× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জননিরাপত্তা

রাজনীতি কেন জীবনবৈরী হলো

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৩ পিএম

রাজনীতি কেন জীবনবৈরী হলো

জনসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিএনপি হরতাল এবং এরপর টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে ৩১ অক্টোবর থেকে তাদের কর্মসূচি শুরু হয়েছে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ করা গেল, কর্মসূচির প্রথম দিনেই সহিংসতায় হতাহতের মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে সড়কে সহিংসতা, গাড়ি ভাঙচুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করে রাজপথে সহিংস কর্মসূচি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, শান্তির আবহ নষ্ট করে চরম অশান্তির পথে চলেছে রাজনীতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী আয়োজনকে ভণ্ডুল করার জন্যই যে এই অবরোধ কর্মসূচি, তা না বোঝার কারণ নেই রাজনৈতিক সংকটের কারণে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে না পারলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করা যাবেÑ এমনটিই হয়তো আন্দোলনকারীদের ধারণা আর সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করা গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণয়নের পথ কিছুটা হলেও উন্মুক্ত হবে-এও তাদের বিশ্বাস

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সমাবেশ করার অধিকার প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে ২৮ অক্টোবর সরকারের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগসহ আরও অনেক দলই সমাবেশ করেছে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি গণতন্ত্রের শোভাবর্ধন করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশ করার অনুমতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে শান্তিপূর্ণ বললেও ওই দিন সমাবেশ পালনের শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়ানোর লক্ষ্য লুকিয়ে ছিল অভিযোগ রয়েছে, অনেকে পুলিশের সদস্য না হয়েও পুলিশের পোশাক পরে সমাবেশে আসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এদের শনাক্তও করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে জনসমাবেশে আসার বিষয়টি সঙ্গতই শঙ্কা উদ্বেগ বাড়ায় এমনটি যে সহিংসতার পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল, তা বোঝা কঠিন কিছু নয়

বিএনপির মহাবেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা জনসমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা, প্রধান বিচারপতির বাসস্থলে হামলা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, বাসে আগুন দিয়ে অন্য কারও ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মতো জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে শুধু তাই নয়, এক বাংলাদেশিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা বানিয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের মতো লজ্জাজনক ঘটনাও আমরা দেখেছি ৩১ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে যে চিত্র দৃশ্যমান হয় তা গণতন্ত্রের সংজ্ঞাসূত্রের চরম লঙ্ঘন সবদিক বিবেচনায় বিএনপির সহিংস কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই জনসমর্থন আদায় করতে পারেনিÑ গত হরতালে তা- প্রতীয়মান হয়েছে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ পথ অনুসরণ করলে তা প্রশংসনীয় হতো কিন্তু সেদিকে না গিয়ে সহিংসতার মাধ্যমে রাজনীতিকে ভিন্নপথে চালিত করার এই প্রক্রিয়া দেশ-বিদেশে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে কণ্টকাকীর্ণ করবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের পথকেও কেন জনকল্যাণের রাজনীতি জীবনবৈরী হয়ে দাঁড়াল সচেতন মানুষ মাত্রই এর উত্তর অজানা নয়

কথা সত্য, আন্দোলনকারীরা বর্বরতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন তবে ওই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের প্রক্রিয়াটি জনসমর্থন আদায় করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বরং তাদের রাজনৈতিক অর্জন বা পুঁজি নষ্ট হয়েছে দেশের মানুষ অতীতেও বিভিন্ন পর্যায়ে সহিংসতা বর্জন করেছে এবারও তারা সহিংসতার পথ বর্জন করার মানসিকতা দেখিয়েছে অতীতেও যতবার সংঘাত-সহিংস পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তখনই আমরা দেখেছি দেশের মানুষ তা বর্জন করেছে কারণ সংঘাত-সহিংসতার ভুক্তভোগী সব সময় সাধারণ মানুষ সাধারণ মানুষকেই নানাভাবে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় যখনই হরতাল-অবরোধ দেওয়া হয় তখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় পরিপার্শ্ব হয়ে ওঠে অনিরাপদ এই অনিরাপত্তার মধ্যেই অনেককে জীবিকার সন্ধানে বের হতে হয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক হলে জনভোগান্তি আরও বাড়ার শঙ্কা থাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেটে খাওয়া মানুষরাই সহিংসতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে সাংবাদিকরা থাকেন বিশেষ ঝুঁকিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তারা কতর্ব্য নিষ্ঠার পরিচয় দিতে গেলেই একটি পক্ষ তাদের ওপর চোখ রাঙায় ২৯ অক্টোবর হরতাল চলাকালে আহত একজন সাংবাদিকের পরদিন প্রাণহানি ঘটে চিকিৎসারত অবস্থায়, আরও অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন সংঘাতের রাজনীতি এজন্যই জনজীবনের জন্য চরম ক্ষতিকর অর্থনীতির নানা খাত স্থবির হয়ে পড়ে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের অর্থনীতিকে ধীর করে দেওয়ার কর্মকাণ্ড সমর্থন পেতে পারে না

সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিষয়টি নতুন নয় হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভুতুড়ে প্রতীয়মান করার মাধ্যমেও কিছু রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা যায় প্রথমত, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে যত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা সম্ভব হবে ততই ভালো, বিরোধী পক্ষ এমনটিই মনে করে তা ছাড়া এভাবে বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়টিও রয়েছে বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির ওপর গভীর মনোযোগ রেখে চলেছে তাদের বোঝানো হচ্ছে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নেই তবে আমাদের প্রত্যাশা, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান থাকবে দৃঢ় বৈদেশিক চাপ যেমন আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসন করতে পারবে না তেমনি আমাদের অর্থনীতিকেও স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে পারবে না তা ছাড়া জাতীয় ভাবমূর্তির জন্যও তা স্বস্তির নয় তাই দেশ-জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের অনুধাবন করতে হবে

সমস্যা হলো, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আসার ব্যাপারে বিএনপির কিছুটা অনীহা রয়েছে মূলত এক্ষেত্রে রয়েছে আস্থার সংকট তাছাড়া তাদের এও হয়তো ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভোট তাদের নেই যদি তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ও তারপরও তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারবে নাÑ এমন ভীতি তাদের আছে ধরনের কথা শোনা গেছে তাই তারা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে তাদের অবস্থান নিয়েছে আর জনসমর্থন তাদের কম বিধায় তারা কিছু অজুহাত তৈরি করতে চাচ্ছেÑ এও অনেকের অভিযোগ তার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব অন্যতম হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে এই সংহতি নষ্ট করার একটি পরিকল্পনা তারা নিয়েছেÑ অভিযোগও আছে এভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে জনসমর্থন নষ্ট হবে আরও অভিযোগ আছে, এই সহিংস কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি অনেক পক্ষের মদদ রয়েছে বিদেশিদের মদদ পেয়ে তারা সহিংসতার পথেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার রুট সম্ভবত তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে এবং এভাবেই তারা ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষ সহিংসতা চায় না মানুষ চায় দেশে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক জনগণ চায় নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, আর ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা পরবর্তী পাঁচ বছরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমনটিই হওয়া উচিত রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌশলের প্রয়োগ করতে কোনো দোষ নেই তবে অপকৌশল কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না

রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতার শিকার সব সময় সাধারণ মানুষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের নামে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলেরই নেই জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিলে তা জনসমর্থন পাবে এমনটি ভাবা মোটেও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে না বরং তা বিদ্যমান গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হবে চরম হানিকারক আমাদের প্রত্যাশা, রাজনীতিকরা দায়িত্বশীলতা বা দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবেন এবং এখনও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের পথটি মসৃণ করবেন সহিংসতার সব পথ রুদ্ধ করতেই হবে যদি রাজনীতির শ্রী ফেরাতে হয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অহিংস আন্দোলন কিংবা অধিকার আদায়ের কর্মসূচি কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা দেশের রাজনীতিতে এসব কিছুরই অনুপস্থিতি দেখছি আমাদের রাজনীতির অর্জন যেমন ব্যাপক তেমনি বিসর্জনও কম নয় বিসর্জনের পেছনে যাদের কর্মকাণ্ড মুখ্যত দায়ী তারা তো দেশ-জাতির মিত্র হতে পারেন না গণতান্ত্রিক আন্দোলন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞাসূত্র অনুসারে হোক, কোনোভাবেই জনজীবন বিপন্ন করে কিংবা হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে নয়


  • নিরাপত্তা বিশ্লেষক  নির্বাহী পরিচালকইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট  অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা