জাতিসংঘের সম্মেলন
রিচার্ড রথ
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১৮ এএম
রিচার্ড রথ
১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে
সম্মেলনে হাজারো ভাষণ, অধিবেশন শেষে বিশ্বশান্তির কথাই গুরুত্ব পেয়েছে বেশি।
জাতিসংঘ এই আয়োজনে বিশ্বশান্তি ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হয়েছে কি না, সেটিই এখন দেখার
বিষয়। অবস্থাদৃষ্টে বিশ্বশান্তির প্রত্যাশা আপাতত করা যাচ্ছে না। সম্মেলনের শুরুতে
যে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে সেগুলোর সমাধানের উপায় নিয়েও অনেক কথা হয়েছে, সামনে আরও
হবে। এবারে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যা, আফ্রিকা অঞ্চলে একাধিক
ক্যু, বিশ্বের উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যে অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের সংকট, হাইতির
সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরও অসংখ্য সমস্যা আমাদের সামনে এসেছে। তবে এসব জটিল
আলোচনার গুরুত্ব এবং তার সমাধানের আভাস অনেকটাই কম। কারণ জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যের
পাঁচটি দেশের মধ্যে মাত্র একটি দেশের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি এবারের অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে এবার জো
বাইডন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। অন্য স্থায়ী চার সদস্যের অন্যতম ফ্রান্সের
প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো অধিবেশনে যোগ দেননি। তিনি ফ্রান্সেই রয়েছেন। কারণ কিং
চার্লস সফর করছেন ফ্রান্স। তাকে স্বাগত জানাবেন মাখোঁ। তা ছাড়া নাইজার থেকে সুদান
পর্যন্ত সংকট নিরসনে তাকে কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও এবারের
অধিবেশনে অংশ নেননি, যা তার দেশের জন্যও একটি বিরল ঘটনা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন এবারে অংশ নেননি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
তিনি দেশের বাইরে এলেই গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে এ কারণেই
ভ্লাদিমির পুতিন অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কখনও জাতিসংঘের
সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেননি। সেই ধারাবাহিকতাতেই এবারও আসেননি।
যত যাই হোক, তারপরও বিশ্বের ১৪০টি
রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এবং সরকারপ্রধান এই অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। কেউ যদি
জাতিসংঘের দিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ না-ও রাখেন তারপরও তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ইউএনটিভিতে
অধিবেশনের কার্যক্রম দেখতে পেয়েছেন। যেখানে ব্রাজিলের নীতিনির্ধারকের ভাষণের পর
যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং কিউবার প্রতিনিধির ভাষণ শুনে দেখতে পারেন। বিরাট এই
আয়োজনে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরা অংশ নিয়েছেন। ইউক্রেনের
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অংশ নেবেন। এবার তিনি সশরীরেই অংশ নিচ্ছেন। এর আগে
জাতিসংঘে বিশাল স্ক্রিনে তাকে ভাষণ দিতে দেখা গেছে। এবার সাধারণ পরিষদের হলে তাকে
দেখতে পাওয়ার সঙ্গে ভূরাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গেও তার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যকার দ্বন্দ্বের
সমস্যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সমাধান করার প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। আর
এই দ্বন্দ্বের কারণেই জাতিসংঘে সম্পর্ক ঠিক করার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। সুইস
অ্যাম্বাসাডর নিজেও জাতিসংঘের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ
করেছেন। তার মতে, জাতিসংঘ এবং চীনের মধ্যে শীতল সম্পর্ক চেম্বারে বাড়ায় অনেক
সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বরাবরই বলে
আসছে, প্রতিটি রাষ্ট্র যেন রাজনৈতিক অবস্থাকে ভূরাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে।
বরং প্রতিটি রাষ্ট্রকে মানবাধিকার প্রসঙ্গটি গুরুত্ব দিয়ে চলতি সপ্তাহের সমাবেশকে
সফল করার বিষয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করার তাগাদা দেওয়া হয়। জাতিসংঘের চলতি
সপ্তাহের সমাবেশে ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের সমস্যা ও চাহিদার বিষয়গুলো সামনে তুলে
আনতে পারবে। তাই এই সপ্তাহের অধিবেশনে পরাশক্তিদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সবার সামনে
আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসাডর লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড।
নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ
আলোচনা হবে আজ (২০ সেপ্টেম্বর)। এখানে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের
সঙ্গে জেলেনস্কির মুখোমুখি আলোচনায় উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরির শঙ্কা রয়েছে, যদি তিনি
যোগ দেন। তা ছাড়া জাতিসংঘ প্রধান আন্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে রাশিয়া, তুরস্ক এবং
ইউক্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে জাতিসংঘ
রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর খাদ্যশস্য চুক্তি ফের বাস্তবায়নের বিষয়ে তাগাদা দিতে পারবে।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নিউইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক আয়োজিত হবে না। গুতেরেস
জানিয়েছেন, ‘নিজের শক্তি ব্যবহার করে অন্যদের ওপর যারা সহিংস আচরণ করে গণতন্ত্রকে
সীমাবদ্ধ করে চলেছে, তাদের প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিতেই হবে।’ রাশিয়া অবশ্য
প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলা করে গণতন্ত্রকে ইতোমধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।
২৫ সেপ্টেম্বর এসডিজি লক্ষ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। এসডিজির ১৭টি ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দারিদ্র্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপাতত ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ঘুরে দেখতে পারে। কিন্তু অধিবেশনের সপ্তাহে কাউকে এখানে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় না। অনেকে হয়তো বাইরে থেকে নানা ধরনের দাবির কথা তুলতে পারেন বাইরে। তবে লিমুজিনের শব্দে সে দাবি আর শোনা যাবে না। প্রতি বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কয়েকজন বহিরাগতের দেখা মেলে। এবার টেনিস তারকা রজার ফেদেরার অংশ নিচ্ছেন। প্রিন্স উইলিয়াম, তার স্ত্রী ক্যাথারিন, ওয়েলসের প্রিন্সও এবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করবেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন তাই এখন রেসলিংয়ের ওই রয়্যাল রাম্বলের মতো অবস্থায়। কেউ কূটনৈতিক বিষয় এখন উল্লেখ করার মতো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আরও একটি সপ্তাহ শুধু মৌখিক বক্তৃতার মাধ্যমে একটি বিষয়ই বারবার উঠে আসবে, বিশ্বে সংকটের শেষ নেই।
সিএনএন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন