প্রজন্মের ভাবনা
তামান্না আক্তার
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২৯ পিএম
কাঠামোগত ঘাটতি
এবং নানা সংকট থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে না। শিক্ষাজীবনের
গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। এর ওপর নির্ভর করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। শিক্ষাজীবনের
এ অংশেই মানুষ প্রতিষ্ঠানের নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি নেয়। অথচ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন ধীরগতি ও আক্ষেপের অন্য এক নাম। বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘিরে শিক্ষার্থীদের
হতাশা বাড়ছে। দুশ্চিন্তা তাদের ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে। সেশনজট, খাতা
সঠিক মূল্যায়ন না করা, ফলাফল দেরিতে দেওয়া এমন আরও সমস্যার কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাড়ছে দুর্ভোগ। অথচ এসব সমস্যা সমাধান করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
হয়ে উঠত আরও চৌকশÑ এ কথা বহু পুরোনো। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, এগোচ্ছেনও তারা। এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সমাধান
করলে আরও উন্নয়ন করবেন নিশ্চিত। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পড়াশোনা শেষে বেকারত্বের খাতায়
নাম বাড়ছে, আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এগুলো কমাতে হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার
মান উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আজকের তরুণ উন্নয়নের চাবিকাঠি,
জনশক্তি হিসেবে তখনই পরিণত হবে যখন সে নিজে তার যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধার সঠিক মূল্যায়ন
পাবে এবং প্রয়োগের মাধ্যম পাবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মান সম্পর্কে নেতিবাচক অভিযোগ অনেক পুরোনো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মানসম্পন্ন শিক্ষা ও অবকাঠামোগত সুবিধা
পায়। তারা এ সুবিধার মাধ্যমে ভালো ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারে। অথচ অভিযোগ আছে, চাকরির
বাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুনলেই অনেক প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি
বাদেও তাদের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। সুযোগ না দিয়েই বিচার করে ফেলার পদ্ধতিতে
পরিবর্তন আনতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা। সঠিক শিক্ষার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন
জরুরি। যারা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ গ্রহণ করেন তারা আবাসন, ক্লাসরুম, ক্যাম্পাসে
স্থানের সংকটে ভোগেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যান্টিন, ক্লাব,
সংগঠন, থিয়েটার, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজনের যে পরিসর প্রয়োজন তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
অধিভুক্ত অনেক কলেজেরই নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার
সুযোগ পান না। যারা পরিশ্রম করেন তারাও হন অবমূল্যায়নের শিকার। শিক্ষাজীবনে শিক্ষার্থী
সঠিক শিক্ষার সুযোগ না পেয়ে নিজেকে অন্ধকারে হারিয়ে ফেললে তা দুঃখজনক। প্রত্যাশা-প্রাপ্তির
পাল্লা ভারী করতে গিয়ে হতাশা, দুশ্চিন্তা, বেকারত্বের পাল্লা ভারী হচ্ছে রোজ! জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট, শিক্ষার মান অবনতি, অবমূল্যায়ন, অবহেলা, হতাশা, বেকারত্ব
এ শব্দগুলো মুছে যাক। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামÑ এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন
করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন করছে
কিন্তু আরও উন্নতির জন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি
আরও গতিশীল করলে আমরা সাফল্য দ্রুত পাব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
কমবে।