× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

চিনি নিয়ে ফের ‘চেনাজানা’ কারসাজি

সম্পাদক

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:২৩ পিএম

চিনি নিয়ে ফের ‘চেনাজানা’ কারসাজি

চিনি এক প্রকার সুমিষ্ট পদার্থ ও খাদ্য উপকরণ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কারসাজির হোতারা এই সুমিষ্ট পদার্থও বহুবার তেতো করে তুলেছেন অতি মুনাফার অভিপ্রায়ে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কতটা কঠিন করে তুলেছে, এর প্রায় নিত্য খবর মেলে সংবাদমাধ্যমে। ১২ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে ‘চিনির দাম বাড়াতে নতুন পাঁয়তারা’ শীর্ষক প্রতিবেদন এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ক কমানোর পরও বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না, উপরন্তু কেন ফের বাড়তে শুরু করেছে চিনির দামÑ তা বিস্ময়কর। সরকার যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তখন অসাধু মিলমালিক ও চিনি আমদানিকারকদের অপকৌশল সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

আমদানিকারকরা বরাবরের মতোই চিনির দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে নানা অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন। প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় বেশি দাম আদায়ের জন্য সিন্ডিকেট করে চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন মিলমালিকরা! প্রতি মাসে দেশে চিনির গড় চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৬৫ মেট্রিক টন। প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১১ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ছয় মাসের প্রতি মাসে গড়ে চিনি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসেবে চিনির মজুদ এবং সরবরাহে কোনো অস্বাভাবিকতা দৃশ্যমান হওয়ার কথা নয়। গত মাসে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও এই অঞ্চলে চিনির বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, ব্যবসায়ীদের কারও কারও এই বক্তব্য প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে নিকট অতীতে।

চিনির দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলেও আমদানিকারকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি, বন্দরে সময়মতো পণ্য খালাস না হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি দায়ী। কিন্তু চিনি আমদানিতে সরকার শুল্ক কমানোর পরও কেন এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান না হয়ে উল্টো বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা অকপটেই স্বীকার করছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা? কেন সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করা সত্ত্বেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো তা ভাঙতে পারছে না, এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়ও তাদের ওপরই বর্তায়। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা লিখেছিলাম, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোকে নবায়ন ও বহুমুখী করা। কেবল চিনি উৎপাদন করে মিলগুলো টিকিয়ে রাখা কতটা কঠিন বিদ্যমান বাস্তবতাই এর সাক্ষ্যবহ। আমরা নবায়ন ও বহুমুখীকরণের গুরুত্ব দিই এ কারণে, চিনিকলের উপজাত চিটাগুড় ও ঝোলাগুড় থেকে বিপুল পরিমাণ মিথাইল ও ইথাইল অ্যালকোহল আহরণ করা সম্ভব এবং এই অঞ্চলের দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কায় তা রপ্তানিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ওষুধশিল্পেও এর বিপুল ব্যবহার আছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিলগুলোর উৎপাদন বাড়ালে শুধু আমদানিনির্ভরতাই হ্রাস পাবে না, চিনিকলের ‍উপজাত রপ্তানি করেও অর্থনীতিতে বাড়তি জোগান দেওয়া সম্ভব।

চিনির দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ফের পুরোনো কথাগুলোই নতুন করে শুনতে হচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় কতটা আমল বা বিশ্বাসযোগ্য এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা জানি, আমদানিকারকরা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশে তা পরিশোধন করেন। সেক্ষেত্রে আমদানি মূল্য জানা গেলেও পরিশোধনের পর খরচ কত দাঁড়ায় তা তারা প্রকাশ করেন না। অনিয়ম-অব্যবস্থার কারণে দেশের চিনিকলগুলো পরিণত হয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। এর ফলে অনেক চিনিকলের ফটক বন্ধ হয়ে গেছে এবং আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। আমরা মনে করি, বৈশ্বিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি চিনিকলগুলো সংস্কার করে এক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করা উচিত। একই সঙ্গে আমদানিকারক ও আড়তদারদের অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। চিনিশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা যেমন জরুরি তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনার গলদ সরানোও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। নজর দিতে হবে উৎসে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা