সম্পাদক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৪৬ এএম
আলু-ডিম-পেঁয়াজের মাত্রাছাড়া দরে চিন্তা বাড়ছে সাধারণের। শুধু এসব পণ্যই নয়, সব নিত্যপণ্যের দামেই নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। অনেক দিন ধরেই সাধারণ মানুষের পকেট পুড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিএনপি ও সমমনাদের টানা অবরোধ কর্মসূচি। এর প্রভাবে বেড়েছে মালামাল পরিবহন ভাড়া। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরোধ কর্মসূচির কারণে রুটভেদে ট্রাকভাড়া বেড়েছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। ভাড়া বাড়ানোর পেছনে পরিবহন মালিকদের যুক্তি, হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে তাদের পণ্য পরিবহন করতে হয়। সড়কের কোথাও পরিবহনটি ভাঙচুর বা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হলে ক্ষতি তো তাদেরই। আবার ফিরতি পথে স্বাভাবিক সময়ের মতো ভাড়াও পাওয়া যায় না। তাই বাড়ছে পরিবহন ভাড়া। যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এতে শুধু আলু-ডিম-পেঁয়াজই নয়, চালসহ সব ভোগ্যপণ্যেই প্রভাব পড়ছে। বাড়ছে দাম। সাধারণের কাছে যা হয়ে উঠেছে গোদের উপর বিষফোড়া।
ইতঃপূর্বে সরকার
আলু-ডিম-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
রাখতে দেশে প্রথমবারের মতো ডিম এবং আলু আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়। আলু আমদানির অনুমতির
পর গত ২ নভেম্বর ভারত থেকে দেশে এসেছে ২৩২ টন আলু। এতে তাৎক্ষণিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় প্রতি কেজি আলুতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমলেও এর বড়
প্রভাব দেখা যায়নি রাজধানী ও আশপাশের বাজারগুলোতে। অন্যদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে
তিন দফায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এর দীর্ঘদিন পর দেশে আসে মাত্র ৬১ হাজার
৯৫০ পিস ডিম। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার বাজারে প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে ৪ কোটি পিস
ডিমের। সেখানে প্রায় ৬২ হাজার পিস ডিম আমদানি ‘সিন্ধুতে বিন্দুসম’ বলেই বাজারে এর কোনো
প্রভাব পড়েনি। আর এরই সত্যতা যেন ‘আলু ডিমে এখনও নেই আমদানির সুফল’ শিরোনামের প্রতিদিনের
বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত সংবাদ। ৭ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আলু ও ডিম আমদানি
শুরু হলেও রাজধানী ও আশপাশের বাজারগুলোতে এ দুটি পণ্যের দামে কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি।
ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি। আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি
১১০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।’ আলু-ডিম আমদানির অনুমতিতেও
সাধারণ মানুষের নিত্যযন্ত্রণা যে কমেনি, সেটা স্পষ্ট। এ দুটো পণ্যের লাগাম ছাড়ার মধ্যেই
পেঁয়াজের দামও সেদিকেই হাঁটছে।
আমাদের বাজারে
চাহিদা এবং তার জোগানের মধ্যে ফারাক নেই। বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন
থেকে স্পষ্টÑ বাজারে কোনো পণ্যেরই ঘাটতি নেই। তারপরও দাম বাড়ার বিষয়টি অযৌক্তিক। কিন্তু
সেই অযৌক্তিক কাজটিই দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। দফায় দফায় পণ্যগুলোর দাম বাড়ছে। তা থেকে ক্রেতাদের
স্বস্তি দিতে সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার কাজটিও করে। ইতঃপূর্বে আলু,
ডিম ও দেশি পেঁয়াজের মতো কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু এসব পণ্য নির্ধারিত দামে তো নয়ই, উপরন্তু আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে
পণ্য আমদানির অনুমতিসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু তার কোনোটিরই দৃশ্যত সুফল মেলেনি।
তাই আমরা মনে করি, বাজারের দর বেঁধে দেওয়াই শুধু নয়, বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার
জন্যও উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনার শর্তগুলো যেন যথাযথভাবে পালিত
হয়, তা নিশ্চিত করাও আবশ্যক। এ কাজে প্রধান অস্ত্র হতে পারে বাজারে নজরদারি এবং ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ। ক্রেতার অসহায়তা দূর করার দায়িত্ব নিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে। বাজারের শর্তগুলো যেন যথাযথভাবে পালিত হয়, বাজার যেন সিন্ডিকেটের
কবলে না পড়ে, সেই দিকগুলো নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নিশ্চিত হবে ক্রেতার ন্যায্যতা। এক্ষেত্রে
নজরদারির ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথা
শুধু ভাবনাতে রাখাই এখন জরুরি নয়, সেই সঙ্গে স্বনিয়ন্ত্রিত এবং ক্ষমতায়িত নজরদারি সংস্থার
কার্যক্রম বাড়ানোও অপরিহার্য। ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে, তাদের জীবনযাপনকে নির্বিঘ্ন রাখতে
পণ্যের দাম বাগে আনতেই হবে। নজর দিতে হবে অর্থনীতির গতি বাড়ানোয়।