× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যস্ফীতি

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রহস্যময় সমস্যা

সিরাজ হুসেইন

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:২২ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রহস্যময় সমস্যা

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সত্যিই রহস্যে ঘেরা। দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চললেও দেশটির অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে, খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়া জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া এখনও দারিদ্র্য ও অপুষ্টির ভারে জর্জরিত। সারা বিশ্বে দরিদ্র মানুষের ৪২ শতাংশই এই অঞ্চলের। সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৈপ্লবিক সাফল্য সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো মানবিক উন্নয়নের দিকে পিছিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াকে রহস্য বলার হাস্যকর আরেকটি কারণ বলা জরুরি। দারিদ্র্য ও অপুষ্টির মতো সংকট থাকার পরও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ প্রচুর ক্যালরি গ্রহণ করছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষই স্থূলকায়।

প্রায় দুই বছর করোনা মহামারি দক্ষিণ এশিয়াকে স্থবির করে রেখেছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে সারাবিশ্বে খাদ্য এবং জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হয়। ফলে মূল্যস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। গত বছর নভেম্বরে জার্মানিতে খাদ্য-মূল্যস্ফীতি ২১ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছায়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তুরস্ক ও আর্জেন্টিনায় খাদ্য-মূল্যস্ফীতি ১০৩ শতাংশ এবং ৯২ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যাটি রহস্যময়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে খাদ্য-মূল্যস্ফীতি ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছায়। পাকিস্তানের প্রধান খাদ্য চাল ও গমে খাদ্য-মূল্যস্ফীতি পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। নেপাল অবশ্য খাদ্য-মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশে আটকে রেখেছিল। বাংলাদেশও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করছে খাদ্য-মূল্যস্ফীতি। ভারত সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। খাদ্য সংকটের কথা ভেবে সম্প্রতি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় ভারতে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের পথে।

ভারতের প্রায় ৩০ শতাংশ নাগরিক নিরামিষ আহার করেন। আমিষের ক্ষেত্রে তারা ডালের ওপর নির্ভর করেন। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হয় এবং এসব খাদ্যপণ্যের দাম যতটা সম্ভব কম করার বিষয়ে ভাবতে হয়। ভারত বিশ্বের প্রধান ছোলা উৎপাদনকারী দেশ। সরকার ভর্তুকি দিয়ে ছোলার দাম ভোক্তা পর্যায়ে এখনও কম রাখছে। ডালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য ভারতকে মোজাম্বিক, মালাওয়ি ও মিয়ানমারের সঙ্গে মধ্যমেয়াদি চুক্তি করতে হয়েছে। অড়হর ডালের দাম বেঁধে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে করোনাকাল থেকেই কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। বিশেষত মশুর, মুগ ও অড়হর ডাল অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য ২০২১ সালে বিশেষ আইন জারি করা হয়। অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাজারের গতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়ে ভারত সরকার যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছে। ভোজ্য তেলের বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে ভারত সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। উপরোক্ত নানা উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, ভারত অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্য-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে।

আন্তঃবাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনের (আইসিআরআইইআর) এক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়া ৫ দশমিক ৬ শতাংশ আন্তঃবাণিজ্য হয়। অন্যদিকে পূর্ব এবং প্যাসিফিকের আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। অবশ্য এই অঞ্চলের অধিকাংশ বাণিজ্যিক লেনদেনই তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানো হলে সব রাষ্ট্রই উপকৃত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার উদ্বৃত্ত খাদ্যপণ্য এই অঞ্চলে রপ্তানির মাধ্যমে একে অপরের ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। বিশেষত, কৃষিপণ্যের মূল্যের গড়পতন অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব হবে। এই উদ্দেশ্য সফল করতে হলে পণ্যের গুদাম এবং পরিবহনের উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে। অথচ নানা ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের খাদ্য-মূল্যস্ফীতি রহস্যজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ভোক্তা পর্যায়ে বিড়ম্বনা পরিমাণ বেড়ে চলেছে। যদি এই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যকাঠামো গড়ে তোলা যায়, তাহলে তিনটি রাষ্ট্রই উপকৃত হবে। ২০১৭ সালে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ১৪টি সিএসপি চুক্তি সম্পন্ন করে। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্য এই চুক্তির মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের করিডোর গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আর এভাবে আরব উপসাগর অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের সংকট মেটানোর সুযোগ করে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য। ভারতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, দুধ, মাংস, পোল্ট্রি ও মৎস্যসম্পদ এখন মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াতেও এমন মুক্ত বাণিজ্যিক পথ উন্মুক্ত করা জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো যেহেতু আঞ্চলিক শক্তি সংগঠন গড়ে তুলেছে, তাই প্রতিটি রাষ্ট্র আলাদা নীতিমালা গড়ে তোলার কাজটিকে কঠিন বলে মনে করবে না। পচনশীল খাদ্যশস্য মুক্তবাণিজ্যের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সহজেই সরবরাহ করা যাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণে উৎসাহ বাড়াতে হলে তার সরবরাহ ও মূল্যমান সহনশীল রাখার বিকল্প নেই। এই অঞ্চলে কয়েকটি রাষ্ট্রে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা বিবেচনায় দ্রুত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি উৎপাদন এমনিতেও হুমকির মুখে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ছয়টি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারা জানিয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি ২ শতাংশ হারে এবং ২১০০ সালে তা ৯ শতাংশ হারে কমবে। দাবদাহ আরও ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে। আন্তঃবাণিজ্যিক কাঠামো না থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজার প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এমনটি কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। জনগণের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংবেদনশীল নীতিমালা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে সংকট সমাধানেও সচেষ্ট হতে হবে। এই অঞ্চলে দরিদ্র মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন সুসংহত রাখা জরুরি। তবে মুক্ত বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারলে যেকোনো বিচ্যুতির সময়ে ঘাটতিপূরণ অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে।


  • ভারতের সাবেক কৃষি সচিব

দ্য ওয়াইর থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা