× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

নারী-শিশু নির্যাতন রোধে যূথবদ্ধ হতে হবে

সম্পাদক

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৪ পিএম

নারী-শিশু নির্যাতন রোধে যূথবদ্ধ হতে হবে

যেকোনো সমাজের মানদণ্ড নির্ধারিত হয় কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সভ্যতার এই উৎকর্ষকালে নারীর অধিকার, নিরাপত্তা এবং তাদের জীবনের বিকাশের নানা আঙ্গিকের দৃশ্যমান রূপও নির্ধারণ করে দেয় যুগের দাবি অনুযায়ী সমাজ কতটা পরিপূর্ণতা পেল। এমন প্রেক্ষাপটে ২৬ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দাঁড় করায়, আমাদের সামাজিক অবস্থান কোন মানদণ্ডে নির্ণিত হবে। মহিলা পরিষদের তথ্য উদ্ধৃত্ত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ গত ১০ মাসে ২ হাজার ৫৭৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার ৪৩৩ জন, ধর্ষণের শিকার ৩৯৭, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১১৫ এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩১ জনকে। আরও বেদনাকাতর বিষয়, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করছে ১২ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৮৯ জনকে। অন্যদিকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রাণহানি হয়েছে ২৩১ জনের, আত্মহত্যা করেছে ২০৭ জন, অপহরণের শিকার হয়েছে ১২২ জন, যৌন নিপীড়নের শিকার ১৪২ জন ও নানামাত্রিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার ২১১ জন। ২৫ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে এগিয়ে আসুন, সহিংসতা প্রতিরোধে বিনিয়োগ করুন’Ñ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন বিরোধী পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয় মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইডের তরফে। উল্লেখিত পরিসংখ্যান কতটা মর্মস্পর্শী এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন বটে কিন্তু প্রশ্ন উত্থাপনের বিষয়টি সঙ্গত কারণেই সামনে থেকে যায়।

অনেকেরই হয়তো জানা আছে, উনবিংশ শতাব্দীতে কার্ল মার্ক্স লিডউইক কুগ্যালম্যানকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘ইতিহাস সম্পর্কে যার কোনো ধারণা আছে তিনিই জানেন নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া বড় কোনো সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়’। যুগের পর যুগ অতিক্রান্তেও এই সত্য প্রতিভাত হচ্ছে। গৃহস্থালী থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কর্মপরিসরের নানা ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক অঙ্গনে কিংবা অন্য প্রেক্ষাপটেও নারীর অংশগ্রহণ-ভূমিকা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ব্যাপক আশানুরূপ আকারে দৃশ্যমান হলেও এর বিপরীতে নারী-শিশু নিগ্রহের উঠে আসা চিত্র সভ্যতা-মানবতার সামনে চ্যালেঞ্জ দাঁড় করায় বৈকি। বাঙালি জাতির বাঁকপরিবর্তনের ঐতিহাসিক অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধপর্বে নারীর অবদান নানা আঙ্গিকে কতটা ব্যাপক ইতিহাসই এর সাক্ষ্যবহ। কিন্তু এত ইতিবাচকতার পরও নারী-শিশু নির্যাতনের কদর্যতা মনোজগতে কতটা গভীর রেখাপাত করে এরও সাক্ষ্য মিলে নানা মাধ্যমে। আমাদের সমাজে একটি কথা বহুল প্রচলিত, ঘটনার আড়ালেও ঘটনা থাকে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, মহিলা পরিষদের উপস্থাপিত তথ্যের বাইরেও আরও অনেক ঘটনা থাকতে পারে, যা সংবাদমাধ্যমে আসেনি। বিশ্বব্যাপী এ-ও দৃশ্যমান, নারীর ক্ষমতায়ন যে দেশে যত বেশি নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা সেই দেশে তত কম। আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে যতই ইতিবাচক কথা বলা হোক কার্যত প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তা কতটা কার্যকর এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। নারী-শিশু নির্যাতনের অনেক মামলার অগ্রগতি নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে এর বিপরীতে অনেক মামলাই হিমাগারে থাকা নিয়েও কথা আছে। এমন প্রেক্ষাপটে যতই আমরা বিকশিত সমাজ কিংবা নিরাপদ পারিপার্শ্বিকতার কথা বলি না কেন, এর বিপরীতে যদি নেতিবাচকতা জিইয়ে থাকে তাহলে বৈষম্যহীন নিরাপদ সমাজের প্রত্যাশা দুরাশা বৈ কিছু নয়। অনেকেরই অজানা নয়, নারী-শিশু নির্যাতনের অনেক ঘটনাই থানা পর্যন্ত গড়ায় না কিংবা অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হন না। এর পেছনের কারণ একাধিক। নিরাপত্তাজনিত বিষয় তো আছেই এর পাশাপাশি রয়েছে আর্থিক খরচের বিষয়টিও। আমরা জানি, এসব ক্ষেত্রে আইনি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের অনেক উদ্যোগ রয়েছে বটে কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও সত্য, ওই পর্যন্ত অনেকের যাওয়ার অবলম্বন নেই।

নারী-শিশুর প্রতি সংঘটিত সহিংসতা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশে একাধিক আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমরা জানি, আইনি প্রতিকার চাওয়ার জন্য সর্বাগ্রে দরকার ভীতিমুক্ত পরিবেশ। পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। নারী-শিশু নির্যাতনের বিদ্যমান ভয়াল চিত্র শুধু নারীর নিরাপত্তার জন্যই হুমকি ও চরম অবমাননাকর নয় শুভবোধসম্পন্ন পুরুষের জন্যও তা লজ্জার কারণ। আমরা এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সমাজের সব অংশের মানুষকে একাট্টা হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের জরুরি প্রয়োজনে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিতে হবে। প্রশাসনিক পর্যায়ে সদিচ্ছা এবং কঠোর নজরদারিও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। দূর হোক অন্ধকার, জাগ্রত হোক মানবিক চেতনা। আইনের শাসনের আলোয় সমাজ আলোকিত হোক। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা