× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চিকিৎসা

অসহায় খালেদা জিয়া, অক্ষম বিএনপি

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৩০ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

মহিউদ্দিন খান মোহন

এ মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত অসহায় বলেই মনে হচ্ছে। একসময় প্রতাপশালী নেত্রী আজ বন্দি অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। দলের নেতারা তার মুক্তির দাবিতে হম্বিতম্বি করলেও কার্যকর কিছু আজ পর্যন্ত করতে পারেননি। প্রমাণ হয়ে গেছে দলটি তাদের নেত্রীর জন্য কিছু করতে অক্ষম।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর নেত্রীর মুক্তি দাবিতে সরকারকে আটচল্লিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল বিএনপি। নেতারা বলেছিলেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর অনুমতি দিতে হবে। অন্যথায় তার কিছু হয়ে গেলে সে দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। বিএনপি নেতাদের এ আল্টিমেটামের কথা শুনে আমি ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। এ কেমন আল্টিমেটাম, যেখানে সরকারকে বাধ্য করার মতো কোনো কর্মসূচির কথা নেই? সাধারণত আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কঠোর কোনো কর্মসূচির আগে সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিতে। বলা হয়ে থাকে, সরকার বা কর্তৃপক্ষ যদি বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে দাবি না মানে, তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলন বা কঠিনতম কর্মসূচিতে যাবে। অবশ্য বিএনপি এর আগেও অসংখ্য আল্টিমেটাম দিয়েছে বর্তমান সরকারকে। বলাই বাহুল্য, তাদের সেসব আল্টিমেটামের হুংকার ইথারে ছড়িয়ে ভাসতে ভাসতে একসময় বিলীন হয়ে গেছে, কোনো লাভ হয়নি।

আমার ধারণা ছিল, নেত্রীর কারাবন্দিত্বের পাঁচ বছর পর তারা হয়তো আক্ষরিক অর্থেই সরকারকে এ বিষয়ে ‘আল্টিমেটাম’ দিল, যা একটি কার্যকর ফল বয়ে আনবে। কিন্তু হা হতোস্মি! এটাও সেই গতানুগতিক আল্টিমেটাম। একটি রাজনৈতিক দল, যার বিপুল কর্মী ও সমর্থক রয়েছে, তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে না, এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে? বিএনপির ওই আল্টিমেটামের সারমর্ম ছিল, সরকার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়াকে যদি মুক্তি না দেয়, তাহলে তার কিছু হলে সে দায় সরকারের ওপর বর্তাবে। এটা কি সরকাকে চাপে ফেলার জন্য, নাকি নিজেদের ব্যর্থতার দায় অপরের কাঁধে (এখানে সরকার) চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস? এ ধরনের আল্টিমেটাম কোনো সরকারকে বিচলিত করতে পারে না, এটা বলাই বাহুল্য। যদি বলা হতো, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে না পাঠালে দেশকে অচল করে দেওয়া হবে তাহলে সরকার হয়তো দ্বিতীয়বার ভাবত। না, তাই বলে এটা ভাবার অবকাশ নেই, আমি বিএনপিকে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য উসকে দিচ্ছি। তবে পৃথিবীর কোথাও জনজোয়ার সৃষ্টি ব্যতিরেকে কোনো আন্দোলন সফল হয়েছে এমন নজির নেই। তা ছাড়া আন্দোলনের সফলতার অন্যতম একটি শর্ত হলোÑ কর্মসূচির ধারাবাহিকতা। ২৪ সেপ্টেম্বরের আল্টিমেটামের পর নতুন কোনো কর্মসূচি দিতে বিএনপিকে আগ্রহী মনে হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির সমর্থক ও খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল এক ব্যক্তি বললেন, ‘আসলে ম্যাডাম বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের কাছে গৌণ হয়ে গেছেন। ফলে তার মুক্তির বিষয়টি তাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।’

অটচল্লিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর বিএনপি এখন কী করবে এমন প্রশ্ন উঠেছে। গত ২ অক্টোবরের প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রধান প্রতিবেদনে সে বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করা হয়েছে। ‘বিএনপি এখন কী করবে’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলটির নেতারা মনে করছেন, চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে এখন বর্তমান সরকারের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য আন্দোলনের গতি বাড়াবার তাগিদ অনুভব করছেন দলটির নেতারা। তবে বিএনপির এ ভাবনাচিন্তার কথা শুনে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগে থাকবে, সে নয় মণ ঘি কবে পুড়বে? কেননা, বিএনপি এই সরকারের পতন আদৌ ঘটাতে পারবে কি না, তা একটি প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন তার পরিবার তাকে বিদেশে নিতে চাইলে আবার তাকে জেলে যেতে হবে। তারপর আবেদন করতে হবে। এর একদন পর তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই। অপরদিকে প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না আইনমন্ত্রী মিথ্যা বলেননি মন্তব্য করে বলেছেন, ব্যতিক্রম সবখানেই আছে। ফাঁসির আসামিকেও প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। এটি শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। আর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়ার আবেদনকে আইনগতভাবে বিবেচনা না করে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করেছে। এর মাধ্যমে সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে ভয়ংকর তামাশা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এটা অনস্বীকার্য যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন আর রাজনীতি বা আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন মানবিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা তার অসুস্থতা এখন এমন পর্যায়ে রয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সুতরাং সচেতনরা মনে করেন, আইনের ফাঁকফোকর বলে যে কথাটি বাংলায় চালু আছে, তার ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টির সুরাহা করা যায়। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। রাজনৈতিক বৈরিতা এক পাশে সরিয়ে রেখে আইনের মাধ্যমেই (প্যারোলে) তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিয়ে সরকার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে; যা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হবে। প্রয়োজনে যে দেশে তিনি চিকিৎসা করাবেন, সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বিক বিষয়টি দেখভাল করবে; যাতে চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। কারণ এখন তার চিকিৎসা ও জীবন সবচেয়ে বড় বিষয়, রাজনীতি নয়। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নিতে পারেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তারা ছিলেন সহযোদ্ধা। যদিও আজ দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে। সময়ের ব্যবধানে তারা আজ পরস্পর বিচ্ছিন্ন। দূরত্ব যোজন যোজন। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে, যেখানে দূরত্ব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। খালেদা জিয়ার সাবেক একজন কর্মী হিসেবে তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করি।

এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত দিয়েছে। সত্যমিথ্যা জানি না। যদি তা-ও হয়, তাহলেও বিএনপির রাজি হওয়া উচিত। ২০১৮ সালে বিনা শর্তে কিছু না পেয়ে নির্বাচনে যেতে পারলে নেত্রীর মুক্তির বিনিময়ে এবার যেতে অসুবিধা কোথায়?

  • সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক 
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা