সাধারণ্যে
শিমশন সরকার। বয়স আনুমানিক ৫৬-৫৭। বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। আনুষ্ঠানিক পড়ালেখা প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত। স্ত্রী রেখা সরকার। তাদের তিন সন্তান। শিমশন সরকার স্ত্রী রেখাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর ২-এর পূর্ব মনিপুরে একটি খাবারের দোকান চালান। তার সঙ্গে আলাপনের কিছু অংশ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো…
ঢাকায় কতদিন?
অনেক দিন। ১৯৭৯
সালে প্রথম এসেছি। তখন থাকতাম বাড্ডায়। কাঠের কাজ করতাম। এখনও করি। তবে তা করি কোনো
অফিসে কাজের অর্ডার থাকলে। ব্যক্তিগত কাজ করি না।
মিরপুরে কবে এসেছেন?
মিরপুর এসেছি
তাও প্রায় ৩৬-৩৭ বছর। এ এলাকায় আসি ১৯৮৬ সালে। এখানেও শুরুতে কাঠের কাজই করেছি। পরে
দেই খাবারের দোকান। তবে এটা শুরু করেছি অনেক দেরিতে। এ দোকান দিয়েছিলাম ২০১৪-১৫ সালের
দিকে।
কাঠের কাজ ছেড়ে হঠাৎ খাবারের দোকান?
এটা অনেকটা শখ থেকেও বলতে পারেন। হাতে তো সব সময় কাজ থাকে না। তো এ অবসর কী করে কাটাব? এদিকে-ওদিকে আড্ডা দেব, এর-ওর দোকানে বসে থাকব? তার দরকার কী? আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই কাজ করতে পারি। তাহলে বসে থেকে লাভটা কী? আবার শুধু বসে থাকলে তো সংসার চলবে না। তেমন তো সম্পদও নেই যে বসে বসে খাব। আর কাজের ভেতরে থাকলে ভালো লাগে। হাতে কাজ না থাকলেই বরং অশান্তি। এজন্যই দোকান দেওয়া।
খাবারের দোকান চালাতে কেমন লাগে? নানানরকম মানুষ, নানানরকম পছন্দ, সামলান কী করে? মানুষকে খাওয়াতেই বা কেমন লাগে?
শুরুতে দিয়েছিলাম
চায়ের দোকান। কিন্তু এখানে হরেকরকমের ভিড়। আড্ডা। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া। আমরা স্বামী-স্ত্রী
কেউই সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারি না। সেজন্যই চায়ের দোকান থেকে সরে আসি। ভাবি নাশতার
দোকান দেব। সে ভাবনাতেই রুটি বানানো শুরু। আজকে তো আট-দশ বছর হয়েই গেল। ভালোই লাগে।
মানুষকে খাওয়ানোর মধ্যেও আনন্দ আছে। খেয়ে ওঠা মানুষের তৃপ্তির মুখ দেখে ভালো লাগে।
বাজারে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে মিলিয়ে পোষায়?
হ্যাঁ, যা আসে
তাতেই খুশি। দোকানে তো আমরা স্বামী-স্ত্রী কাজ করি। আলাদা কর্মচারী নেই। অন্য খরচও
নেই। এজন্য তুলনামূলক দামও কম রাখতে পারি। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে কর্মচারী
রেখে দোকান চালাতে গেলে পোষাত না। আর জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের পোষাতেই হয়। কারণ
আমি যদি দাম বাড়াই তো আমার খাবার লোকে খাবে না। দামি সাজসজ্জার দোকানে অনেক দাম দিয়ে
মানুষ খায়। সেটা অনেকের শখ। খাবার ভালো হোক খারাপ হোক, মানুষ নামের ওপর খেতে পছন্দ
করে।
দোকানে কী কী খাবার থাকে?
আমার দোকানে রুটি-ডাল
নিয়মিত। এ ছাড়া খুদভাত করি। কখনও খিচুড়ি করি। সঙ্গে কচুশাক, কখনও শুঁটকি মাছের ভর্তা,
আলু ভর্তা থাকে। রুটির সঙ্গে মাঝে মাঝে সবজি করি। তবে সবজি সব সময় করি না। সব সসময়
ভালো সবজি পাই না। সবজি কিনতে গেলে অনেক দোকানি বলে, ‘এত বাছাবাছি করেন ক্যান? আপনি
চালান হোটেল, তাহলে এত বাছাবাছি কিসের?’ কিন্তু আমি যা খাই না, যা খাব না তা তো অন্যকে
খাওয়াতে পারি না। নিজের ভেতর দায় তো থাকতে হবে। এ দোকানের খাবার আমার ছেলেমেয়ে খায়,
আমরা নিজেরা খাই। তো আমি যেটা না খেতে পারব, তা অন্যকে খাওয়াব কী করে?
আপনার ছেলেমেয়ে কজন, তারা কী করেন?
আমার এক ছেলে,
দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ভালোই আছে। ছেলেও চাকরি করে। ওদের নিয়ে আমার কোনো চিন্তা
নেই। আমি নিজে পড়ালেখা করিনি। ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়েছি। ছাত্র ভালো হলেও ক্লাস টুতে
যে শিক্ষক ছিলেন, উনি ছাত্রদের খুব মারতেন। সেই মারের ভয়েই আর স্কুলে যাইনি। তবে ছেলেমেয়েরা
পড়ালেখা শিখেছে। ওদের সমস্যা নেই। ওরা চলতে পারবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার কিছু ঋণ
আছে। সেগুলো পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঢাকা ছাড়ার সুযোগ নেই। ঋণ শোধ হলে গ্রামে ফিরে যাব।
ওখানে জায়গাজমি আছে। খামার করব। নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পারব। একজীবনে আসলে তো খুব
বেশি কিছু লাগে না।