

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৪ এএম

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৬ পিএম

বহুমুখী প্রতিভাধারী

মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের স্মৃতিতে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘সাবাস বাংলাদেশ’। দাঁড়িয়ে রয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে। ‘অতীতকে ভুলো না; অতীতের ওপরই দাঁড়িয়ে বর্তমান; যার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ’Ñ এই মন্ত্রে ১৯৯১ সালে স্থাপিত ভাস্কর্যটির নির্মাতা শিল্পী নিতুন কুন্ডু। সার্ক ফোয়ারা, মা ও শিশু, সাবাস বাংলাদেশ, সাম্পান ও কদম ফুল ভাস্কর্যগুলোর নির্মাতাও তিনি। জন্ম ৩ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘বড়বন্দর’ এলাকায়। বাবা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু, মা বীণাপাণি কুন্ডু। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে নিতুন কুন্ডু তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রয়োজন থেকেই শুরু করেছিলেন সিনেমার ব্যানার আঁকার কাজ। যা দিয়ে খরচ চলত নিজের পড়ালেখার। আঁকাআঁকির নেশা ছেলেবেলা থেকেই। এই নেশা থেকেই চেয়েছিলেন আর্ট কলেজে পড়তে। কিন্তু ঢাকা রেখে তাকে পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য পরিবারের ছিল না। কিন্তু নিজের অদম্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায় তাকে বিমুখ করেনি। মাত্র ১০ টাকা সম্বল করে দিনাজপুর থেকে এসেছিলেন অচেনা ঢাকা শহরে। ভর্তি হন ঢাকার তৎকালীন আর্ট কলেজে। সময়টি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে সেরা ছাত্র হয়েই ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন করেন চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স। শিক্ষকতার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও তা পূরণ না হওয়ায় এ বছরই যোগ দেন ঢাকাস্থ মার্কিন তথ্যকেন্দ্র আমেরিকান কালচারাল সেন্টার ‘ইউসিস’-এ। ডিজাইনার হিসেবে চাকরি শুরু করে পরবর্তী সময়ে হন চিফ ডিজাইনার। মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এখানেই কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। তেলরঙ, জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, এচিং, সেরিগ্রাফ, পেনসিল বা কালি-কলমের মাধ্যমে কাজ করা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শিল্পী নিতুন কুন্ডু যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে। এ সময় ডিজাইন করেন ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান—আমরা সবাই বাঙালি’-সহ কয়েকটি পোস্টার। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে পুরোনো কর্মস্থল মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে আর যোগ দেননি।

জমানো টাকা দিয়ে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দ্য ডিজাইনার্স-এর যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানটির নাম বদল করেন ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে। আর্ট ইন ক্র্যাফট নামের প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় চলচ্চিত্র পদক তৈরির কাজ ছাড়াও নানা রকম মেডেল, ক্রেস্ট, কোটপিন, ট্রফি ও প্লাক তৈরি করত। নিতুন কুন্ডুর শখ ছিল মেটালের ওপর কাজের। এ সময় জাপানি একটি কোম্পানির ঢাকা অফিসের জন্য তার ডিজাইনে তৈরি মেটাল চেয়ার প্রশংসা কুড়ায়। যা তাকে ভিন্নধারার আসবাব তৈরিতে আগ্রহী করে তোলে। সেই আগ্রহ থেকেই নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে চালু করেন মেটাল আসবাবের দোকান। শুরু হয় ‘অটবি’ গড়ার প্রস্তুতি। আসবাবশিল্পে অটবি নিয়ে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। রুচির পরিবর্তন আনে অটবির আসবাব। কোম্পানি হিসেবে অটবি নিবন্ধন নেয় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। এরপর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অটবি। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এ সুনাম। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো অটবি আসবাব রপ্তানি করে। ইউক্রেনে পাঠানো হয় অটবির আসবাব ১৯৯৪ সালে। ইউক্রেন ছাড়া ভারত, নেপাল, কাতার, আরব আমিরাতে অটবির আসবাব রপ্তানি হয়।

স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন দেখানো এই শিল্পী ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রয়াণ দিবসে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।

  • কবি, সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা