পরিপার্শ্ব
তৌহিদ-উল বারী
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১৪ এএম
গত চার দশকে দেশে কৃষিতে যে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে তা
প্রযুক্তির অগ্রগতির ফল বলা চলে। কৃষক ক্ষতিকর পোকা ও কীট থেকে ফসল বাঁচাতে
রাসায়নিক কীটনাশক থেকে শুরু করে ইঁদুরের উপদ্রব রোধে নানা ফাঁদ ব্যবহার করে। সম্প্রতি
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং ভূমির উর্বরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায়
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীট ও জমিতে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। জমিতে ইঁদুর ও
অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে দাঁড়াশ প্রাকৃতিক পদ্ধতি হতে পারে। কৃষকের
অধিকাংশই জানেন না এ সাপ তাদের কতটুকু উপকার করে। দাঁড়াশ সাপ সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট
জ্ঞান না থাকায় দেখামাত্র আক্রমণ করে হত্যা করে।
সম্প্রতি এক জরিপে বলা হয়েছে, ইঁদুর বছরে ৭ লাখ টন
খাদ্যশস্যের ক্ষতি করে। পাশাপাশি প্রাণীটি ধানের পাক ধরার সঙ্গে সঙ্গে ফসলের
ক্ষেতে আক্রমণ চালায়। ধানের শীষ কেটে দেয়। এ ছাড়া গুদামে সংরক্ষিত ধানের ৫ থেকে
১০% নষ্ট করে; যা কৃষকসমাজ তথা দেশের কৃষিফসল উৎপাদন সংস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতি।
কৃষিজমির ক্ষতিসাধনকারী এ প্রাণীটিকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে দাঁড়াশ। কুসংস্কার,
ভয় ও দাঁড়াশ সাপের উপকারের কথা না জানায় অনেক কৃষকও এই সাপ হত্যা করছেন। প্রায়
৩৫০ সেন্টিমিটারের লম্বা এ সাপটি আবাসস্থলের আশপাশে প্রায় ৩ একর এলাকায় বিচরণ করে
এবং এ জায়গায় খুঁজে খুঁজে ইঁদুর শিকার করে। ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসলহানি ঘটে তা
থেকে রক্ষা মেলে। বাস্তবে কৃষকের বন্ধু হলেও অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের কারণে মানুষের
হাতে প্রাণ দিতে হয় তাদের প্রতিনিয়ত। গ্রামের অনেক মানুষ এখনও বিশ্বাস করেন,
দাঁড়াশ গরুকে আক্রমণ করে। গরুর দুধ চুষে খায়, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
লোকমুখে এদের বিষধর বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এদের কোনো বিষ নেই। দাঁড়াশ সাপটি যেমন নির্বিষ তেমন একেবারে নিরিহ প্রজাতির প্রাণী। হাত দিয়ে ধরলেও বেশি নড়াচড়া করে বা রেগে উঠে না। তবে কোনো কারণে এই সাপ রেগে গিয়ে কাউকে যদি কামড়ও দেয় তাতেও কিছুই হবে না। এরা কাউকে আক্রমণ কিংবা কাটলেও মানুষের মোটেই ক্ষতি হবে না। এই বিষহীন সাপটি কৃষকের বন্ধু নামে পরিচিত; তাই আমাদের সাপটি রক্ষায় ভূমিকা নিতে হবে। এদের হত্যা রোধে উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে হবে। সাপটি সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটাতে সরকারের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ক্যাম্পেইন চালানো প্রয়োজন। সাপটির উপকারের কথা কৃষক তথা সাধারণ মানুষকে অবহিত করা সম্ভব হলে ইঁদুরের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষা হবে। রক্ষা পাবে কৃষকের নীরব বন্ধু খ্যাত দাঁড়াশ। সম্প্রতি পালিত হলো ‘সর্পদংশন সচেতনতা দিবস’। এ দিবসে শুধু বিষধর সাপের বিষয়েই সচেতনতা বাড়ানো জরুরি এমন নয়, যে সাপ ক্ষতিকর নয় বা নির্বিষ তাদের সম্পর্কেও জানা জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না, সাপ ইঁদুরের মতো ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষত মানুষের বসতি রয়েছে এমন এলাকায় ইঁদুর নানাবিধ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইঁদুর থেকে নানা ভয়াবহ রোগও ছড়ায়। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা কাম্য।